কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:১৪ই জুলাই:- কোভিড আক্রান্ত বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৮.৯% এ পৌঁছে গেল। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৬৯০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত। সমগ্ৰ বিশ্ব করোনা আক্রান্তের পাশাপাশি ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার শিকার। আগামী দিনে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে এমনই সম্ভাবনা প্রবল।
সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মূহুর্তে বিশ্বের প্রতি নয়জন মানুষের একজন ক্ষুধার্ত এবং এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই বিশ্বাস। ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা এবং অস্বাভাবিক জলবায়ুর পরিবর্তনে এক সংকটের মুখোমুখি তামাম দুনিয়া। মহামারী মোকাবিলায় যেখানে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী সেখানে ক্ষুধা নিবারণের প্রয়োজনীয় খাবারও দিন দিন অপ্রতুল হয়ে পড়ছে এক বৃহৎ অংশের মানুষের কাছে। জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে অথচ টাকার যোগান কম, ক্রয়ক্ষমতা সঙ্কুচিত হচ্ছে। শিশুদের বয়ঃসন্ধিজনিত পুষ্টিকর খাবারের অভাব তাদের ভবিষ্যতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ওয়ার্ল্ডের বার্ষিক প্রতিবেদনে দ্য স্টেট অফ ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ সাল থেকে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। পর্যাপ্ত খাদ্য কেবলমাত্র নয়, খাদ্য অবশ্যই পুষ্টিকর হওয়া জরুরী। তা না হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রুগ্ন হয়ে পড়বে যার পরিণতি সমাজের অপরাপর অংশকে প্রভাবিত করবে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে গতবছর বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় এক কোটি। এই বছর মহামারীর কারণে তা আরও ১৩০ মিলিয়ন মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধার কবলে ঠেলে দিতে পারে। বিগত পাঁচ বছরে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৬০ মিলিয়ন। ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা নিরসন কখনোই সম্ভব হবে না যদি এই প্রবণতা বজায় থাকে। তখন বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৮৯০ মিলিয়নে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা।
জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থা এই প্রতিবেদন রচনায় সাহায্য করেছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা(এফএও), কৃষি উন্নয়নের আন্তর্জাতিক তহবিল (আইএফএডি), শিশু তহবিল(ইউনিসেফ),বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি(ডব্লিউ এফপি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু)। গত বছর প্রতিবেদনে ৮২০ মিলিয়ন ক্ষুধার্তের অনুমান করা হয়েছিল যদিও পরে তা সংশোধিত হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে এশিয়ায় পুষ্টিহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক, আনুমানিক ৩৮১ মিলিয়ন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা জানিয়েছেন আফ্রিকার জনসংখ্যার ২০% অপুষ্টির শিকার। এশিয়ার ৮.৩%, লাতিন আমেরিকার দেশগুলো ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অধিবাসীদের ৭.৪% অপুষ্টির কবলে। ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই তো আগে থেকেই চলছিল কিন্তু প্রতিবেদনের লেখকরা জানান,” কোভিড১৯ বিশ্বের খাদ্যব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অপ্রতুলতাগুলোকে তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলছে।” মহামারীর মোকাবিলায় লকডাউনে কর্মচ্যুত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি, কাজের পরিসর ক্রমশ সঙ্কুচিত হওয়া, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, বিদেশে কর্মরতদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি অক্ষমতা বা অপদার্থতা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এই অবস্থায় আর্থিকভাবে দুর্বল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কোনোভাবেই উপযুক্ত পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবে না। এর ওপর উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে, ভারসাম্য থাকবে না চাহিদা ও যোগানের মধ্যে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত সংস্থা অক্সফাম জাতিসংঘের এই রিপোর্টকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে অক্সফাম সরকারদের আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা জাতিসংঘের কোভিড১৯ তহবিলে আপিল করে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর ঋণ বাতিল করার জন্য। তাহলে দেশগুলো নিজ নিজ সম্পদ কাজে লাগিয়ে মহামারীর সঙ্গে যুক্ত ক্ষুধার লড়াইয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হবে।