শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

করোনা কথা



শ্যামল চ্যাটার্জী:চিন্তন নিউজ:১১ই এপ্রিল:-করোনা ভাইরাস (কোভিড১৯)-এর দৌলতে Panemic, Epidemic আর Endemic এই তিনটে শব্দের সাথে আমরা কম বেশি পরিচিতি হয়ে গেছি। এই কোভিড-১৯ -এর দাপটে আজ আমরা প্রায় সকল পৃথিবীবাসি গৃহবন্দী। করোনাকে রুখতে গেলে এখন একটাই রাস্তা “ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন”। আর আমরা তা মেনে চলেছি। তার একটাই কারণ এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি। তবুও সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে দেখা যাচ্ছে এই ভাইরাস যতটা সংক্রমণ ছড়াতে পারে ততটা মারণ ক্ষমতা নেই। ১৬ জন বিশেষ বৈজ্ঞানিক দ্বারা গঠিত UK এর ‘New & Emerging Respiratory Virus Threat Advisory Group’ নামক এ্যাডভাইজারী বোর্ড গত 19.03.2020 তারিখে জানিয়েছে যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ কোনও High consequence infectious diseases (HCID) ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে না।

পৃথিবীতে প্রতিবছর সংক্রমণের ফলে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যায়। অর্থাৎ প্রতি মাসে প্রায় ১৪ লক্ষ ১৬ হাজারের কিছু বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। টিবি একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রামক ব্যাধি যার কারণে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ মারা যান যার মধ্যে শুধু ভারতেই ৫ লক্ষ মানুষ মারা যান। হেপাটাইটিস একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ যার কারণে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন। অর্থাৎ এই ব্যাধিগুলি বর্তমান করোনা ভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর ৭ লক্ষ মানুষ মারা যান যার মধ্যে শুধু আমেরিকাতে প্রায় ৬০ হাজার, ইতালিতে প্রায় ২৫ হাজার এবং ভারতবর্ষে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ মারা যান। এই লেখা যখন লিখছি (১০ এপ্রিল,২০ / শুক্রবার / ১১.৪৫ ঘন্টা) তখন সারা পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৭৩৪ জন। মারা গেছেন ৯৫ হাজার। আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬,৮৩৪। মারা গেছেন ১০৯ জন। আমাদের রাজ্যে আক্রান্ত ১০৬ জন

এর সত্যতা যাচাই করার জন্য আমরা যদি বৈদ্যুদিন সংবাদ চ্যানেলের দিকে নজর রাখি তাহলেই দেখতে পাবো। আক্রান্তের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা আর কতজন সুস্থ হয়ে উঠছেন। কোন ওষুধ না থাকা সত্ত্বেও ৯৭-৯৮% মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এইখানে অর্থাৎ এই আক্রান্ত সংখ্যায় ফাঁক আছে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত বহু মানুষের মধ্যে যাদের অবস্থা খুবই জটিল তাদেরই আর টি – পি সি আর (Reverse Transcription Polymerase Chain Reaction) টেস্ট করা হচ্ছে এবং সংক্রমিত রোগীর তালিকায় রেখে গণনা করে জানানো হচ্ছে। অর্থাৎ যত সংখক সংক্রমিত বলা হচ্ছে বাস্তবে তার বহুগুণ বেশি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। যারা আমাদের চার পাশে আছে বা আমি কিংবা আপনি। শুধু আমাদের দেশ নয় পৃথিবীর কোথাও (একমাত্র ঊহান ছাড়া) র‍্যাপিড টেস্ট হয়নি। এই র‍্যাপিড টেস্ট না হওয়ার জন্যই ভাইরাস বাহকদের আলদা করতে পারছি না। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে। আমাদের মানে মানুষের মধ্যেও আছে। আমাদের চারিপাশে প্রতিনিয়ত নানা ধরণের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমিত করার চেষ্টা করে চলেছে আর আমাদের শরী্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা, যাকে আমরা বলি ইমিউনিটি পাওয়ার, প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রতিরোধ যাচ্ছে জন্ম থেকেই।
সুতরাং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার উপায় গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সেগুলি হলো :
1) পজিটিভ ও প্রোডাক্টিভ চিন্তাভাবনা ও কর্ম করা।
2) শরীরকে সক্রিয় রাখতে কর্মে নিযুক্ত থাকা ও ব্যায়াম করা।
3) নিয়মিত ভিটামিন সি, জিঙ্ক ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সম্মৃদ্ধ খাবার খাওয়া। প্রয়োজনে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ‘আতঙ্কিত হবেন না, ঘরে থাকুন’ – এই শ্লোগানটা আতঙ্কিত করার পক্ষে যথেষ্ট। যা মানসিকভাবে মানুষকে দূর্বল করে দেয়। প্রথমত লক ডাউনের ফলে শারিরীক কোন পরিশ্রম হচ্ছে না। যেকোন রোগ প্রতিরোধে মানসিক জোর একটা বিরাট ব্যাপার। আর যদি মানসিকভাবে দূর্বল হলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে যে কোন ভাইরাস দ্বারা রোগগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা বাড়ছে। কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি সোয়াইন ফ্লুতেও আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। সেটা মাঝে মাঝে বলা হলেও হলেও এখন হচ্ছে না বা চেপে যাওয়া হচ্ছে। —-ক্রমশ


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।