রাজ্য

ব‌ই বাঁধানোর নতুন পদ্ধতির সন্ধান


চিন্তন নিঊজ:২৭শে মে,২০১৯: মৌসুমী চক্রবর্তী:—- বই বাঁধানো কাজ কয়েকভাবে করা যায়–

প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করে তা দিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা যায়। যেমন-বিভিন্ন ধরণের রেজিষ্টার, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য লেখার খাতা, ব্যবহারিক খাতা, অফিস ফাইল, ফাইল বোর্ড, প্যাকেট, বিভিন্ন মাপের খাম ইত্যাদি।
এসব পণ্যসামগ্রী স্থানীয় দোকানে বা জেলা সদরের দোকানে বিক্রির জন্য দেওয়া যাবে অথবা বই বাঁধানোর কাজের পাশাপাশি নিজেরাই দোকানের একপাশে এসব দ্রব্যাদি রেখে পাইকারি বা খুচরা হিসেবে বিক্রি করা যাবে ।
কোন ছাপাখানা বা প্রকাশনা কর্তৃক অর্ডার অনুযায়ী তাদের বই, খাতাপত্র, রেজিস্টার খাতা ইত্যাদি বাঁধানোর কাজ করা যাবে। এজন্য কাজে দক্ষতা ও নিপুণতার প্রয়োজন হয়। ভালো কাজ করলে সহজেই বড় প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের অর্ডার পাওয়া যাবে।
এর পাশাপাশি পুরাতন বইপত্রও অর্ডার অনুযায়ী বাঁধানো যাবে ।
বই পুস্তক, খাতাপত্র ইত্যাদি ক্রেতার রুচি বা সামর্থ অনুযায়ী বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাঁধানোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো। সাধারণত স্কুল কলেজের বইপত্র ক্রেতারা বোর্ড কাপড় বা রেক্সিন দিয়ে বাঁধিয়ে নেয়। তবে সৌখিন ক্রেতারা তাদের বইপত্র চামড়া দিয়েও বাঁধায়।
চামড়া, রেক্সিন, কাপড় বা বোর্ড দিয়ে বই বা খাতা বাঁধানোর পর অনেক ক্রেতাই চান তার উপর বই বা প্রতিষ্ঠানের নাম ছাপিয়ে নিতে। তাই কোন প্রেসের সাথে যোগাযোগ করে ক্রেতার পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী ছাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখলে ভালো হবে। এছাড়া বই বাঁধানোর কাজে মোটামুটি সফলতা আসলে নিজেরাই বই বাঁধানো কাজের পাশাপাশি বই খাতার উপরে ছাপানোর জন্য প্রেসের ব্যবসাও শুরু করা যাবে।
প্রথমে বাজারে একটু সুনাম ছড়াতে পারলে তখন সহজেই অনেক কাজ পাওয়া যাবে। এছাড়া ক্রেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখলে তারাই তাদের সব ধরণের কাজ একই জায়গা থেকে করাবেন।

বই বাঁধানোর নিয়ম

প্রথমে যে বই বাঁধানো হবে তার পৃষ্ঠাগুলোকে নম্বর অনুযায়ী পর পর সাজাতে হবে।
তারপর পৃষ্ঠাগুলোকে সমান করে এক জায়গায় রেখে একধারে ভোমর বসিয়ে হাতুড়ির সাহায্যে তিনটা ছিদ্র করে নিতে হবে।
এবার ভোমর ও সুতোর সাহায্যে সেলাই করতে হবে। অনেক সময় সেলাই এর পাশাপাশি আঠা ব্যবহার করা হয়। তাতে বই এর পৃষ্ঠা সহজে খুলে না।
বইটার যে মলাট দেওয়া হবে তা ঠিক করতে হবে। সাধারণত বিভিন্ন রঙ এর আর্ট পেপার দিয়ে বইয়ে মলাট দেওয়া হয়। বই এর মাপে আর্ট পেপার কেটে বইয়ের উপর ও নীচে আঠা দিয়ে দুই পাশে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে।
মাপ মতো রেক্সিন কেটে নিতে হবে। বইয়ের যে পাশে সেলাই দেওয়া হয়েছে; সেই পাশে রেক্সিনে আঠা দিয়ে লাগাতে  হবে। তাহলে বইটা দেখতে সুন্দর হবে।
আঠা লাগানো হলে বইটা ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে ।
সব শেষে ধারালো কাঁচি বা কাটার দিয়ে বই তিন পাশ সমান করে কেটে নিতে হবে ।

সাবধানতা

বই বাঁধানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে বইয়ের সব পাতা যেন সমানভাবে কাটা হয়।
সেলাই মজবুত না হলে বা আঠা ভালো করে না শুকালে পাতা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বর্ষাকাল এ ব্যবসার মন্দার সময়। কারণ, রোদের তেজ ভালো না থাকায় আঠা শুকাতে সময় লাগে। তাই এ সময় একটু সময় নিয়ে বাতাসে আঠা শুকাতে হবে।
সুঁচ, সুতা, ভোমর, হাতুড়ি, কাটার, কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহার করার সময় সাবধান থাকতে হবে যেন হাত না কাটে।

আয় ও লাভের হিসাব

বই বাঁধানোর পর তার মজুরি নিয়ে অর্থ উপার্জন করা যাবে। নিজেরা বিভিন্ন ধরণের খাতা, অফিস ফাইল, ফাইল বোর্ড বিভিন্ন মাপের খাম এরকম বিভিন্ন স্টেশনারি দ্রব্যদি বিক্রয় করে তা থেকে আয় করা সম্ভব।

বই বাঁধানো প্রকল্প থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে প্রতি মাসে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা আয় করা যাবে। বই বাঁধানো ব্যবসা থেকে আয় বিনিয়োগ ও কাজের অর্ডারের উপর নির্ভর করে। এছাড়া মূলত স্থানভেদে আয়ের তারতম্য হয়। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠানামা করে। তাই এ ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। নিজেদের মতো কম দামে স্থায়ী ও অস্থায়ী জিনিসপত্র কিনেও বই বাঁধানোর প্রকল্প শুরু করা সম্ভব।

সারাবছরই এই বাঁধানোর কাজ চলে। স্কুল, কলেজের কাছাকাছি বা বাজারের বই বাঁধানো কাজের দোকান দিলে ব্যবসা ভালো চলবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।