রঘুনাথ ভট্টাচার্য:চিন্তন নিউজ:২৮শে ফেব্রুয়ারি:–খবরে প্রকাশ, ‘ ক্রেডিট সুইস ‘-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ,
ভারতের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার স্বাস্থ্য আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়, যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি যে, বর্তমান শাসক দলের রাজত্বে ‘ ব্যঙ্কের স্বাস্থ্য ভাল হয়েছে ‘।সমীক্ষা করা বলছেন এটা অসত্য কথা।
দেশবাসীকে ভাঁওতা দিয়ে কিছুদিন ভুলিয়ে রাখা গেলেও
সেই সম্মোহন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর, গত পাঁচ বছরে করপোরেট কোম্পানিগুলির আটলক্ষ কোটি টাকার তামাদী ঋণ মকুব করা হয়েছে এ পর্যন্ত। ‘ সুইস ক্রেডিট ‘ বলছে, এগুলি সবই বড় অঙ্কের ঋণ। ফলে খাতার হিসাবে অনাদায়ী পাওনা আদায় দেখা গেলেও , অনাদায়ী আদায়ের প্রকৃত চিত্র আদৌ উৎসাহব্যঞ্জক নয়।
গ্লোবাল ব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর ‘ক্রেডিট সুইস ‘ গত শুক্রবার তাদের
সমীক্ষা রিপোর্টে জানিয়েছে, ‘ ভারতের ব্যাঙ্ক-এর আর্থিক চিত্র নিতান্তই বেহাল।’ ২০১৪ থেকে ২০১৯ সময়কালে (ডিসেম্বর পর্যন্ত) ভারতের ব্যাঙ্কগুলির ‘অপরিশোধেয়’
(অর্থাৎ আদায়ের অযোগ্য) ঋণের মোট পরিমাণ ১৬.৮৮
লক্ষ কোটি টাকা। এটা মোট ব্যাঙ্ক ঋণের ১৫.৭%। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এটা ছিল ১২%, যেটা মাত্র গত দুই বছরে ৩%
বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই সময়ে এনপিএ অর্থাৎ অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৯.১লক্ষ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯.২% যা এই জমানার শুরুতে ছিল ১১.৭%। উক্ত সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ঋণ মকুব করা হয়েছে ৭ লক্ষ ৭৭হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই মোটা ঋণমকুবের ফলেই অনাদায়ী ঋণের হার বছরে ২% হারে । এই সময়ে লক্ষনীয় ভাবে শিল্পে ঋণবিলির পরিমাণ কমেছে বেসরকারি ব্যাঙ্কে ১৪% ও সরকারি ব্যাঙ্কক্ষেত্রে ৪% । শিল্পে ব্যাঙ্ক ঋণ দাদন হ্রাস মন্দার লক্ষণ।
আর্থিক–বিশেষজ্ঞদের মতে, বিপুল অনাদায়ী ঋণের জমে যাওয়াই এই ব্যাঙ্কিঙ্ ক্ষেত্রের এই বৈপরীত্যের কারন। এরফলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার হাল খারাপ হয়েছে। ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে বাধ্য।
এই অবস্থায় অনাদায়ী ঋণের আদায়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দাবি করে। অথচ, বর্তমান সরকার বৃহৎ কর্পোরেট ঋণগ্রহীতাদের
অনাদায়ী ঋণের মকুবেই বেশী জোর দিচ্ছে যা প্রমাণিত
কেন্দ্রের ঋণ মকুব নীতিতে।
এই ‘ অসম ‘ নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধী নেতৃবৃন্দ।
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, দেশের কৃষি সঙ্কট মোকাবেলায় ও কৃষক আত্মহত্যা বন্ধ করার
জন্য প্রয়োজন ছিল কৃষিঋণ এককালীন মকুব করা। অথচ
অমানবিকভাবে তা অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় সরকার পুঁজিপতি কর্পোরেট মালিকদের ঋণ মকুব নীতিতে মন দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা অন্যতম এক আর্থিক নীতির ব্যর্থতা। সেটা ঢাকা দিতেই মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে দেশের আর্থিক অবস্থা দুর্বল নয়। কংগ্রেসের মুখপাত্র
রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন,উক্ত সমীক্ষাকারী ‘ক্রেডিট সুইস ‘ এই মিথ্যা প্রচার নস্যাৎ করে দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে এই ঋণ মকুবে উপকৃতদের নাম প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, কোন নীতি অনুসরণ করে এই কাজ করা হল তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।
দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামন এই দাবিকে অস্বীকার করেন ও আর্থিক দুরবস্থার কথা নাকচ
করে দিয়েছেন। যদিও তিনি উক্ত সমীক্ষা রিপোর্ট সম্পর্কে
যথারীতি নীরব।