জেলা

বিহু নৃত্যের গিনেস বুকে জায়গা করে নেওয়া ও কিছু প্রশ্ন।


প্রতিবেদক: মধুমিতা ঘোষ: চিন্তন নিউজ:১৮/০৪/২০২৩:– আসামের বিহু নৃত্যশৈলী বিশ্ব রেকর্ড ছোঁওয়ার পরেই নাগা সম্প্রদায় এর মানুষেরা অপমানিত বোধ করার খবর সামনে এলো।

কিন্তু কেন?

গত ১৩ ই এপ্রিল বিকেল ৫- ৩০ মিনিটে এক যুগান্তকারী ঘটনার সাক্ষী রইল গুয়াহাটি র সারু সাজাই স্টেডিয়াম। প্রায় ১১,৩০৪ জন আসাম শিল্পী নৃত্য – গীত- বাদ্যাদি সহযোগে আসামের এক বিশেষ ধরনের নৃত্য শৈলী ‘ বিহু’ উপস্থাপন করেন। মাত্র ১৫ মিনিটের এই নজরকাড়া, সমবেত বিহু নৃত্যের বৈশিষ্ট্যগুলো পারদর্শিতার সাথে পরিবেশনার জন্যই দু – দুটো বিশ্ব রেকর্ড জয়লাভ করে নিল আসাম। এই সাফল্যে সমগ্র আসাম বাসী ও অসমিয়া ভাষী আনন্দে আত্মহারা হ’লেও, আসামের নাগা সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষেরা এই আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য সঙ্গীতে ব্যবহৃত কয়েকটি শব্দে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন। বিহু সঙ্গীতের অন্যতম একজন পথিকৃৎ রণজিৎ গগৈ লিখিত এই গানের কিছু কথার জন্য নাগা সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষেরা যারপরনাই দুঃখ বোধ করেন। যদিও আসাম সরকারের সাংস্কৃতিক দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এই অনুষ্ঠানটি মঞ্চস্থ হয়েছিল।
সরকারি তরফে বলা হয় যে, এই বিশেষ গানটি ঐতিহ্যবাহী বিহু গান এবং এখানে এমন কিছু শব্দ নেই যা নাগা সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষদের মানসিক ভাবে আঘাত দিতে পারে।

তবে অল আসাম নাগা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকেও আন্তর্জাতিক মানের এইরকম একটি অনুষ্ঠানে নিম্ন মানের ভাষায় সঙ্গীত পরিবেশন এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় । ১৫ ই এপ্রিল সভাপতি শম্পা ওয়াংশু ও সম্পাদক মান্টো বলেন যে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্যে রণজিৎ গগৈ এর এই ধরনের যেমন ‘ ওকোরা নোগা ‘ , ‘ নাগিনী ‘ প্রভৃতি শব্দ প্রয়োগ উচিত হয় নি।
নাগা সম্প্রদায়কে আঘাত করতে পারে এমন পরিবেশনা সর্বতো ভাবে নিন্দার যোগ্য। তাঁরা আরও বলেন যে ” আসামে বসবাসকারী দশটি নাগা সম্প্রদায় ভুক্ত প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের আবেগ অনুভূতি এই গানের জন্য গভীর ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। এদের পাশাপাশি অন্য নাগা সিভিল সোসাইটি বা সংস্থাগুলো, কমিউনিটি ভুক্ত কাউন্সিল এবং তাদের ছাত্র- সংস্থাগুলো এই গান পরিবেশনের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে মত প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন যে, বহু ধর্ম ও সংস্কৃতি র রাজ্য আসামে প্রত্যেক ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ’ ই নিজ নিজ পরিচিতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন।
দশটি দেশীয় নাগা সম্প্রদায়ের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আসামের ১১টি জেলায় প্রাচীন কাল থেকেই বসবাস করছেন।এরা সকলেই গ্রেটার আসামীজ সোসাইটি এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর জন্যে তারা গর্বিত। কিন্ত বেশি র ভাগ সময়ই তাদের সামাজিক ভাবে অনেক অবহেলা ও নানা রকম অসুবিধা র সম্মুখীন হতে হয়।
তিনি আরো বলেন যে তারা দৃঢ়ভাবে এই গান কে সবরকম অনুষ্ঠান থেকে ই নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি তুলছে, এবং এই গানের জন্য শিল্পী কে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছেন। সেটা না হলে আইনের সাহায্য নেওয়ার কথাও বলা হয় ।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।