রাজ্য

মন্ত্রীর দুর্নীতির দায় নিতে চাইছে না কোচবিহার জেলা তৃণমূল


জয়ন্ত সাহা,মেখলিগঞ্জ,চিন্তন নিউজ:-২০ শে মে
প্রায় দেড় দিন উধাও থাকার পর অবশেষে গতকাল সন্ধ্যায় আদালতের নির্দেশে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে সিবিআইয়ের দপ্তরে হাজিরা দিয়েছেন।প্রায় তিন ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআইয়ের আধিকারিকরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি।ফের ডাক পড়বে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর।

এদিকে কোচবিহার জেলায় এক সময়ে যারা মন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী ছিলেন হাইকোর্টের নির্দেশের পর তারাই এড়িয়ে চলতে চাইছেন মন্ত্রীকে।
মেখলিগঞ্জের ৩ নং ওয়ার্ডে তার বাড়ির সামনে এখন আর কেউ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন না।শুনশান বাড়িটা এখন একেবারে কোলাহল হীন।একেবারে শুনশান বাড়ির সামনের দিক।
ছায়াসঙ্গীরা কেউ বলছেন,ব্যক্তিগত বিষয়, আবার কেউ বলছেন, “মন্তব্য করবো না”।

এদিকে গোষ্ঠীকোন্দলে জর্জরিত জেলা তৃনমুলের পরেশ বিরোধী গোষ্ঠী সিবিআই হাজিরার খবরে” উচ্ছ্বাসিত”।দলের এক ব্লক সভাপতি তো বলেই দিলেন,”নাম লিখবেন না,তবে দলকে যারা বিপাকে ফেলে তাঁদের দল শাস্তি দিক এটাই চাই।এমনিতেই উনি ২০১৮ তে দলে এসে পুরোনোদের পাত্তা না দিয়ে নিজের পছন্দের লোকজন নিয়ে দল সাজিয়েছিলেন।
দলের মেখলিগঞ্জ টাউন সভাপতি বিষ্ণু ঘোষের সাবধানী মন্তব্য “বিচারাধীন মামলা নিয়ে কিছু বলব না”। মন্তব্য করতে রাজি নন দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা অমিতাভ বর্ধন চৌধূরীও।
পরেশ নিয়ে স্পিকটি নট মেখলিগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক অর্ঘরায় প্রধানও। তার সংক্ষিপ্ত জবাব” দলের বিষয়ে আমি মন্তব্য করি না। পদে যারা আছেন তারাই বলবেন। আসলে তদন্তের নির্দেশ আসার পরেই জেলা তৃনমুলের সভাপতি ছাড়া বড় অংশই পরেশ থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে সেটা গত ৪৮ ঘন্টাতেই স্পষ্ট।

জেলায় তৃনমুলের একাধিক শিবির।খোদ দলের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্র নাথ বর্মন বলেন,আইন আইনের পথে চলবে।আইনের প্রতি আমাদের আস্থা আছে।আর বাকি বিষয়ে যা বলার রাজ্য বলবে। দলের জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায়ের অবশ্য বক্তব্য অভিযোগ উঠলেই তো আর তা সত্য হয় না।আমরা পরেশ অধিকারীর সঙ্গে আছি।

দলীয় সূত্রে জেলা নেতারা যখন জানতে পেরেছেন পরেশ অধিকারীর আইনজিবী নিয়োগে দল কোন ব্যবস্থা নেয় নি।মন্ত্রী নিজেই আইনজিবী ঠিক করে ডিভিশন বেঞ্চে গেছেন তারপর থেকেই মন্ত্রী ও তার পরিবারের থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন গত আড়াই বছরের ঘনিষ্টরা।
এদিকে জেলার একমাত্র মন্ত্রী যখন সিবিআই থেকে রেহাই পাচ্ছেন না এটা স্পষ্ট হতেই জেলার একাধিক শাসক দলের নেতা “জুজু” র ভয় পাচ্ছেন।আগামী দিনে অনেকের অবস্থা একই হবে।এর আগে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআইয়ের জালে জড়িয়েছেন জেলার বেশ কয়েকজন নেতা কর্মী।তারা এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন।শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে জেলা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েও অনেক যুবক চাকরি পায় নি।সিবিআই কিংবা আদালত এবার যদি সেই তালিকা নিয়ে টানাটানি করে তবে অনেকেরই ঠিকানা হবে শ্রীঘর।

এদিকে মন্ত্রী কন্যাকে নিয়ে তার স্কুলেও শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালের ২৪ শে নভেন্বর শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিল অঙ্কিতা।স্কুলের প্রাক্তনী থেকে অভিভাবক প্রত্যেকেই চাইছেন এই ঘটনার পর ওই শিক্ষিকা আর স্কুলে না আসুক। দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী পূজা রায় বলছেন,টিভিতে সব দেখেশুনে খারাপ লাগছে।ম্যাডাম আর স্কুলে না এলেই ভালো করবেন।আরেক ছাত্রী মিমি খাতুন ও বলছে,এমন শিক্ষিকার কাছে কি শিখবো?আমি চাই ম্যাডাম দোষী হলে নিজেই স্কুলে আসা বাদ দিক।শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা চাইছে স্কুল পড়ুয়ারাও।একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী রেজিনা খাতুন বলেন,টিভিতে আমাদের স্কুলের শিক্ষিকার খবর শুনে খারাপ লাগছে।চাকরিতে নিয়োগ স্বচ্ছ হওয়া উচিত।আমরাও তো একদিন এসএসসি দিকে দেব।এসব নোংরামি বন্ধ হওয়া দরকার।স্কুলের প্রাক্তনী অনুপমা রায়,ব্রততী পাটোয়ারিরাও চাইছেন না ওই শিক্ষিকা আর স্কুলে আসুক।স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রঞ্জনা রায় বসুনিয়া বলেন,আমি স্কুল থেকে কোন শিক্ষিকাকে সরিয়ে দিতে পারি না।তবে অভিভাবকরা যদি আমায় লিখিত বক্তব্য জানায় তবে ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষা দপ্তরের উচ্চ আধিকারিকদের বিষয়টি জানাবো।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।