দেশ

স্বাধীনতার এত বছর পরও নির্লজ্জ বিদেশ তোষণ নীতির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে দেশের পাঁচটি স্থান


বিশেষ প্রতিবেদন- মল্লিকা গাঙ্গুলী : চিন্তন নিউজ: ৩রা আগস্ট:- গল্প নয় বাস্তব। ভাবতে অবাক লাগে সুদীর্ঘ মরণপণ সংগ্রাম করে যে স্বাধীনতা ভারত অর্জন করেছে তা কি প্রকৃত স্বাধীনতা? যে কোনো স্বাধীন দেশের নাগরিক নিজের দেশের সরকারের বিধি নিষেধ মেনে দেশের সর্বত্র চলাফেরা করার অধিকারী। এই অধিকার ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃত, অথচ স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর আজও ভারত ভূখণ্ডের পাঁচটি বিশেষ জায়গায় ভারতীয়দেরই প্রবেশ নিষেধ। ব্রিটিশ আমলে ভারতীয়দের নেটিভ বর্বর বলে গণ্য করা হতো, তাই ইংরেজের বিভিন্ন দপ্তরে লেখা থাকত- কুকুর এবং ভারতীয়ের প্রবেশ নিষেধ- ইংরেজ ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে কিন্তু দেশের এই জায়গাগুলি এখনও সেই কালো ইতিহাস বহন করে চলেছে।

ভারতের এই কলঙ্কিত জায়গাগুলি হলো- ১।বেঙ্গালুরুর উনো -ইন হোটেল। ২। হিমাচল প্রদেশের ফ্রি কাসোল ক্যাফে। ৩। চেন্নাই এর রেড ললিপপ হস্টেল ৪। গোয়ার আঞ্জুমা বিচ এবং ৫। পুদুচেরীর ফরেনার্স ওনলি বিচ। বিশ্বের সমস্ত দেশ কোনো একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী। কোনো দেশ বরফে ঢাকা তো কোথাও সমুদ্র সৈকত বা বিস্তীর্ণ বনভূমি, ভারতই একমাত্র দেশ যার আসমুদ্রহিমাচল বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। উত্তরে হিমালয়ের গম্ভীর রূপ তো দক্ষিনে সমুদ্র মেখলা, পূর্বে বনভূমির জীববৈচিত্র্য আবার পশ্চিমে আদিগন্ত মরুভূমি। এই বিচিত্র প্রকৃতির টানে সুদূর অতীত থেকে আজও এদেশে অগণিত বিদেশি পর্যটকদের ভীড়। হিউ- এন- সাঙ,ভাস্কো-ডা -গামা থেকে জব চার্নক রুপ রসে পরিপূর্ণ ভারতবর্ষের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই এদেশে আসেন। আজও ছুটে আসেন অসংখ্য বিদেশি পর্যটক, ঘুরে বেড়ান পাহাড়ে, জঙ্গলে, সমুদ্র তটে, মরু বালুকায়। অথচ দুঃখের বিষয় যত অভিজাত ই হোন না কেন, দেশের এই পাঁচটি স্থানে আজও ভারতীয় রা ব্রাত্য।

