দেশ

আন্তর্জাতিক স্তরে বি জে পি সরকারের অবিমিশ্রকারিতার প্রকাশ


মল্লিকা গাঙ্গুলি: চিন্তন নিউজ:১১ ই মে:– জাতি, ধর্ম, ভাষা, দেশ, কালের গন্ডী ছাড়িয়ে মানুষ কে মানুষ হিসাবে বিচার করা মনুষ্যত্বের লক্ষণ। আর ব্যক্তি বা সমষ্টি ছাড়িয়ে সরকার তথা রাষ্ট্র শক্তির কাছে সেই মানবিকতা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আক্ষেপের বিষয় ভারতের কেন্দ্র সরকার তথা বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ্ দেশে শুধু নয় দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক স্তরে এক নিষ্ঠুর বিশ্বাস ভঙ্গের নজির গড়ে ভারতবাসীর লজ্জার কারণ হয়ে উঠলেন।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার কর্তৃক “নাগরিকত্ব সংশোধন আইন” বিল পাশ করে ঘোষণা করা হয় যে সীমান্তবর্তী দেশ গুলিতে পড়ে থাকা নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষেরা যদি ভারতের নাগরিকত্ব কামনা করে তবে ভারত সরকার তাদের সেই আবেদন মঞ্জুর করবে।
এই ঘোষণা এবং ভারত সরকারের ভুরি ভুরি আশ্বাস বানী তে বিশ্বাস রেখে স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বেশিরভাগ হিন্দু, শিখ ইত্যাদি হাজার খানেক মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব প্রার্থনা করে এবং ভিসা করিয়ে এদেশে আসেন। কিন্ত প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিলেও ভারত সরকার বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ ই গ্রহণ করেনি। কাজেই এই গৃহহীন সহায় সম্বল হীন মানুষ গুলি চরম হেনস্থা ও দুর্দশার শিকার হয়। একে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাই গরীব মানুষ গুলি স্ত্রী সন্তান নিয়ে দিশেহারা অবস্থার সম্মুখীন হয়। তারা তাদের শেষ সম্বল হাতে করে নিজেদের পরিচয় পাওয়ার এক গভীর প্রত্যাশা নিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা করে, কিন্ত ভারতে এসে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে করতে ধীরে ধীরে তাদের রসদে টান ধরে। আনাহার ক্লিষ্ট নিরাশ্রয় মানুষ গুলির বেশিরভাগের ততদিনে ভিসার মেয়াদ, কারো কারো পাসপোর্টের সময় সীমা ও অতিক্রান্ত, কোনো আশার আলো না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অসহায়, হতাশ ৮০০ জন মানুষ আবার পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই পর্যায়ে এসেও তারা চরম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলো। নয়া দিল্লীর পাকিস্তান দূতাবাসের ফোরের দল তাদের পাকিস্তানে যাওয়ার কাগজ পত্র তৈরির নামে যথেচ্ছ লুঠ করতে দ্বিধা করে না। জন পিছু এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত লেনদেন চলে। তা সত্ত্বেও ঐ ৮০০ জন মানুষ যে দেশের অত্যাচারের ভয়ে ভারতের নাগরিকত্ব লাভের স্বপ্নে বিভোর হয়ে এদেশে এসেছিল তারাই ভয়ঙ্কর বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে মাথা নত করে আবার পাকিস্তান ফিরে গেল আর বাকিরা এখনও তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায় দূতাবাসের দুয়ারে দাঁড়িয়ে।

পাকিস্তানের নির্যাতিত সংখ্যালঘু সংগঠন “সীমান্ত লোক সংস্থান” সম্প্রতি নাগরিকত্ব সন্ধানে ভারতে আসা ছিন্নমূল মানুষদের ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের দুর্দশা ও হেনস্থার চিত্র সামনে এনেছে। এই সংগঠনের সভাপতি হিন্দু সিং সোঢা জানিয়েছেন পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাজারের বেশি মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব লাভের স্বপ্ন নিয়ে এদেশে এসেছিল কিন্ত বিজেপি সরকারের অবিমিশ্রকারিতার শিকার হয়ে তাদের সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। তারা পাকিস্তান ফিরে গিয়ে আর এক সংকটের মুখোমুখি। পাকিস্তানের কট্টর মৌলবাদী সরকার এবং তাদের গুপ্তচর সংস্থা আই, এস, আই, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত বিরোধী প্রচারে নেমেছে। এমন কি ঐ ফিরে যাওয়া মানুষ গুলিকে মিডিয়ার সামনে বলতে বাধ্য করাচ্ছে ভারত সরকার নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে সে দেশে নিয়ে গিয়ে কি বিভৎস অমানবিক আচরণ ও হেনস্থা করেছে। ভারত সরকারের নির্লজ্জ অমানবিকতায় হতাশ হয়েই তারা পাকিস্তানে ফিরেছে।

বর্তমান ভারত সরকারের বিচার বিবেচনা হীন নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল পাশ এবং পরিকাঠামো হীনতার কারনে আইনের বাস্তবায়ন করতে না পারার সমস্ত কুফল এদেশ থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হওয়া হাজার খানেক মানুষের উপর পড়েছে শুধু নয়, এর প্রভাব আন্তর্জাতিক স্তর পর্যন্ত প্রসারিত হতে বাধ্য। এই ঘটনায় চিরবৈরি ভারত পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক যথেষ্ট অবনতি হবে বলেও আশঙ্কা করা যায়। নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এবং সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনার সামান্য অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বৃহত্তর যুদ্ধের দাবানলে পরিনত না হয় এই আশঙ্কা ও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের অভ্যন্তরে যে একনায়কতন্ত্রী স্বৈরশাসন কায়েম করতে তৎপর তা এভাবে বিদেশনীতি কে প্রভাবিত করলে কখনোই দেশের পক্ষে সুফল দায়ক হবে না!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।