রাজ্য

বলি হচ্ছেটা কী ?


রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:৪ঠা জুন:- ভয়াল করোনার সমতঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘আম্ফান’ যে কত ক্ষতি করেছে এখনও তার হিসেব করে ওঠা যায়নি, সরকারি -বেসরকারি কোনো স্তরেই। বিধ্বংসী ঝড় যে দুর্দশা দিয়ে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে তাকে জরুরী অবস্থা বলতে কারোরই দ্বিধা থাকার কথা নয়। বহু দুর্গম অঞ্চলে সরকারি ব‍্যবস্থা কার্যকর করতে যে সময় ও রসদ সরবরাহ ব‍্যবস্থা প্রয়োজন তা সংগঠিত করে দুর্গতদের প্রাণরক্ষার জন‍্য প্রচুর সময় ব‍্যয় করতে হয়। অভিজ্ঞ ব‍্যক্তি মাত্রেই জানেন যে এই মধ‍্যবর্তী সময়ে গ্রামে বা শহরে যে সব বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠন, যারা বস্তুতঃ ‘ সিভিকসোসাইটি ‘ ব‍্যবস্থার অন্তর্গত, তাঁরা এই বিপর্যয়ের হাল ধরেন।

এই সংগঠনগুলির মধ‍্যে যেমন নিয়মিত ত্রাণের কাজে অভিজ্ঞরা থাকেন , তেমন থাকেন পাড়ার ক্লাব সদস‍্যরা, থাকতে পারে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল যাদের এই ধরনের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা করার কর্মসূচি আছে। এমন কি কেউ কেউ ব‍্যক্তিগত ভাবেও এই ত্রাণের
কাজে অংশগ্রহণ করেন যথাসম্ভব অর্থ ও রসদ
ব‍্যয় করে। আরেকটু এগিয়ে বলা যায়, যেকোনো স্থানীয় বিপদে, চুরি ডাকাতি , আগুন,সৎকার ইত‍্যাদি যেকোনও দুর্ঘটনায় এইসব বেসরকারি সংগঠন বা ব‍্যক্তিরাই অগ্রণী হন। যেহেতু সরকারি যন্ত্র নানা নিয়ম কানুন মেনে সক্রিয় হতে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু দেরী হয়ে যায়। মোটকথা যত এক্ষেত্রে বেসরকারি ‘ ওয়ার্ক ফোর্স ‘ সরকারি মেশিনারি ‘র পরিপূরক হিসাবে কাজ না করতে পারলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুর্গতরা।

সিভিক সোসাইটি ও প্রশাসন- এর পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় না থাকলে সমাজের চলার গতি রুদ্ধ হয়ে বাধ‍্য।একটা উদাহরণ বক্তব্য আরো স্পষ্ট হতে পারে। যেমন : খবরে প্রকাশ , একশ দিনের কাজের দুর্নীতি আটকে দেন সতর্ক গ্রামবাসীরা দলমত নির্বিশেষে। দুস্কৃতিরা সুযোগ পেলেই সামাজিক অপরাধে পটু, একথা সকলের জানা। প:মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের কূয়াপুর গ্রামপঞ্চায়তের প্রধান ও তার অনুগত দুস্কৃতিরা হাতে নাতে ধরা পড়ে গণরোষে গ্রাম ছাড়া। এককাট্টা হয়ে গোটা গ্রাম বিক্ষোভে সামিল।

এই রোমহর্ষক দুর্নীতির বিবরণ বারান্তরে করা যাবে। এর উল্লেখ শুধু এটা প্রমাণ করতে যে বিপর্যয়ের দিনে মানুষ যখন স্বভাবতই বিপন্ন -ত্রাণের জন‍্য সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন সেই সক্রিয় গোষ্ঠীর রাজনৈতিক রং চিহ্নিত করতে গিয়ে তাকে নিস্ক্রিয় করে দেওয়া​, এক ধরণের সামাজিক অপরাধ।

খবরে প্রকাশ,সরকারি ঘোষণা হচ্ছে ঘুর্ণিঝঞ্ঝায় ছয় কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত। ৯৮ জন মৃত। মোট ক্ষতি একলক্ষ কোটি টাকা। করোনার পটভূমিকায় এই ক্ষয়ক্ষতি মানুষের দুর্গতির খতিয়ান সহজেই অনুমেয়। আজ যদি সমস্ত সমাজকে দূরে সরিয়ে রেখে, রং- বাছাবাছির খেলায় মূল‍্যবান সময় নষ্ট করে , ত্রাণের কাজে দেরী করে দেওয়া হয়, তাহলে তার মত অবিবেচনাপ্রসূত কাজ আর কীই বা হতে পারে। দুর্গত আধমরা মানুষকে মৃত‍্যুর মুখে ঠেলে দেয়া কি সামাজিক অপরাধ নয় ?

এত প্রশ্ন উঠতে না, যদি সরকার এক অভু মততপূর্ব সিদ্ধান্ত না নিতেন। খবর পাওয়া গেল সন্দেশখালি ২ নং ব্লকের এলাকায় ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যান কিছু ত্রাণকর্মী। তাদের কাজে রাজনৈতিক ভাবে বাধা দেওয়া হয়, কারণ তারা
শাসকদল বিরোধী এক রাজনৈতিক দলের কর্মী। অভিযোগ, ত্রাণ সামগ্রী কেড়ে নিয়ে তাদের বাধা দেওয়া হয়। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন উভয়েই তাদের নিষেধ করে এই সূত্রে যে কোনো রাজনৈতিক দলকেই ত্রাণ বিলি করতে দেওয়া যাবে না। প্রাক্তন বিধায়ক-এর অভিযোগ, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পর সরকারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।’ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ জানান যে এটাই এখন সরকারি নির্দেশ। মুখ‍্যমন্ত্রী নিজেই বলেন বলে খবর,’ ত্রাণের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কেউ যদি রিলিফ দিতে চান, তাহলে ডিএম, এসপি, বিডিও আছেন ওদের কাছে দিয়ে দেবেন।’ অনেকে বলছেন, ‘হচ্ছে টা কী?” মুখ‍্যমন্ত্রী কি চান না , ঘুর্ণীঝড় কবলিত রাজ‍্যের মানুষের এই বিপদের দিনে অন‍্যান‍্য এলাকার মানুষ এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়াক?’ বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন ,’ নিজেরা কিছু করতে পারছে না, কাউকে কিছু করতেও দেবে না। মনে হচ্ছে, শেষের শুরু।’

ঐ ব্লকেরই শিতলিয়া গ্রামে, ১৯০০ মানুষ প্লাবিত ও দুর্গত হয়ে পড়ে। তাঁদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন বামপন্থীরা। পুলিশ বা শাসক কেউ বাধা দিতে আসেনি।কারণ কি জানেন? কারণ গ্রামের মানুষ সবাই মিলে ত্রাণ বিলি তদারকির সর্বদলীয় কমিটি গড়ে নিয়েছেন নিজেদের মত করে। কান পাতলেই শোনা যাবে, সবাই বলছে
‘আমরা শ্বাস নিতে পাড়ছি’।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।