শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

করোনার বিষয় আশয়(৫)- রঘুনাথ ভট্টাচার্য:,


চিন্তন নিউজ, ১২ মে: করোনা ভাইরাসের সক্রিয়তা সম্বন্ধে আম জনতার জ্ঞাণ সীমিত থাকে বস্তুতঃ দুটি তথ‍্যের মধ‍্যে। এক, কত আক্রান্ত। দুই, কত মৃত। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ভারতে ৫৬৩৪২ জন আক্রান্ত, মৃত ১৮৮৬ জন। আরেকটা তথ‍্য প্রায়ই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। সেটা হল সেরে উঠেছেন ১৬৫৪০। অথচ করোনা-সক্রিয়তা সম্পর্কে বিশ্লেষণে এই তথ‍্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।করোনার গতিপ্রকৃতি সারা বিশ্বের সমঝদার মহলকে নানা জটিল প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। করোনার দ্বিচারিতা বিশেষজ্ঞদের সত‍্যিই হতভম্ব ও বিস্মিত করেছে। তাঁরা করোনার এই ব‍্যবহারকে আখ‍্যা দিচ্ছেন, সে যেন পক্ষপাতদুষ্ট এক লুন্ঠক, যে বেছে বেছে লুঠ করছে মানুষকে। ইরানকে সে গণকবরে বাধ‍্য করেছে। আবার সেই ইরানেরই প্রতিবেশী ইরাক, যেখানে মৃত‍্যু ১০০ ছাড়ায়নি এখনও। আবার ডোমিনিকান রিপাবলিক হিমসিম খাচ্ছে ৭৬০০ আক্রান্ত নিয়ে, অথচ তার প্রতিবেশী হাইতিতে এ পর্যন্ত ৮৫। অপর প্রান্তে ইন্দোনেশিয়ায় মৃত কয়েক সহস্র, পাশেই মালয়েশিয়ায় মৃত ১০০র আশে পাশে।স্বভাবতই করোনার এই খামখেয়ালী ব‍্যবহার যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক যুক্তিভিত্তিক বলেই মনে করেন
বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, মূলতঃ অস্থির
সংযমহীন নাগরিক জীবনযাত্রা করোনার ব‍্যাপকতার জন‍্য দায়ী। তাই, সে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ ছুঁয়ে গেলেও আধুনিকতার শীর্ষে থাকা নিউইয়র্ক, লন্ডন, প‍্যারিস, মুম্বাইয়ের মত শহরগুলি করোনার রক্তচক্ষুর শাসন কঠিনতর।অথচ লাগোস, বাগদাদ, দিল্লি, বা বাগদাদের মত অপেক্ষাকৃত স্তিমিত নগরকেন্দ্রগুলি যেন করোনার ছাড় পেয়ে গেছে শেষমেশ।এখানেই বিজ্ঞান মনস্ক চিত্তে প্রশ্নের ঝড় ওঠে – কেন এহেন খামখেয়ালী আচরণ দস‍্যু করোনার? এটা একটা বিরাট ধাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্য‍্যবেক্ষকদের সামনে। নানা জল্পনা কল্পনা হচ্ছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবার মত কোনো প্রামাণ্য তথ‍্য এখনও অধরা। এই প্রশ্নের উত্তর বিশ্বের কাছে অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – কে করোনার শত্রু আর কেই বা মিত্র এবং কেন ? গবেষণা চলছে। আপাতদৃষ্টিতে সংক্রমণের পূর্বাবস্থার বিভিন্নতা, জনসংখ্যাধিক‍্যগত বৈশিষ্ট্য ও / বা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বংশগত বৈচিত্র (জেনেটিকাল ), এগুলিই একত্রে বা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে করোনা সংক্রমণের কারণ হওয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।সৌদি আরবের বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে দেখছেন যে জীনগত পার্থক‍্য করোনা সংক্রমণের ব‍্যাপ্তির পার্থক্য সৃষ্টি করে কি না। আবার ব্রাজিলের গবেষকরাও​ অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন ঐ একই বিষয়ে। অনেক দেশের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন সাধারণ ‘হাইপারটেনশন’- রোধী বেশি ব‍্যবহার করে যে জনগোষ্ঠী নানা কারণে, তাদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ব‍্যপকতা অপেক্ষাকৃত বেশি কি না? অন‍্যদিকে, বিসিজি (যক্ষা) টিকা নেওয়া কর্মসূচির অন্তর্গত জনগোষ্ঠীর​ উপর এর প্রকোপ কম, একথা কতটা বিজ্ঞান সম্মত।