রাজ্য

তৃণমূলী তান্ডবে বিধ্বস্ত বীরভূম


রণদ্বীপ মিত্র, চিন্তন নিউজ, ১ মে: ভোট লুট রোখায় খিলাফতের গুমটি পুকুরের জলে, পুড়ে ছাই ভাইয়ের বাড়ি। বৃদ্ধ খিলাফত সেখ। অকুতোভয়। জেদ নিয়েছিলেন সারাদিন থাকবেন বুথ আগলে। করেছেনও তাই। রুখে দিয়েছেন তৃণমূলের ভোট লুটের সব ছক। পরিণাম, লালঝান্ডার এই লড়াকু সৈনিকের ঠাঁই এখন থানায়। তার বাড়ি তছনছ, ভেঙেচুরে একাকার। পরিবার পরিজন আতঙ্কে বাকরুদ্ধ। রুটি রুজির একমাত্র সংস্থার গ্রামের মোড়ে থাকা পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুটে গুমটি ভাসছে পুকুরে জলে! তৃণমূলী রোষের এক জঘন্য বিজ্ঞাপন বীরভূমের ইলামবাজারের পাইকুনি গ্রামের খিলাফত। পাশের গ্রাম পোছিয়ারা সমীর মোল্লাও শিকার একইরকম রোষের। কোথাও নিজেদের মধ্যে তো কোথাও বিরোধীদের প্রতি হিংস্র আক্রমনে আক্রান্ত, ঘরছাড়া, হাসপাতালের শয্যায় অসংখ্য মানুষ। নির্বিকার প্রশাসন। নীরব ‘পর্যবেক্ষক’ পুলিস। তৃণমূলী উন্মত্ততায় জ্বলছে বীরভূম!
তৃণমূলী সন্ত্রাসের জন্য ইলামবাজারের ধরমপুর পঞ্চায়েতের ‘সুখ্যাতি’ বরাবরের। সেই পঞ্চায়েতে একাধিক বুথে প্রতিরোধের ধাক্কা হজম করতে পারে নি শাসকদল। তাড়াতাড়ি হাত চালাবার নিদান এই পঞ্চায়েতেও এসেছিল ভোট চলাকালীন। ‘নজরবন্দী’ অনুব্রতের তরফে। তবুও কাজ হাসিল হয় নি সবটা। কারন বুথে ছিলেন খিলাফত, সমীর মোল্লারদের মত পার্টিজানরা। খিলাফত ছিলেন পাইকুনি বুথে। সমীর ছিলেন পোছিয়ারা বুথে। ফলে লিড হারানোর ভয়ে হিংস্র হয়ে উঠেছে এলাকার তৃনমূলের ‘উন্নয়ন’ বাহিনীর নেতা একরাম, লালবাবুরা। মঙ্গলবার সূর্যের আলো ডুবতেই হই হই করে একদল লোকের আচমকা হামলা আছড়ে পড়ে পোছিয়ারা গ্রামে। লক্ষ্য সমীর মোল্লা। বেধড়ক মার। বাড়ি চড়াও। দরজা-গ্রিল ভেঙে চূড়মার। প্রাণ বাঁচাতে আক্রান্তরা ছোটেন দিশেহারা হয়ে। এরপর ওই উন্মত্ত বাহিনীর ঠিকানা হয় পাইকুনি। এখানে টার্গেট খিলাফত। আঁচ পেতেই খিলাফতকে বাড়ি থেকে বের করে দেন পরিবারের সদস্যরা। স্ত্রী, ছেলেরা তখন মুখোমুখি তৃণমূলী হিংস্রতার। চলে বাড়ি ভাঙচূড়। তছনছ করে দেওয়া হয় গোটা বাড়ির চত্বর। গ্রামের মোড়ে রয়েছে খিলাফতের গুমটি। সেই গুমটি উপড়ে ফেলে দেয় পুকুড়ের জলে। খিলাফতের বাড়ির পাশেই তার ভাই শুকুরের বাড়ি। শুকুর আগেই মারা গিয়েছেন। তার স্ত্রী হবিবা বিবি থাকেন ছেলে-মেয়ে নিয়ে। তার বাড়িতে চড়াও হয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়ির একটা বড় অংশ। আতঙ্ক আর অসহায়তায় হাউ হাউ করে কেঁদে চলেছেন হবিবা বিবি। হবিবা বিবি সিপিআই(এম) করেন না। বলছে গোটা গ্রাম। তাহলে তার বাড়ি কেন ? ‘অন্য রাগ পুষিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের এই ঠ্যাঙারেরা’, মিলেছে এমন মন্তব্যের সাক্ষ্যই। গোটা এলাকা বিধ্বস্ত। থমথমে। আড়ষ্ট। পুলিস এসেছে। ঘুরে গেছে। আর খিলাফতকে খুঁজে বের করে থানায় বসিয়ে রেখেছে। আর হামলাকারি একরাম, লালবাবুদের পাল্টা মামলা সাজাতে নিজেদেরই এক ছোট্ট চালাঘর পুড়িয়ে বহাল তবিয়তে সংবাদমাধ্যমের বুমের সামনে দিয়ে চলেছেন বাইট।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।