রাজ্য

সরকারে থাকায় এক লক্ষ কোটি আর বিরোধী থাকলে পি এম টু ডিএম!


সূপর্ণা রায়:চিন্তন নিউজ:৭ই জুন:– কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের ৯ টি জেলা আমফান ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে তছনছ হয়ে যায়।। আর সেই দূর্দিনকে হাতিয়ার করে এক বিচিত্র হিসেব দেখিয়েছে সরকার, এবং তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এক লক্ষ কোটি টাকা চেয়েছেন যেখানে চলতি আর্থিক বছরে রাজ্যের বাজেট আড়াই লক্ষ কোটি টাকা।। এই টাকা দাবি করার সময় তৃনমুল সরকার ক্ষতির একটা হিসেব দিয়েছে।।

এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ভৌতিক ভাবে ২৮ লক্ষ হয়েছে , কৃষি জমির ক্ষতি ১৭ লক্ষ হেক্টর,২১ লক্ষ গবাদি পশুর মৃত্যু, যে রাজ্যে শিল্প নেই সেখানেও ক্ষতি ২৬ হাজার কোটি এবং ১৪ হাজার স্কুলের সঙ্গে ৩০১ টি কলেজের ক্ষতি হয়েছে। তৃনমুল সরকারের একটা বিশেষ বিশেষত্ব হলো তথ্য গোপন করা।। ডেঙ্গু জ্বরের সময় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল অজানা জ্বর মৃত্যুর কারণ। আর এখন এই করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত ভাবে তথ্য গোপন করে মানুষকে এক চরম বিপাকে ফেলেছেন।। এখন রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও তার জেরে মৃত্যুর সংখ্যা।

এখন এই ঘূর্ণিঝড়ের এমন দূর্যোগ গেল কিন্তু সরকারের দেওয়া তথ্য দেখে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ গুলো অবাক হয়ে পড়েছে।। এরকম তথ্য গোপন করে অসহায় সর্বহারা মানুষদের কোন উপকার হবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল।মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে সরকার যখন বলছে যে এই এত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তবে কেন সবাইকে ত্রাণ বিতরণ করা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। খুব স্বাভাবিক ভাবে সরকারের বলা উচিৎ ছিল যে দলমত নির্বিশেষে ত্রানের জন্য সরকারের পাশে দাঁড়াতে।। তা না করে রাজ্যসরকার তাদের পুলিশ ও নেতাপার্টি কর্মীদের দিয়ে বিরোধী দলের ত্রাণ সামগ্রী লুট করেছে এবং নবান্ন থেকে তাঁর সরকারের নির্দেশ এসেছে যে ত্রাণ একমাত্র তৃনমুল দল বিতরন করবেন।। এই প্রসঙ্গে কিছু কথা সবার মনে ঘোরাফেরা করছে।। এক দশক আগে, তখন সরকারে বামফ্রন্ট। মারাত্মক আইলা ঝড়ে সুন্দরবন সহ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মূল শহর সহ সব জেলা ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।। হঠাৎ এই ঝড়ের তাণ্ডবে সরকার এবং মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে।।মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন মুখ্যমন্ত্রী।। অত্যন্ত পারদর্শীতার সঙ্গে সমগ্র সরকার সহ রাজ্যের হাল ধরেন।। সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করে কেন্দ্র এর কাছে এক হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়।। সেবার ও রাজ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত ও সরকারের শীর্ষ আধিকারিক দের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থ ও ত্রাণ সংক্রান্ত বিষয়ে এবং সব দেখেশুনে রাজ্যের অর্থনৈতিক দাবি কে মান্যতা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তখন বিরোধী নেত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জির ভূমিকা সকলের মনে আছে।।

বামফ্রন্ট সরকার চেয়েছিল কোন রাজনীতি নয় বিপদের সময় বরং সবাই একসাথে কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য টাকা দাবি করা। এই নিয়ে মহাকরণে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় । আশ্চর্যজনক ভাবে মমতা ব্যানার্জি এই বৈঠকে উপস্থিত থাকেননি এবং বামফ্রন্ট সরকার যাতে কেন্দ্রের কাছ থেকে টাকা না পায় তার চেষ্টা অবিরাম ভাবে করে গেছেন। তখন তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি আজ ও সবার মনে আছে ,””পিএম টু ডি এম”” মানে সরকার টাকা পাবে না সরাসরি যা দেওয়ার তা ডি এম এর দপ্তরে আসবে এবং সেখান থেকে দূর্গত মানুষ এর কাছে যাবে। ভুলে গেলে হবে না তখন অনেক পঞ্চায়েতের দখল করেছে তৃনমুল।। আর আজ মমতা ব্যানার্জি সরকারে।। দশবছর পর আবার আমফান ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পশ্চিমবঙ্গ। ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি এক লক্ষ কোটি টাকা যে টাকার পরিমাণ শুনে সরকারি আধিকারিকরা পর্যন্ত হতবাক।। অবশ্য দূর্গত মানুষদের জড়িয়ে রাজনীতি করাই তৃনমুল সরকারের নীতি।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।