অনেক উন্নয়নশীল দেশে নবীনতর জনসংখ্যার ওপর এর প্রভাব পড়বে না বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আবার ঊষ্ণ আবহাওয়া করোনা নিরোধক- এরকম মতামতও শোনা গেছে। কিন্তু দুটি তত্ত্বই বিপরীত প্রমাণের কাছে হেরে যায়।
প্রকৃতপক্ষে ব্রাজিল , পেরু বা অন‍্য প্রান্তে ইন্দোনেশিয়ায় অতিমারী গবেষকদের সেই তত্ত্বে সাহায‍্য করেনি। প্রথমে মনে হচ্ছিল যে রাশিয়া বা তুর্কিস্থানে হয়ত বিশেষ আবহাওয়ার কারণে এই রোগ পৌঁছায়নি, কিন্তু হঠাৎ সেখানে এর উপস্থিতি প্রবলরূপ ধারণ করায় আবহাওয়া নির্ভরতার তত্ত্বও ত‍্যাগ করতে হয়।১৯১৮ সালে আমেরিকায় যে ‘স্প‍্যেনিশ ফ্লু’ প্রকাশ পায় তার প্রকোপ গরমের সময় কম থেকে থেকে শরতের আরম্ভেই আরো প্রকট হয়ে ওঠে। এবং পরের বছরই একটি তৃতীয় আক্রমণ দেখা যায়। আলাস্কা ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মত সুদূর স্থানেও তার প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। কাজেই কোভিড২ এর সহসা ইতি হয়ে​ যাবে এটা মনে করার কোনো কারণ না থাকাই স্বাভাবিক।সারা পৃথিবীতে যে ডাক্তাররা ছোঁয়াচে রোগের ওপর গবেষণা করেন, তাদের মতে বর্তমান রোগের পূর্ণ মহামারী চরিত্র যাচাই করার মত অত তথ‍্য নেই এখনও। অন‍্যদিকে বিভিন্ন কারণে প্রকৃত তথ‍্য অনেক ক্ষেত্রেই চাপা পড়ে আছে।এই চারটি স্তম্ভের ওপর ভর করে বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে করোনার এই চরিত্র-বৈচিত্র
বিচার করবেন বলে স্থির করেছেন। করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে হলে, সব লড়াইয়ের মতোই এই কাজটিও অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, কৌতুহলের বিষয় হল এই চারটি ক্ষেত্রেই কিছু কিছু ব‍্যতিক্রমি তথ‍্য বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।প্রথমতঃ, জনসংখ্যা ও তার বয়েসের শ্রেণী বিভাগ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে করোনা আক্রমণের কোনো নির্দিষ্ট পথ নেয় নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ত মনে হয়েছে যে বয়স্করাই এই রোগে বেশী আক্রান্ত। কিন্তু জাপানের উদাহরণ উল্টো প্রমাণ দেখাল। সেখানে জনগঠনে প্রবীনদের আধিক‍্য। কোনো কোনো পর্যবেক্ষণ বলছেন​ যেসব দেশ এর আক্রমণের থেকে কম ক্ষতিহয়েছে, সেসব জায়গায় জনসমষ্টি নবীনতর। আফ্রিকায় দেশগুলোর মোট লোকসংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন, সেখানে চিহ্নিত আক্রান্তের সংখ্যা কমবেশি ৪৫০০০। এটা নবীন-প্রধান জনসংখ্যার দেশ। ৬০% ২৫ বছর বা তার চেয়ে বেশী। আবার, বিপরীতে থাইল‍্যান্ড, ইরাক বা নজফে স্থানীয় স্বাস্থ‍্যপ্রশাসকরা বলেছেন যে সেসব দেশের ২০-২৯ বয়েসের মানুষেরা বেশি সংখ্যায় সংক্রমিত। এর বিপরীতে শীর্ষ সংক্রমিত দেশগুলোর অন‍্যতম ইতালিতে দেখা যাচ্ছে যে আক্রান্তদের বেশীর ভাগই ৪৫ বছরের উপরের। মৃত মানুষদের বয়েসের গড় ৮০। যাই হোক, মোটামুটি গড়নটা বুঝতে পারা যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের ধারণা। এমনকি যেসব জায়গায় অস্বচ্ছ তথ‍্য সংগ্রহ পদ্ধতি, স্বাস্থ্য-প্রশাসনিক ব‍্যর্থতা, এই সব প্রমাণ করোনার অসম ব‍্যাপ্তির কারন বোঝার পক্ষে যথেষ্ট সাহায্য করছে।এইসব যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে এবং বিভিন্ন স্তরের সক্রিয় ব‍্যক্তি বিশেষের সাথে কথা বলে যা আহরণ করা যায় তাতে করোনার ব‍্যপকতার বৈষম‍্যের কারনগুলিকে এইভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে : জনসংখ্যা ও জন বৈচিত্র।
