নিউজ ডেস্ক:চিন্তন নিউজ:৭ ই জুন:–৭৯ বছর বয়সে আক্ষরিক অর্থে ‘হেঁটে’ বিশ্ব জয় করলেন পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার এক অজ-পাঁড়াগায়ের স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা অণিমা তালুকদার।
ঊনআশি বছর বয়সী এই প্রবীণ মহিলার মন ও শরীরে যৌবনের তেজ, তারুণ্যে ভরপুর। আর এই দু’য়ে ভর করে বাংলার গ্রামের মেঠো পথ থেকে বিশ্ব জয়ের মঞ্চে বাঙালি প্রবীণ।
প্রসঙ্গত ৫ই জুন,২০২২, রবিবার সিঙ্গাপুরে বয়স্কদের হন্টন প্রতিযোগিতায় সাত দেশের ৯ প্রতিযোগীকে হারিয়ে প্রথম হয়েছেন অণিমাদেবী। বয়স্কদের ২০০ মিটার দৌড়ে তিনিই প্রথম থেকে প্রথমে। আগের দু’দিন ধরে (৪-৫ জুন) ১২৬৩টি ইভেন্টে ৬২৮ জন প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিলেন। সারা দেশজুড়ে ৪৩ জন অ্যাথলিট ছিলেন সিঙ্গাপুরের মঞ্চে। পশ্চিমবঙ্গে থেকে অণিমাদেবী ছাড়াও থথ্য জাম্পে সোনা জিতেছেন চল্লিশোর্ধ্ব স্কুলশিক্ষক দেবাশিস চক্রবর্তী। হন্টন দৌড়ে প্রথম স্থান অধিকার করে অণিমাদেবী বলেন, “এই বুড়ো বয়সে যে বিশ্ব জয় করব ভাবিনি। সকলকে বলব অন্তত কুড়ি মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন। হাঁটাই মহৌষধ।”
যে বয়সে সুগার, প্রেসার, হাঁপানি, বাত, নানান সমস্যায় মানুষ জর্জরিত থাকেন সেই বয়সে এই সমস্যার কিছুই নেই অণিমাদেবীর। যে বয়সে অবসর নিয়ে ঘরে বসে থাকা বা পরমুখাপেক্ষি হয়ে থাকতে হয় বা যে বয়সে ঘরই একমাত্র বয়স্কদের ঠাঁই বলে ধরে নেওয়া হয়, সেই সময় বয়ঃভার দূরে সরিয়ে রেখে অণিমাদেবী করলেন বিশ্ব জয়। গর্বিত করলেন রাজ্য তথা দেশবাসীকে। দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে নতুন শুরুর রান আপ নিচ্ছেন আশির দোরগোড়ায় থাকা অণিমা। মায়ের সাফল্যে গর্বিত চিকিৎসক পুত্র অরুণাংশু তালুকদার, চিকিৎসক পুত্রবধূ পায়েল তালুকদার ও নাতনি অহনা তালুকদার।
তবে অনিমা দেবীর আজকের সাফল্যের বীজ পোঁতা হয়েছিল বাদাগাছি জুনিয়র হাইস্কুলে কাজ করার সময় থেকে। কৃষ্ণদেবপুরের বাড়ি থেকে বাস ধরে স্কুল পর্যন্ত যাওয়ার উপায় ছিল না। স্কুলের দু’কিলোমিটার দূরে নামিয়ে দিত বাস। সেখান থেকে হেঁটে স্কুল পৌঁছে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করতেন অণিমা দেবী। অবসরের পরে স্কুলের পড়ুয়াদের বিভিন্ন খেলাধুলোর প্রতিযোগিতায় যোগ দিতেন তিনি। সেই এক প্রতিযোগিতার ময়দানে হণ্টন প্রতিযোগিতায় নাম দেওয়ার জন্য অণিমাদেবীকে বলেছিলেন এক শুভাকাঙ্ক্ষী। ২০০৪ সালে অবসরের পর প্রতিযোগিতায় নামা শুরু অণিমা দেবীর।
মহকুমা-জেলা-জাতীয় স্তরে জয়ী করে এবার বিশ্বজয় ঊনআশির অণিমা দেবীর।
