রাজনৈতিক রাজ্য

সন্দেশখালি আছে সন্দেশখালিতেই।


উত্তম দে,নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ১৩/০২/২০২৪:– — সন্দেশখালির স্থানীয় তৃণমুল নেতা শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার, শিবপ্রসাদ হাজরার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ঘটে আসা শ্লীলতাহানী,জবরদখল সহ একাধিক অত‍্যাচার সহ‍্যের বাঁধ ভেঙ্গে, যখন এলাকার সাধারণ মহিলারা প্রতিরোধের পথে নামলেন, তখন যে সকল ঘটনার বিবরণ প্রকাশ‍্যে এসেছিল, তা নিঃসন্দেহে সমাজকে কালিমালিপ্ত করেছে। এ আমার লজ্জা,তোমার লজ্জা, জননীর জঠরের লজ্জা।প্রকাশ‍্যে এসেছে রাতের পর রাত, কিভাবে ত্রাসের কাছে কার্যত বশ‍্যতা স্বীকার করে, মহিলারা বাধ‍্য হতেন শাসক বাহিনীর মনোরঞ্জনের শিকার হতে। এ কোন সমাজে আমরা বাস করছি? এ কোন অন্ধকার যুগ? এ কোন বর্বরতা? যেখানে ঘরের মা, বোনেদের ন‍্যুনতম নিরাপত্তা দেওয়া যায় না। সংবিধান বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি কি শুধুই ছাপার অক্ষরে থেকে যাবে?নির্বাচিত সরকার কি তা নিশ্চিত করবে না? প্রশ্নগুলি এ কারণেই উঠে আসছে, কারণ অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার বলা স্বত্ত্বেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব‍্যবস্থাই গ্রহণ করা হয় নি। অথচ এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিরোধে সামিল হতেই, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা প্রয়োগ, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে, অত‍্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে রুখে দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।

যিনি মৌচাকে ঢিল ছুুঁড়েছেন,তাকে তো আর বাইরে রাখা যায় না? তাই বাঁশদ্রোণী থেকে গ্রেফতার করা হলো সন্দেশখালির প্রাক্তণ সি পি আই(এম) বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে, যিনি ঘটনার দিনে কলকাতায় দলের রাজ‍্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এই সিপিআই(এম) নেতাই শেখ শাহজাহান,উত্তম সর্দার,শিবপ্রসাদ হাজরার কুকীর্তির কথা প্রথম প্রকাশ‍্যে নিয়ে আসেন। পলাতক অভিযুক্ত শিবু হাজরার ম‍্যানেজারের দায়ের করা এফ‌আই আর (FIR) এ স্বাভাবিক কারণেই তার নাম ক্রমতালিকায় একেবারে শীর্ষে ছিলো। অথচ যতক্ষণ না পযর্ন্ত শাসকদল উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করলো, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা যায় নি।যার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানী সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের তরফ থেকে সেই উত্তম সর্দারের জামিনের বিরোধিতা না করায় সহজেই তার জামিন হয়ে যায়।কিন্তু মুক্ত হয়ে বের হতেই নাটক! পুলিশ তাকে পুণরায় গ্রেফতার করে।প্রশ্ন উঠছে তবে কেন পুলিশ আদালতে জামিনের বিরোধিতা করল না? যদি অন‍্য মামলায় তাকে গ্রেফতারও করা হয়ে থাকে,তবে তা সিডি পেশ করে কেন আদালতের গোচরে আনা হলো না?

অন‍্যদিকে সিপিআই(এম) রাজ‍্য কমিটির নেতাকে বুধবার পর্যন্ত তাদের হেফাজতে চাইতে দেখা গেল সেই পুলিশকেই। গতকাল রাজ‍্যডুড়ে নিরাপদ সর্দারের নিঃশর্ত মুক্তি ও অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবীতে থানাগুলিতে সিপিআই(এম) এর তরফে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। বেশকিছু জায়গায় এই বিক্ষোভকে দমন করবার জন‍্য প্রশাসনকে অতিসক্রিয় হতে দেখা যায়। এমনকি সিপিআই(এম) এর ডাকা গতকালের সন্দেশখালি ১ ও ২ নং ব্লকে ডাকা বনধকে ব‍্যর্থ করতেও প্রশাসনের তৎপরতা দেখা যায়। যদিও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা সেই উদ‍্যোগকে ব‍্যর্থ করে।

আজ সিপিআই(এম) বসিরহাট এস পি অফিস অভিযানের ডাক দিয়েছেন।এই অভিযানের পুর্বেই প‍্রশাসন তা দমন করতে এস পি অফিসের ৫০ মিটার এলাকা জুড়ে ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করেছে।অন‍্যদিকে, সন্দেশখালির শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের শ্লীলতাহানী সহ নানাবিধ ঘটনা নিয়ে যখন রাজ‍্যজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠছে,ঠিক তখনই বিজেপি তার আস্তিনে লুকোনো সাপ বের করে,সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে।গতকাল রাজ‍্যপাল সন্দেশখালি পরিদর্শনে যান।যদিও অভিজ্ঞতা বলছে,তিনি এর পুর্বেও সন্ত্রাসকবলিত বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছেন, রাজভবনে সেফ হোম খুলেছিলেন। কিন্তু সমস‍্যা যে তিমির সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।এলাকার অত‍্যাচারিত মহিলাদের মুখ কাপড়ে ঢেকে রাজ‍্যপালকে স্মারকলিপি দিতে দেখা যায়। এই চিত্রই প্রমাণ করে শাসকবাহিনীর আতঙ্কে মহিলারা কতখানি আতঙ্কিত।

আজ ৩৮ দিন পরেও পলাতক শাহজাহানকে ধরা গেল না। গ্রেফতার করা গেল না শিবু সর্দারকে। আজ পর্যন্ত এলাকার তৃণমুল বিধায়িকা এমনকি সাংসদ নুসরত জাহানকে দেখা গেল না অত‍্যাচারিত মা,বোনেদের পাশে দাঁড়াতে। উল্টে শাসকদলের তরফ থেকে এই হাড়হিম করা অত‍্যাচারকে সরলীকরণ করতে দেখা যাচ্ছে। এবং সিপিআই(এম) এর ষড়যন্ত্র বলে ঘটনাগুলিকে অস্বীকার করে নজর অন‍্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা চলছে। শেখ শাহজাহান সহ শিবু হাজরা এখনো অধরা। স্হানীয়দের অভিযোগ এদের প্রভাব এতটাই যে,এরা আড়ালে থেকেই বাহিনী দ্বারা প্রতিরোধকারীদের হুমকি দিচ্ছেন। প্রশ্ন উঠে আসছে, আইনে শাসন কি আদৌ প্রতিষ্ঠিত হবে সন্দেশখালিতে? আতঙ্কিত মহিলা সহ গ্রামবাসীরা কি আদৌ নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারবে? প্রশাসন কি তাদের তা নিশ্চিত করবে? নাকি প্রতিরোধই একমাত্র বাঁচার রাস্তা? এই প্রশ্নগুলিই বার বার উঠে আসছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।