রঞ্জন মুখার্জি: চিন্তন নিউজ:১৩ই এপ্রিল:- ভারতের যে পরাধীনতার কাল ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ব্রিটিশ উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামে সাধারণ মানুষের সংগঠিত ভূমিকাকে সংক্ষেপে উপস্থাপিত করা, এটাই হচ্ছে এই ধারাবাহিক লেখার অনুপ্রেরণা। উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামের অগ্নিগর্ভ দিনগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত প্রতিবাদী মানুষের অবর্ণনীয় কিছু ভূমিকার কথা এখানে ধারাবাহিকভাবে উঠে আসবে । আজ ১৩ ই এপ্রিল সেরকমই একটি স্মরণীয় দিন।
ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন যখন তীব্র হয়ে উঠছে ঠিক সেই সময় জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে মত-পথের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ সরকার ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে দমন করতে রাওলাট আইন পাস করেছিল । সেই রাওলাট আইনের প্রতিবাদে কংগ্রেসের নেতৃত্বে শুরু হয় সত্যাগ্রহ আন্দোলন । ১৯১৯ সালের ৬ ই এপ্রিল সারা ভারতে হরতাল ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এই হরতাল ও বিক্ষোভে ব্যাপক ভাবে সামিল হোয়েছিলো পাঞ্জাবে। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের জনগণের প্রতিবাদ বিস্ফোরণের পর্যায়ে পৌঁছায় । তার কারণও ছিল।একটা প্রধান কারণ , যুদ্ধের সময় পাঞ্জাব থেকে বহু যুবককে সৈন্যবাহিনীতে নেওয়া হয়েছিল জোর করে। আর দ্বিতীয় কারণ পাঞ্জাবের ক্ষুদ্র শিল্পের অবস্থা বৃহৎ শিল্পের চাপে ওই সময় দ্রুত খারাপের দিকে চলে যায়। পাঞ্জাবের দিকে দিকে গণবিক্ষোভ দেখা দিতে শুরু করলো। আর এই গণবিক্ষোভ কে দমনের জন্যই ১৯১৯ সালের ১৩ ই এপ্রিল ঘটলো জালিয়ানওয়ালাবাগের রক্তাক্ত বিভীষিকাময় হত্যাকাণ্ড।
অমৃতসরে প্রাচীরঘেরা জালিয়ানওয়ালাবাগ নামে একটি বাগানে ঐদিন চলছিল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ওই বাগান ছিল পুরোপুরি জনতায় ভরা। প্রতিরোধ স্পৃহায় গভর্নর মাইকেল ও ডায়ার ওই বাগানের একটি মাত্র সরু প্রবেশ দ্বারে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করে এবং অবিরাম গুলি চালাতে নির্দেশ দেয়। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই হতাহতের সংখ্যা দাঁড়ায় আড়াই হাজারেরও বেশি। যদিও পরে একটি কমিশনের সামনে মাইকেল ও ডায়ার সাফাই দেন যে জনৈকা ইংরেজ নারী ওই গার্ডেনে সেদিন নিগৃহীত হয়েছিলেন।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সংবাদ ব্রিটিশ সরকার সামরিক আইন জারি করে প্রচার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু লাহোর ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদক কালিনাথ রায় ও বোম্বের সম্পাদক বি জি হর্নি ম্যান এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিশ্ববাসীকে এই বর্বর নৃশংসতার কথা জানিয়ে দেন ।
এই সংবাদ জানার পর রবীন্দ্রনাথ তাঁর ক্ষোভ ও মর্মবেদনা প্রকাশ করে ভাইসরয় কে একটি ঐতিহাসিক চিঠি লিখেছিলেন এবং তার সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইট খেতাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের চিঠিতে ছিল ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ধিক্কার। সারাদেশের হয়ে কবির এই প্রতিবাদ জাতীয় চেতনাকে শাণিত করেছিল। কবির চিঠির ভাষা শক্তি জোগালো অপমানিত ভারতবাসীর মনে। এই ঘটনায় ভারতের মুক্তি সংগ্রাম এক নতুন বাঁক নিলো। গণজাগরণ আর শ্রমিক কৃষক সংগঠনের ঐক্য বিস্তৃতি ঘটলো যা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।