কলমের খোঁচা

অতুলপ্রসাদ সেন এর জন্মদিনে


কৃষ্ণা সাবুই: চিন্তন নিউজ:২০/১০/২০২২:–
বাংলা গানের অন‍্যতম দিকপাল একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার অতুল প্রসাদ সেনের জন্মদিনে চিন্তনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। ১৮৭১সালের ২০শে অক্টোবর ঢাকায় মাতুলালয়ে অতুল প্রসাদ সেনের জন্ম হয়। বাবা ছিলেন রাম প্রসাদ সেন,মা হেমন্তশশী দেবী। তাঁর গানের হাতে খড়ি হয় মাতামহ কালীনারায়ন গুপ্তের কাছে। তিনি বিভিন্ন বাদ‍্য যন্ত্র ব‍্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের ভক্তিগীতিতে আগ্রহী করে তোলেন।
অন‍্যদিকে বাবা রামপ্রসাদ সেন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন‍্য।

ছোটবেলা থেকেই অতুল প্রসাদ ব্রাহ্মপরিবেশে বড় হোয়ে ওঠেন।পিতামহ ব্রাহ্মসমাজের সদস‍্য ছিলেন। দাদুর কাছ থেকেই জাত পাত ধর্মান্ধতার সংস্কার ভাঙার শিক্ষা পেয়েছিলেন।
বাবার মৃত‍্যুর পর মামাবাড়ী থেকেই ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পাশ করে কোলকাতায় প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। এরপর বিদেশে চলে যান আইন পড়তে। এই সময়ে তিনি চিত্তরঞ্জন দাস,সরোজিনী নাইডু,অরবিন্দ ঘোষ,দিজেন্দ্রলাল রায়ের মত ব‍্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হন। উল্লেখযোগ্য হোলো এই সময় পাশ্চাত‍্যসংগীত,নাটক, অর্কেষ্টা তাঁকে আকর্ষন করে,ফলশ্রুতিতে তাঁর গানের ভীত আরো দৃঢ় হয়।

ব‍্যারিষ্টারি পাশ করেন, কিন্তু জীবনের মোড় ঘুরে যায় অন‍্য স্রোতে। তাঁর মামা থাকতেন প্রবাসে । তাঁর কন‍্যা ছিলেন হেমকুসুম দেবী।
অতুলপ্রসাদ সেন নিজ মামাতো বোনকে বিয়ে করেন পরিবারের সমস্ত সদস‍্যদের আপত্তিতে।
তাঁর সত‍্যিকার কর্মজীবন শুরু হয় লক্ষ্ণৌ শহরে ওকালতি পেশায়। ওকালতির সঙ্গে সঙ্গে চলে উর্দু শিক্ষা। টপ্পা ঠুমরী গজলের চর্চা।প্রথম বাংলা গজল তিনিই লিখেছিলেন।
লক্ষ্ণৌ বার এ‍্যাশোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন। পেশাগত দিক থেকে তিনিই প্রথম আয়ুধ বার এ‍্যাশোসিয়েশনের প্রথম ভারতীয় সভাপতি।
আইন পেশা হলেও সংগীত রচনায় কোন ঘাটতি হয়নি।

পরাধীন দেশে সমাজ সেবা ও রাজনীতিতেও তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।
বহু সমাজ সেবা মুলক কাজ করেছেন।
তাঁর বর্নময় সঙ্গীত জীবন বলতে গেলে প্রথমেই আসে দেশাত্মবোধক গান। তিনি ইংল‍্যান্ডে যাওয়ার সময় জাহাজে একটি বিদেশী সুর শুনে রচনা করলেন বিখ‍্যাত গান
“ওঠো গো ভারত লক্ষী”। বাংলা ভাষার প্রতি যে টান ছিলো সেই টান আমরা বহু গানে পাই_
যখন রবীন্দ্রনাথ নোবেল পান, সেই আনন্দে মাতৃভাষাকে সম্মান জানিয়ে লিখেছিলেন,
“বাজিয়ে রবি তোমার বীণে
আনলো মালা জগত জীনে”।
মোদের গরব মোদের আশা,
আমরি বাংলা ভাষা গান টি
বাংলা দেশের মুক্তি যুদ্ধে বিশেষ অনুপ্রেরনা জুগিয়েছিলো। তাঁর গানের মধ্যে তাঁর জীবনের ব‍্যথা বেদনার রেশ লক্ষ্য করা যায়।
তাঁর কিছু কিছু গান আমাদের মন কেও ভারাক্রান্ত করে। স্বল্পপরিসরে অন্তত দুটি গানের উল্লেখ করতেই হয়,
“নিদ নাহি আঁখিপাতে” এবং
“একা মোর গানের তরী” গান দুটি
অসাধারন জনপ্রিয় এবং মানুষের অন্তর কে নাড়া দিয়ে যায়।
প্রায় দুশো গান তাঁর অমর লেখনীর ফসল।
আজো বাঙালীর হৃদয়ে তিনি চিরস্মরনীয় হোয়ে আছেন।

.


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।