কলমের খোঁচা

জনমনে বিজ্ঞান মনষ্কতা প্রসারে অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব অক্ষয়কুমার দত্ত।


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:১৫ই জুলাই:- তখন ভারতে ব্রিটিশ শাসন। সেই শাসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব।অক্ষয়কুমারের কলমে, ” এরূপ ( অট্টালিকা, যোগাযোগ, জনপদ,ব্যবসা,শিক্ষা ইত্যাদি) বহুপ্রকার বাহ্যশোভা ও বাহাড়ম্বরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে আপাতত অনেকের মনে হইতে পারে যে অধুনা বঙ্গ ভূমি বিশেষ সৌভাগ্যশালিনী হইয়াছে কিন্তু যদি তথ্যঅনুসন্ধানে তৎপর হইয়া সূক্ষদৃষ্টিতে এই বঙ্গভূমির প্রতি দৃ‌ষ্টিপাত করিবেন , তিনি দেখিবেন যে অধুনা বঙ্গভূমিতে যেমন বাহ্যশোভায় শোভিত দেখাইতেছে ,সেইরূপ অন্যান্য সহস্রপ্রকার আন্তরিক দুঃখে উহার কলেবর ক্লিস্ট হইয়াছে।…

আজও এই উক্তি কতখানি প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে এই অতিমারীতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশা যেন তারই সাক্ষ্য দেয়। ব্রিটিশ শাসক আর স্বাধীন শাসকের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।।

১৮২০ সালের আজকের দিনে চুপী গ্রামে মায়ের কোল আলো করে যে সন্তানটি আসে, ভবিষ্যতে সেই আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়ে বঙ্গদেশের জনমনে। অক্ষয়কুমার দত্তের প্রথাগত শিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত, তাও সম্পূর্ণ নয়, প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা বিপুল। মধ্যযুগীয় বিজ্ঞান ও আধুনিক বিশ্ববিজ্ঞানের সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে ফ্রান্সিস বেকন তাঁর প্রবর্তিত পদ্ধতির সাহায্যে এক নতুন যুগের সন্ধান করেছিলেন। এই পদ্ধতি ছিলো পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আরোহ পদ্ধতিতে সত্যে উপনীত হওয়ার পদ্ধতি। অক্ষয় কুমার দত্ত এই বেকনীয় দর্শনের প্রজ্জ্বলিত মশাল নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলায় বিজ্ঞান সংস্কৃতি নির্মাণের প্রথম পুরুষ।

কলকাতার হিন্দু হোস্টেলের কিছু ছাত্র একবার তাঁকে প্রশ্ন করে – প্রার্থনা করে কী হয়? অক্ষয় কুমার দত্ত তাদের পাল্টা পরিশ্রম করে – কৃষক পরিশ্রম করে কী পায়? তারা সমস্বরে বলে ওঠে – শস্য। এবার তিনি ছাত্রদের প্রশ্ন করেন কৃষক প্রার্থনা করে কী পাবে ? ছাত্ররা বলে- শস্য ।তখন তিনি ছাত্রদের বলেন ,তবে প্রার্থনার ফল শূণ্য। এইভাবে আর্কষণীয় করে তিনি ছাত্রদের মননে যুক্তিবোধের বীজ রোপন করেন।

তিনি জনমনে বিজ্ঞানমনষ্কতা গড়ে তোলার জন্য লেখনী ধারণ করেন। সেই সময় বহুল প্রচলিত সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় তাঁর ক্ষুরধার লেখনী প্রকাশিত হতো। তত্ববোধিনী পত্রিকার সাথে বহুদিন যুক্ত ছিলেন কিন্তু পুরাতনপন্থীদের যুক্তিহীনতা ও অবৈজ্ঞানিক চিন্তার সাথে নিজেকে মেলাতে না পেরে বেড়িয়ে আসেন।কিন্তু থেমে থাকেন নি ।তিনি বিভিন্ন পুস্তিকায় তাঁর ভাবনা লিপিবদ্ধ করেন ।

সমাজের নানাবিধ কুসংস্কার নিয়েও তিনি গর্জে উঠতেন।বিধবাবিবাহ নিয়ে তাঁর অকাট্য যুক্তি ছেলেরা স্ত্রী মারা গেলে বিবাহ করলে, মেয়েরা নয় কেন? পল্লীগ্রামস্থ প্রজাদের দূরাবস্থা তাঁর অমর সৃ‌ষ্টি। এইরকম একজন মানুষকে বাঙালি প্রায় ভুলতে বসেছে।কালের নিয়মে তিনি গত হন।

অক্ষয় কুমার দত্ত জীবনের শেষ পর্বে হাওড়ার বালিতে এক বিঘের মতো জমি কিনে ” শোভানোদ্যান” নাম দিয়ে যথার্থই শোভাবদ্ধনকারী একটি বাড়ি তৈরী করেছিলেন। কিন্তু সেই বাড়িটি আজ ভগ্নদশা।ইতিহাসের নির্মাণ পরিণতি! যদি সেই বাড়িটি পুনরায় শোভাবদ্ধনে ও তাঁর চিন্তায় নিজেদের লালিত করতে পারে, তবে তাঁর জন্মদিন পালনের সার্থকতা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।