সাংস্কৃতিক গঠনের​ পার্থক্য।প্রাকৃতিক পরিবেশগতপ্রভাব
প্রশাসনিক দক্ষতার তারতম‍্য সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অভ‍্যাসের বৈশিষ্ট্যগুলি যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কোনো কোনো সমাজে স্বাভাবিক ভাবেই বর্তমান। সেখানে এই রোগ প্রভাব ফেলবে কম মনে হতে পারে। এমনটাই বলছেন মহামারীর বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষকরা। ভারত, জাপান,থাইল‍্যান্ড বা দক্ষিণ কোরিয়ায় একে অপরকে অভ‍্যর্থনা করার জন্য পরস্পরের শরীর স্পর্শ না করে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে থাকেন। এই তত্ত্বও বৈপরীত্য- দুষ্ট। পশ্চিম এশিয়ার অনেক অংশেই যেমন ইরাক বা পারস‍্য উপসাগরীয় অঞ্চলে মানুষ জড়িয়ে ধরে বা কোলাকুলি করে ও হাত মিলিয়ে সামাজিক হৃদ‍্যতা প্রকাশ করে থাকে। তবু ঐ সব অঞ্চলে সংক্রমণের ব‍্যপকতা সহনীয়।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যেসব দেশে, যেমন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বা আফ্রিকা সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে বহিরাগত লোক সমাগম কমই থাকে সারা বছর। সেখানে করোনা রোগের প্রকোপ কম। কাজেই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাইরের দেশ থেকে যাতায়াতকারী লোকেরা করোনার বাহক হিসাবে কাজ করে থকতে পারে। এমন একটা মত পর্যবেক্ষণে এসেছে। ভেনেজুয়েলা, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, ইরাক ইত‍্যাদি মূলতঃ মধ‍্য প্রাচ‍্যের দেশগুলো বাইরের ভ্রমণকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। কিন্তু সেইসব দেশগুলোতে সংক্রমণ কোথাও কম, কোথাও ব‍্যপক।জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ রবার্ট বোলিঙ্গার ছোঁয়াচে রোগের ওপর গবেষণা করেন। তিনি বলেন, কমবয়সী মানুষের রোগচিহ্ন কম থাকে বা তাদের সংক্রমণের তীব্রতাও কম থাকে। তাদের বেছে নিয়ে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু, হু এব‍্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। তাদের মতে এই ‘এ‍্যাসিম্পটোমেটিক’ জনগোষ্ঠী করোনা কোভিড-১৯ ছড়ানোর জন্য দায়ী হতে পারে।দ্বিতীয়তঃ​, শুধু জীবন যাপনের শৈলীও বিস্তারের কারণ হিসাবে বলিষ্ঠ নয়। কারন, একদিকে সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবের জীবন যাপনের অংশীদার হয়েও সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ‍্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কম। আক্রান্তদের হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হয় নি। অন‍্যদিকে আমেরিকার গবেষকরা দেখেছেন যে, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস বা স্থূলতা-রোগ ভোগীরা করোনার আক্রমণের শিকার হয়েছে ব‍্যাপক ভাবে। ঠিক তেমনই, ব্রাজিলে আমাজন অঞ্চলের উষ্ণ ‘হিউমিড’ আবহাওয়ায়​ এই সংক্রমণের ব‍্যাপকতা এই তথ্যের বিপরীত।হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কমিউনিকেবল ডিজীজ্ ডায়নামিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডিরেক্টর মার্ক লিপসিচ্ বলছেন যে, খুব সাবধানে বলা যেতে পারে – গ্রীষ্মপ্রধান হওয়া কোনো দেশের পক্ষে করোনা থেকে অব‍্যহতি পাওয়ার শুধু একমাত্র কারন হতে পারে না। কোভিড১৯ ভাইরাস কোনো উত্তাপ প্রবণ জায়গায় তার প্রভাব কমিয়ে ফেলবে এমন তত্ত্বর প্রমাণ পাওয়া যায়নি – এমনই মনে করেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ড. রাউল রাবদান। বরং, গরম ভাবাপন্ন দেশগুলিতে মানুষ বাধ‍্য হয় বেশীরভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতে – এটা এ রোগের ছড়িয়ে পড়ার একটা কারণ হতে পারে। গরম দেশে কড়া রোদ্দুরে রঞ্জন রশ্মি পাওয়া যায়, যা না কি করোনা
ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে – এমন একটা থিওরি নিয়ে অনেকে আলোচনা করছেন। কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজির গবেষকরা এই তত্ত্ব নস‍্যাৎ করে বলেন বলে জানা যায় যে, রোদ্দুরে কোনো মতেই করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধ তৈরি করতে পারে না।এই কারণেই​ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আক্রান্ত রোগীর গায়ে রঞ্জন রশ্মি সম্পন্ন আলোকরশ্মি ফেলে আরোগ‍্য করার তত্ত্ব হালে পানি পায় নি। বরং এই জাতীয় ভ্রান্ত ধারণা মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন ঘটেছে ইক‍্যুডরে বলে খবর। সেখানে অনেক লোক নাকি এই রোদ্দুর-উত্তাপ তত্ত্বে মোহিত হয়ে করোনার শিকার হয়েছেন বলে সেখানকার চিকিৎসক গবেষক ডঃ ডমিনিকা সেভালোস্ মত প্রকাশ করেছেন বলে সংবাদ।তৃতীয়ত, ভৌগোলিক অবস্থান ও তজ্জনিত আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য করোনা প্রসারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অনেক পর্যবেক্ষক মত প্রকাশ করেছেন। ইতালিতে বা আমেরিকার সংক্রমিত এলাকাগুলোতে আবহাওয়া সমভাবাপন্ন। সেইসব​ জায়গায় সংক্রমণ খুবই বেশী লক্ষ‍্য করা যায়। অথচ চাদ বা গায়না সমতুল উত্তাপ প্রবন অঞ্চলগুলোতে আক্রমণ উল্লেখযোগ্য নয়। কাজেই ভৌগোলিক অবস্থান জনিত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রভাবের তত্ত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ ধরা যাচ্ছে না। চতুর্থত, সামাজিক মেলামেশা এই রোগের বিস্তারের অন‍্যতম কারণ বলে সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে অন‍্য ক্ষেত্রে বৈপরীত্যের কারনে। যদিও এই তত্ত্বটিও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নয়। যেমন, নানিয়াঙ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে পরিবারের মানুষকে একটি বদ্ধ জায়গায় আটকে দিয়ে দীর্ঘদিন থাকতে বাধ্য করলে ভাইরাস- সংক্রমণের পুনরাবৃত্তি সম্ভব। কিন্তু, অনন‍্যোপায় অথচ রোগের দ্রুত প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে এই অবস্থায় সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশের প্রশাসকদের​ একটি সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে রোগকে বাঁধ দিতে না পারলে মানুষকেই বিচ্ছিন্ন করে দাও। সেই ‘জুতা আবিস্কারের’ মত মনে হচ্ছে না? – ‘ মাটির মাঝে না যদি পড়ে পা/ তবে তো ধূলা চরণে লাগে না।’