দেশ বিদেশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ে খাক


রঘুনাথ ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ২৯ আগষ্ট: আজ ১৮ দিন। আমাজনের দাবানলের ব্যাপ্তি ক্রম -বর্ধমান। আমাজন জ্বলা মানে পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ে যাওয়া। বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোর কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এখনো পর্যন্ত বলিভিয়া কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। তারা বিমানবাহিত অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা করেছে বলে খবরে প্রকাশ। কিন্তু আগুন রাশির ব্যাপকতায় তা অরণ্যে রোদন মাত্র। যদিও ঐ ছোট রাষ্ট্রের এই উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য।

দুই পক্ষকালের বেশি সময় ধরে দাবানলের এই মারণযজ্ঞে পৃথিবীর বৃহত্তম বৃষ্টি-অরণ্য (রেইন ফরেস্ট) ও তার আশ্রিত সমস্ত মহামূল্যবান সম্পদ ও বিচিত্র বন্য প্রাণী সমুহ ধ্বংসের পথে। এর ফলে বৈষয়িক ক্ষয়ক্ষতির অনুপুঙ্খ হিসাব এক সময় পাওয়া যাবে, কিন্তু এই মহাদাবানল, যার চরিত্র ও গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে প্রকৃত ধারণা করা বর্তমানে প্রায় অসম্ভব মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, পৃথিবীর বুকে কী বীভৎস ছাপ রেখে যাবে, তা এখনও কল্পনাতীত।

১•৪ বিলিয়ন একর বিস্তৃত এই বৃষ্টি-বন দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশ ছুঁয়ে আছে। পৃথিবীর প্রাণ-বৈচিত্রের ১০% এই অরণ্যে সম্পন্ন হয়। পৃথিবীর অক্সিজেন ভাণ্ডারের ২০% এই অরণ্যের দান। অসংখ্য শাখা ও উপনদী সেবিত ৭০,৫০,০০০ বর্গ কিমি বিস্তৃত পশ্চাৎভূমি বিশিষ্ট ৬.৪০০ কিমি দীর্ঘ এই জলস্রোত প্রত্যহ আটলান্টিক মহাসাগরের ভান্ডারে যে ৫০০
মিলিয়ন ঘনফুট জল সরবরাহ করে যাচ্ছে, তা ১০ মিলিয়ন বৎসর বয়স্ক এই মহা অরণ্যের দান। পূর্ববাহিনী এই মহানদী ও এর কন্ঠলগ্ন এই অরণ্যাঞ্চল পরস্পরের পরিপূরক। এই বনের প্রায় ২০% নষ্ট হয় বন ধ্বংসকারী নানারকম কাজে, তার কিছুটা উদ্ধার করা গেছে বনসৃজন কর্মসূচির সাহায্যে। গবেষকেরা জানিয়েছেন যে, আধুনিক ঔষধ তৈরি করতে যে ওষধি-ভেষজ ব্যবহার করা হয় সারা পৃথিবীতে, তার ২৫% সরবরাহ করে থাকে এই মহা অরণ্য।

নাসার স্যাটেলাইট-সগৃহীত তথ্য বলছে, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির উত্তপ্ত বালুরাশি প্রবল বায়ু-বাহিত হয়ে আমাজন বনাঞ্চলের উপর পড়ে বার্ষিক ২২,০০০ টন হারে। এই বালি ফসফরাস সমৃদ্ধ যা অরণ্যের পুষ্টিসাধন হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ঐ উত্তপ্ত বালুকা রাশি বনস্থলীর আবহাওয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে দেয় না এই মহারণ্য। এই বনস্থলীর অনুপস্থিতির ফলাফল অকল্পনীয়।

সেই বন-দহন চলছে আজ ১৮ দিন। সারা পৃথিবী জুড়ে যে প্রশাসকরা রাজনীতির সাধনায় সময় অতিবাহিত করে সমাজ শাসন করে, তাদের কারো কাছ থেকেই সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচির ঘোষণা শোনা যায় নি। এমনকি প্রবল প্রতাপাণ্বিত যে মিডিয়াবিশ্ব, সেখানেও কোনো বলিষ্ঠ আওয়াজ শোনার সৌভাগ্য হয়নি কারো। বিশিষ্টজনদের দু’একজন ছাড়া প্রকৃতির এই প্রবল আক্রমণ প্রতিহত করতে যে আন্দোলন প্রয়োজন তার কোনো আভাস এখনও অনুপস্থিত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।