অদ্ভুত লাগে বেঙ্গালুরুর উনো ইন নামক হোটেলটি কিন্তু ইংরেজ আমলের নয়। এর বয়স মাত্র আট বছর। জাপানের নিপ্পন ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি শুধু মাত্র জাপানি কর্পোরেটদের জন্য এই অতি আধুনিক রুফ টপ রেস্তোরাটি নির্মান করে। অবশ্যই তাতে সম্মতি দিয়েছে ভারত সরকার। কিন্তু এখানে কোনো ভারতীয় প্রবেশ করতে পারে না। এটা অন্তত বাঙ্গালোর বাসীর মানে লাগে তাই সারা শহর জুড়ে তাদের প্রবল প্রতিবাদে বাধ্য হয়ে গ্রেটার বেঙ্গালুরু সিটি কর্পোরেশন ২০১৪ সালে হোটেল টি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বলা বাহুল্য সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। তেমনই চেন্নাই শহরের মাঝে অবস্থিত রেড ললিপপ হস্টেল। যেখানে কোনো ভারতীয় ঢুকতে পারে না। এমন কি তাদের ওয়েবসাইটে ও লেখা আছে- শুধুমাত্র ভারতে আসা বিদেশি পর্যটকদের জন্য- এ নিয়ে সমালোচনা ও কম হয়নি পরিস্থিতি তবু বদলায়নি। বর্তমানে কেবলমাত্র কোনো ভারতীয়ের বিদেশি পাসপোর্ট থাকলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়।
হিমাচলপ্রদেশ ভারতের দেবভূমি, ভূস্বর্গ। কুলু মানালি থেকে কিছুটা ভিতরে পাহাড়ের কোলে ছোট্ট অপূর্ব সুন্দরী গ্রাম কাসোল। প্রকৃতি প্রেমী মানুষের খুব প্রিয় জায়গা এই কাসোলের একটি কাফে, নাম ফ্রি কাসোল ক্যাফে। এক ইজরায়েলি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে গড়ে ওঠা এই ক্যাফের কফির কাপে চুমুক দেওয়ার অধিকার নেই কোনো ভারতবাসীর। বিদেশি পাসপোর্ট আর গায়ের রং এই ইজরায়েলি ক্যাফের প্রবেশ পত্র। মনোরঞ্জন আর দৈনন্দিন ক্লান্তি নিরসনে সারা বছর মানুষ সমুদ্র স্নানে যায়। সমুদ্রের কথা ভাবলেই গোয়ার অসংখ্য সী বিচ হাতছানি দেয় । গোয়ার বিভিন্ন সৈকতে সূর্য স্নানের আনন্দ নিতে পারলেও গোয়ার আঞ্জুম বিচ টি কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে বিদেশিদের জন্য সংরক্ষিত। আবার সমুদ্র প্রেমী মানুষ শান্ত নিরিবিলি সমুদ্রের অতল গম্ভীর রূপ দর্শনের জন্য ছুটে যায় পুদুচেরীর নীল সাগরের জলধী তীরে। এই পুদুচেরী সৈকতের মাঝে মাঝেই গন্ডি টানা, যেখানে লেখা থাকে “ফরেনার্স ওনলি বিচ”। এমনকি ঐ বিচের রেস্তরাঁতেও ভারতীয়দের বসা বা খাওয়ার অধিকার নেই।

বিদেশীদের বিনোদনের জন্য আরও অনেক স্থান হয়তো সংরক্ষিত থাকতে পারে তবে উল্লিখিত এই পাঁচটি স্থানে ভারতীয়রা নিজদেশে পরাধীন। স্বাধীনতার এত বছর পর ও দেশের নাগরিকদের এহেন হেনস্থা কেন?এর পিছনে কি বিদেশ তোষণনীতি অথবা ব্যবসায়িক মুনাফার কোনো গূঢ় উদ্দেশ্য আছে? যদিও যুক্তি হিসেবে বলা হয় প্রতি ক্ষেত্রেই নাকি ভারতীয় পর্যটক দের অভব্য আচরণ এবং বিদেশিদের প্রতি অশালীন ব্যবহারের কারণে বিদেশিদের সুরক্ষার জন্য এই বিভেদ মূলক বন্দোবস্ত। কিন্তু প্রশ্ন হলো ভারতের প্রশাসন কি তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ? পৃথিবীর সমস্ত দেশেই বিদেশি দের পরিযায়ী হিসেবে নিজের দেশের নাগরিকদের সমান চোখে দেখা হয় না, নানান বিধি নিষেধের ঘেরাটোপে থাকতে বাধ্য করা হয় সেখানে ভারতে আজও বিদেশিদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের চোখে ভারতীয়দের ছোট করা হয়।

৭৩ বছর পরও ভারতীয়দের কাছে এই অসম্মান গা সওয়া হয়ে যাওয়া কি ভারতবাসীর দুর্বল মেরুদণ্ডের প্রকাশ অথবা ভারতীয়দের চরম সহনশীলতা! স্বাধীন দেশে কত সরকার বদল হলো অথচ এই হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হলো না! সমগ্র দেশবাসীর এই অধিকার হীনতা বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত। আওয়াজ উঠুক, উপযুক্ত সুরক্ষা বিধি নির্ণয় করে নিজের দেশের সর্বত্র নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।