জেলা

মে-দিবসের সকালে কর্মহীন রিকশা শ্রমিকদের পাশে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী কিষেনলাল সেনগুপ্ত ও সবুজের অভিযান, চন্দননগর ॥


শঙ্কর কুশারী: চিন্তন নিউজ: ১লা মে:-বেশ কিছুদিন ধরেই রিকশা শ্রমিকদের সমস্যাটা দিন দিন বেড়েই চলছিলো । টোটো আসার পর থেকেই সেভাবে আর ভাড়া জুটছিলো না ওঁদের ।খুব স্বাভাবিকভাবেই অবস্থাটা আরো শোচনীয় হয়ে উঠলো লকডাউন ঘোষণার পর থেকে । তাঁরা জানেন না আগামীকাল কি খাবেন, কি তুলে দেবেন পরিবারের সদস্যদের মুখে । রিকশা শ্রমিকদের এই ভয়ংকর দুর্দিনের সময়ে এগিয়ে এলেন কিষেনলাল সেনগুপ্ত । অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মচারী ।

শহরের একটি আদ্যোপান্ত বামপন্থী পরিবারের সন্তান । মনেপ্রাণে বাম আদর্শে প্রাণিত একজন মানুষ । তিনি স্থির করেন, তাঁর দু’মাসের পেনশনের ৬০ হাজার টাকার পুরোটাই তিনি তুলে দেবেন এই রিকশা শ্রমিকদের হাতে । কিষেনলালের এই উদ্যোগকে সার্থক করে তুলতে এগিয়ে আসে সবুজের অভিযান, বড়বাজার । এমন একটা কাজের জন্য মে-দিনের থেকে ভালো দিন আর কিই বা হতে পারে ? সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ২০২০-র পয়লা মে সকালে বড়বাজারে সবুজের অভিযানের মাঠে মোট ৯০ জনের মতো রিকশা শ্রমিকের হাতে তুলে দেয়া হল নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ।

প্রাপকদের সঙ্গে ছিলেন দুজন শারীরিক ভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিও । কিষেনলালের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সবুজের অভিযানের পক্ষে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, কুনাল সেন, শিবনাথ লাঙ্গল সহ আরও কিছু সদস্য । জানা গেলো, কিষেনলাল ঠিক করেছেন এই মে মাসের পেনশনের টাকাটাও হাতে পেলেই এমনভাবেই তুলে দেবেন অসহায় কিছু মানুষের হাতে ।

আজকের এই উদ্যোগটি ছাড়াও কিষেনলাল ইতিমধ্যেই আরও ১২ হাজার টাকা দিয়েছেন তাঁর ওয়ার্ডে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি আয়োজিত এমনই একটি উদ্যোগে । ২০১১ সালে ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া থেকে অবসর নেবার পর কিষেণলাল সেনগুপ্ত ঝাঁপিয়ে পড়ে এক নতুন কর্মজীবনে । রোজ সকালে কিষেণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে আনন্দবাজার, আজকাল, গণশক্তি এবং প্রাথমিকভাবে খুঁজে নেয় রাজ্যের কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন প্রান্তিক পরিবারের কোন মেধাবী ছেলে বা মেয়ে সকল প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার লড়াই চালাচ্ছে ! একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর সে বেছে নেয় কয়েকজন এমন ছাত্র-ছাত্রীকে, গিয়ে দাঁড়ায় তাদের পাশে । যেদিন কিষেণের অ্যাকাউন্টে তার পেনশন জমা পরে সেইদিনই তার পুরোটাই চলে যায় ওই ছেলে মেয়ে গুলির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে l

কিষেণলালের এই উদ্যোগের প্রতিটি পর্বে তার সমগ্র পরিবার থাকে তার পাশে । প্রতিবছরই আগস্ট মাসের এক রবিবার তার নিজস্ব সংগঠন “ভালোবাসা”-র উদ্যোগে সম্বর্ধনা জানানো হয় মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রায় চল্লিশ জনের মতো এমনই ছাত্র-ছাত্রীদের । এই বছর লকডাউনের এই অভূতপূর্ব সময়ে থমকে গেছে এই পুরো প্রক্রিয়াটাই । কিন্তু থমকে থেমে থাকার জন্য তো জন্মগ্রহণ করে নি কিষেণলাল সেনগুপ্ত । অতএব, এই সময়টাতে তার অবসরকালীন ভাতার সবটাই ব্যবহৃত হচ্ছে লকডাউনের ফলে যে মানুষগুলি সত্যিকারের এক সংকটের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন তাঁদের যতোটুকু সম্ভব সাহায্য করার কাজে । ছাত্রছাত্রীদের সম্মাননা জানানোর সেই অনুষ্ঠানটির কথাও কিন্তু ভুলে যায়নি কিষেণলাল । সেটি কয়েক মাস পিছিয়ে যাবে মাত্র । সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, সামনের অক্টোবর নাগাদ এই অনুষ্ঠানটি হতে পারে বলে জানা গেলো কিষেণলাল এবং সেনগুপ্ত পরিবার সূত্রে ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।