অতএব, ‘কঠোর’ লকডাউনই এখনো পর্যন্ত এ রোগ এড়ানোর প্রকৃষ্ট উপায় বলে বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। কৌতুহলের বিষয় তথাকথিত পশ্চাদপদ দেশ বলে অভিহিত আফ্রিকা এই এবং আরও অন‍্যান‍্য দুএকটি দেশ এ ব‍্যাপারে পথপ্রদর্শকের ভুমিকা নিয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের যক্ষা, এইচআইভি, ইবোলা ইত‍্যাদি মারকের সাথে লড়াই তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরিয়েছে।আফ্রিকায় সিয়েরা লিওনের বিমানবন্দরে কর্মীরা অনেক আগে থেকেই যাত্রীদের রীতিমত জ্বর পরীক্ষা করা, মাস্ক ব‍্যবহার করানো, পরিচয় নথি তৈরী করা, ইত‍্যাদি কাজ নিষ্ঠা ভরে করার ব‍্যাপারে অভ‍্যস্ত ছিল। সেটা আমেরিকায় হয় নি। ইউরোপীয় গ্রীস বা এশীয় ভিয়েতনাম প্ৰথম থেকে এই লকডাউনের কঠোর পালন করে যথেষ্ট সুফল পেয়েছে। সেনেগাল বা রোয়ান্ডা তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। আফ্রিকান পপুলেশন সায়েন্স ও হেলথ রিসার্চ সেন্টার-য়ের ডিরেক্টর ক‍্যাথারিন কোবুটুঙ্গি বললেন, ‘আমাদের দেশগুলি হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখল যে শত্রুপক্ষ তাদের ঘিরে ফেলেছে। কাজেই এবার নেমে পড়তে হবে।তাঁরা সেই উদ‍্যোগ কাজে লাগিয়ে সুফল পেয়েছে।’ এক সিয়েরাতেই ইবোলায় ৪০০০ মানুষের মৃত্যু হয়। তাঁরা অতি
দ্রুত করোনার জন্য ১৪০০০ কর্মী নিয়োগ করে, যার মধ্যে ১৫০০ জনের কাজ ছিল রোগী খুঁজে বার করা। সিয়েরায় ‘কনফার্মড্’ রোগী মাত্র ১৫৫ জন। উগান্ডা বাইরে দুবাই থেকে আসা লোকদের চটপট কোয়েরেন্টাইনে পাঠাতে পেরেছে প্রথম কেস থেকে। আরও ৮০০ জনকে তাঁরা দ্রুত চিহ্নিত করে ফেলে যাঁরা পূর্বতন সপ্তাহে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছিল। তানজানিয়া বা কেনিয়া থেকে আসা ১০০০ ট্রাক ড্রাইভারকে তাঁরা পরীক্ষা করে তবে ঢুকতে দিয়েছে, কারণ ঐ দেশ দুটিতে উপযুক্ত গুরূত্ব দিয়ে চিহ্নিতকরণের কাজ সম্পন্ন করা হয় নি বলে জানা যায়।তাই হু বলেছে, ধর্মীয় জমায়েত, রাজনৈতিক সমাবেশ বা খেলার মাঠের​ মত লোকের মেলা কঠোর ভাবে বন্ধ করতে হবে। সঙ্গে কড়া লকডাউন পালন করেই মাত্র এই দস‍্যু করোনার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যেতে পারে। সবশেষে কিন্তু হার্ভার্ড গ্লোবাল হেল্থ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডঃ আশিষ ঝায়ের ব‍্যখ‍্যাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সকলেই। তাঁর মতে ‘এই লড়াইকে একটা বেসবল ম‍্যাচের সঙ্গে তুলনা করে দেখলে আমরা এখনও দ্বিতীয় ইনিংসে আছি। এরকম ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে আরো ন’টা ইনিংসের মধ্যে বাকি পৃথিবীর যাঁরা এখনও হাল্কা আছেন,তাঁরা সব সংক্রমিত দেশগুলোর মত অবস্থায় চলে যাবে না।’ করোনার এই ভুলভুলাইয়া সারা বিশ্বের সমঝদারদের এক দোলাচলে ফেলে দিয়েছে।কেউ এখনও নিশ্চিত নয় এই দুরন্ত ঘুর্ণীর হাত থেকে কোন রাস্তায় কেমন করে রেহাই আসবে।সারা বিশ্বে অন্তত ১০০টি গবেষণাগারে অহর্নিশ গবেষণা চলছে। তাই আজ পর্যন্ত সর্বসম্মত মত, এই বিপন্নতা দীর্ঘস্থায়ী হবার সম্ভাবনা স্পষ্ট। অতএব হাতে রইলো পেন্সিল। এখন শ্লোগান ‘টেস্টিং আর লকডাউন ‘।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।