দীপশুভ্র সান্যাল: চিন্তন নিউজ: ০৫/০১/২০২৩:- অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে মায়ের মৃতদেহ ঘাড়ে চাপিয়ে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে ক্রান্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের নগরদাঙা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন মৃতার ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ান ও তার বাবা জয়কৃষ্ণ দেওয়ান।বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন এবং করুন এই ঘটনার সাক্ষী থাকলো জলপাইগুড়ি জেলা শহরের বাসিন্দারা।
এ প্রসঙ্গে মৃতার স্বামী জয়কৃষ্ণ দেওয়ান বলেন, বুধবার রাতে তার স্ত্রী লক্ষী রানী দেওয়ান জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শ্বাস কষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃতদেহ আনার জন্য এদিন সকাল থেকেই অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করছিলেন। হাসপাতাল চত্বরে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা মৃতদেহটি ক্রান্তি তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৩ হাজার টাকা দাবি করে বসেন। তিনি ১৫০০ টাকা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কেউই ওই টাকায় মৃতদেহ টি ৩০ কিমি দূরে থাকা ক্রান্তি তে পৌঁছে দিতে রাজি হননি। তারপর তারা বিষয়টি হাসপাতাল কতৃপক্ষকে জানালে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়ার কোনও রকম ব্যবস্থা নেই বলে জানান জয়কৃষ্ণ বাবু। সবাইকে অনেক কাকুতি মিনতি করার পরেও মৃতদেহটি আনার জন্য অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে তার ছেলে এবং তিনি মিলে মৃতদেহটি ঘাড়ে চাপিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। প্রায় ১কিমি রাস্তা অতিক্রম করার পর গ্রীন জলপাইগুড়ি নামে একটি স্বেছাসেবী সংস্থা অ্যাম্বুলেন্স এ করে মৃতদেহটি ক্রান্তি তে পৌঁছে দিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
যদিও জলপাইগুড়ির নির্মীয়মান মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডাক্তার কল্যান খাঁ জানান গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর কারণে এমবুলেন্স পেতে অসুবিধা হয়ে থাকতে পারে কিন্তু বেশিরভাগ রোগী রোগী সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমেএই পরিষেবা পেয়ে থাকেন। হাসপাতালের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার সাথে যুক্ত প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স এর বিষয়ে তিনি বলেন মৃতদেহ নিয়ে যেতে ৩০০০ টাকা চাওয়াটা সত্যিই অমানবিক। যেখানে আসার সময় রোগীর পরিবার রোগীকে মাত্র ৯০০ টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়ে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে এনে ভর্তি করেছিল। যদিও বিষয়টি ঘুরিয়ে তিনি জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর এর বিষয় বলে দাবি করেন। তাদের মত অসহায় পরিবারের কেউ মারা গেলে মৃতদেহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে না কেন প্রশাসনের কাছে সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি ও তার ছেলে। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা পরিষেবার নামে কার্যত দিনে দুপুরে ডাকাতি ও দাদাগিরি করছে প্রশাসন সবকিছু জেনে শুনেও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা। তাদের মত আর যাতে কেউ মৃতদেহ নিয়ে হয়রানির শিকার না হন সেই প্রশাসনের কাছে সেই আবেদন জানান তারা।
এ বিষয়ে ” গ্রীন জলপাইগুড়ি” সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অঙ্কুর দাস বলেন, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স অ্যাসোসিয়েশন বাইরের অ্যাম্বুলেন্স চালকদের হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে দেয় না। প্রশাসনের নাকের ডগায় ওখানে ওরা দাদাগিরি করছে। চাহিদামতো টাকা না দিলে ওরা এদের মত সাধারণ মানুষদের পরিষেবা দেওয়ার পরিবর্তে চরম হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের কাজ করে চলেছেন ,কিন্তু তাদের কাজে বাধ সাধছে হাসপাতাল চত্বরে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বলে জানান তিনি। এসবকিছু বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন তারা।এদিকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কতৃপক্ষের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বাবা ও ছেলের মৃতদেহ কাঁধে প্রায় এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার সময় তাদের ছবি তুলতে বহু মানুষকে দেখা গেল কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ পরিবারের।
প্রাইভেট এম্বুলেন্স চালক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ জানান তারা ময়নাগুড়ি ট্রেন এক্সিডেন্ট সহ বিভিন্ন সময় এমার্জেন্সি বিষয়ে ফ্রী পরিষেবা দিয়ে থাকেন লক্ষ্মী রানী দেওয়ান এর মৃতদেহটি
ক্রান্তি পৌঁছে দিতে তারা ২০০০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা ১২০০ টাকার বেশি দিতে পারবেন না বলে জানালে তারা বলেন আপনাদের আরো কিছুক্ষণ সময় দেরি আছে আপনারা অর্থের ব্যবস্থা করুন। এরপর তাদের নিজেদের গাড়ি আছে বলে তারা মৃতদেহ কাঁধে করে রওনা দেন কিছুটা দূরে গ্রিন জলপাইগুড়ির অ্যাম্বুলেন্সের তারা উঠে ক্রান্তি যান। এক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যভাবে দেখিয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকদের বদনাম করার উদ্দেশ্যে গ্রীন জলপাইগুড়ি ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ এম্বুলেন্স ইউনিয়নের। যদিও মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি পৌছে দেওয়ার কোন সরকারি ব্যবস্থা নেই বলে জানান তারা।
নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি,৫ই জানুয়ারি:-
প্রয়াত হলেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির অন্যতম নেত্রী শিপ্রা শিকদার। তিনি ছিলেন এবিপিটিএ এর প্রাক্তন জেলা সম্পাদক প্রয়াত কমরেড বীরেশ সিকদারের স্ত্রী। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্য জনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন, করোনা কালীন সময়ে তিনি দুইবার কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন।সোমবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। কর্মজীবনে তিনি মোহন্ত পাড়া প্রাথমিক আর আর বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। মহিলা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৮২ সালে তিনি পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জলপাইগুড়ি জেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ। কমরেড শিপ্রা সরকারের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাড়িতে ছুটে যান প্রাথমিক শিক্ষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন শিক্ষক নেতা জ্যোতি বিকাশ কর, সুব্রত ভট্টাচার্য,পার্টি নেতা জয়দীপ মুখার্জী, দীপশুভ্র সান্যাল সহ অন্যান্যরা। কমরেড শিপ্রা শিকদারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এ বি পি টি এর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝা,পার্টির সদর-পশ্চিম এরিয়া কমিটির সম্পাদক তপন গাঙ্গুলী, মহিলা নেত্রী মিনতি সেন, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদিকা রিনা সরকার সহ অন্যান্য মহিলা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।