মল্লিকা গাঙ্গুলী:চিন্তন নিউজ:২২শে মে:-“বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি”- বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিস্ময়কর গ্রহ এই পৃথিবী যে কত লক্ষ কোটি জীবনের আবাস! স্থলভাগ থেকে জলভাগের জীব সংখ্যা বহুগুণ বেশি। প্রত্যেকটি জীবের পৃথক পৃথক জীবন বৈশিষ্ট্য । কিন্তু প্রতিটি প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বলা যায় একে অপরের পরিপূরক! ডারউইনের অভিব্যক্তি অভিযোজন প্রক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত জীবজগতে চলে যোগ্য তমের ঊধর্তন হয়ে ওঠার,অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। অন্যান্য সমস্ত জীবনধর্ম আপন আপন জীববৃত্তি দ্বারা চালিত। কিন্তু, পৃথিবীর একমাত্র সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ তার জীববৃত্তির সঙ্গে আরও যে বিশেষ গুনটির অধিকারী তা হলো বুদ্ধিবৃত্তি। আর এই বুদ্ধি প্রয়োগ করে মানুষই পৃথিবীর সমস্ত জীবকে আয়ত্তে আনতে সক্ষম। আবার মানুষেরই সুখ স্বাচ্ছন্দের জন্য তার বাসভূমি কে বসবাসের যোগ্য করে তুলতে হয়! কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেই মানুষেরই চরম স্বার্থপরতার কারনে পৃথিবী বারবার বিপন্ন হয় । অার, তার কুফল সমগ্র জীবজগতের উপর বর্তায়! মানুষের কু রাজনীতি, নির্লজ্জ স্বার্থপরতা, এর জন্যই কমবেশি বিশ্বের সর্বত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ কলুষিত হয়। বর্তমানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, গ্রিনহাউস গ্যাস, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি শব্দ গুলির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। কতিপয় সচেতন মানুষ এই বিষময় বিশ্ব পরিবেশকে জীব জগতের বাসযোগ্য করে তুলতে সচেষ্ট হলেও সর্বস্তরে মানুষের সচেতনতার অভাব বিশেষ করে সরকারের সদর্থক পরিকল্পনার ঘাটতি দেশে বিদেশে জীব বৈচিত্র্য চরম সংকটে।
কিছুদিন আগে আমাজনের বর্ষাবনের প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলের এক তৃতীয়াংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এমনকি বাঁকুড়ার শুশুনিয়া, পুরুলিয়ার অযোধ্যা, বা গড়পঞ্চকোটের পাহাড়ি বনভূমির অগ্নিকাণ্ড, সমস্ত ই মানুষের অত্যাচারের ফল। বর্তমানে বিশ্ববাসী এক অভাবনীয় বহুমাত্রিক স্বাস্থ্য সংকটে জর্জরিত। আমাদের দেশে ও দীর্ঘ দু মাস সরকারি লকডাউনে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বুকে আছড়ে পড়া বিধ্বংসী ঝড় আমফান জীবজগতের ব্যাপক ক্ষতি করেছে যা একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়!কিন্তু এই সংকট কালে মনুষ্য কৃত অত্যাচারের কারনে জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের সাম্প্রতিক নিদর্শন আসামের ডিহিং পাটকই অভয়ারণ্যের বিনাশ সাধন। আসামের ডিব্রুগড় তিনসুকিয়া জেলা জুড়ে যে বিশাল বনভূমি বিস্তৃত, তা পূর্বের আমাজন নামে খ্যাত। এই বিখ্যাত ডিহিং পাটকই অভয়ারণ্যে ৪৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৪৭ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩০ প্রজাতির প্রজাপতি, এবং প্রায় ২৯৩ রকমের পাখির নিশ্চি ন্ত আশ্রয়। ভারতের একমাত্র এপ, হুলুক গীবন, বিরল অসমীয়া ম্যাকক, বিন টুরুং ও মর্বেল ক্যাট অধ্যুষিত এই অভয়ারণ্য এখন আর ঐ সমস্ত বিরল প্রাণীদের জন্য নিরাপদ নয়! এই বনভূমির মাটি খুঁড়ে কয়লার খোঁজ পাওয়ার পর থেকেই প্রায় ষোলো বছর ধরে চলছে অবৈধ কয়লা উত্তোলন। যা ইতিমধ্যেই ঐ বন জীবনের চরম ক্ষতি করে ফেলেছে, তার উপর এখন আবার সরকারের সিলমোহর পড়লো এই খনিশিল্পে। “দি ন্যাশনাল বোর্ড অব ওয়াইল্ড লাইফ” (এন বি ডব্লিউ এল NBWL) সম্প্রতি কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড কোম্পানীকে আসামের এই বিশ্ব বিখ্যাত বর্ষাবনের ৯৮.৫৯ হেক্টর জুড়ে কয়লা তোলার ছাড়পত্র দিয়েছে। অভয়ারণ্যের এই অঞ্চল টি আবার বিশেষ করে হাতিদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। বর্তমান ভারত সরকারের অবিবেচনা প্রসূত ই. আই. এ নোটিফিকেশন 2020 (EIA Notification 2020) আইন প্রয়োগ দেশের জীব আবাসস্থল বিনাশের এক ভয়ংকর পদক্ষেপ। এমতাবস্থায় দেশের ঐতিহ্যবাহী অভয়ারণ্য এবং বিরল প্রাণীদের সংরক্ষণের জন্য সর্বস্তরে জনমত গঠন করা জরুরি। একদিকে যেমন বিষপূর্ণ প্রকৃতি রক্ষার জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, অপর দিকে তেমনি সরকারের পরিবেশ বিনাশি অবিবেচনা প্রসূত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ও বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যেভাবে বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া বনাঞ্চল অগ্নিকাণ্ডে সরকারের সাহায্যের আশায় বসে না থেকে ঐ অঞ্চলের বসবাস কারী মানুষ নিজেদের আবাস রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তেমনি যে কোনো জীব আবাস বা হ্যাবিটাট সুরক্ষা করতে জনগন কে এগিয়ে আসতে হবে। পশ্চিম বঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা সর্বদা প্রচার অভিযান এবং সরাসরি অংশগ্রহণ বা বিজ্ঞান ভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ ও পরিবেশকে বাসযোগ্য করে তুলতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু শুধু বিজ্ঞান মঞ্চ নয়, সমস্ত স্তরের মানুষের যৌথ আন্দোলন ও সমবেত প্রচেষ্টা অব্যাহত না থাকলে ভারতের আমাজন- “ডিহিং পাঠকই অভয়ারণ্য” আগামী দিনে পাঠ্যপুস্তকের পাতায় রয়ে যাবে। ২০২০এর জীববৈচিত্র্য দিবসের থিম- “প্রকৃতির মাঝেই আছে সমাধান” (“our solution are in nature”)- প্রকৃতি পরিবেশকে সুরক্ষিত করতে পারলেই আমাদের সমস্যার সমাধান- কাজেই সুস্থ ভাবে বাঁচতে হ’লে প্রকৃতি পরিমণ্ডলকে সুস্থ রাখতে হবে! তাই আসামের বর্ষাবন রক্ষার জন্য শপথ হোক save Dehing Patkai. Raise Your voice against coalmining. 2020 জীববৈচিত্র্য দিবসের শ্লোগান হোক- Live and let live.