কাকলি চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ: ৩০শে এপ্রিল:- আজকের ভূমিষ্ঠ শিশু এক অচেনা, মৃত্যুপুরীর আঙিনায়, অস্বাভাবিক পৃথিবীতে মুক্তিসেনার ভূমিকায়। ধরায় সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলগুলো প্রহর গুনছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত অনাগত ভবিষ্যতের। কোভিড১৯ এর মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা যখন ব্যস্ত প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারের এই দেশের শিশুরা তখন বঞ্চিত নিয়মিত জীবনদায়ী ভ্যাকসিন থেকে।
গ্ৰামীণ এলাকায় বন্ধ আই সি ডি এস, সেন্টারগুলো, হাসপাতাল বন্ধ রেখেছে ভ্যাকসিনেশন সেন্টার। আশাকর্মী ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত করোনা সংক্রান্ত কাজে। পোলিও, হাম, ডিপথেরিয়ার মত রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া প্রায় বন্ধ। এমনিতেই ইউনিসেফের কথামত ১ বছরের নীচে প্রায় ২ কোটি শিশু কোনো ভ্যাকসিন পায় না। এখন তো আরও অনেক বেশি শিশু জীবনদায়ী ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যার ফল ভবিষ্যতে মারাত্মক হতে বাধ্য। হু বারংবার পোলিও টিকাকরণ বন্ধ রাখার ফলে অসংখ্য শিশুদের প্রাণহানির আশংকা ব্যক্ত করেছে।
ভারতে শিশুমৃত্যুর বর্তমান হার প্রতি হাজারে তেত্রিশ। কিন্তু ভ্যাকসিনেশন স্থগিত হয়ে গেলে তা বাড়বেই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে রাজ্যে দুবার নির্দেশিকা পাঠানো হলেও বেহাল পরিষেবার কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি। সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র গুলোতেও চালু হয়নি টিকাকরণ। পোলিও, ম্যালেরিয়ার মত যে রোগগুলোকে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছিল ধারাবাহিকতার অভাবে সেগুলো ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকে যায়।
বিশ্বে পাঁচ বছরের নীচে যত শিশুমৃত্যু হয় তার মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন ভারতীয়। গোটা পৃথিবীকে হুমকি দিয়ে, ধর্মীয় মোড়কে অথবা প্রতিদিন একপেট খিদে নিয়ে কিংবা দিদির ভাইদের দিয়ে করোনা মোকাবিলা সম্ভব নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ‘হু’ এর প্রধান জানিয়েছেন এই মহামারীর অবসান এখন অনেক দূর। কোনো দেশে সংক্রমণ কমে গেলেও আবার তা বেড়ে যাতে না যায় সেজন্য সতর্কতা প্রয়োজন। কিন্তু যে শিশুরা সতর্কতামূলক প্রতিষেধক থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বভাবতই তার কমে গেল শুরুতেই। সেক্ষেত্রে করোনা বা অন্যান্য সংক্রমণের ভয় তাদের জন্য আরও বেশি। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক এই শিশুদের ভবিষ্যত স্বাস্থ্য ও স্বার্থের কথা বিবেচনা করে। আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে হবে দ্রুততার সঙ্গে।