চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:৬ই আগস্ট:- পেরিয়ে যাচ্ছে ৭৫ বছর, হিরোসিমা আর নাগাসাকি হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। এতো ঘৃণ্য, নির্লজ্জ, হিংস্রতা এর আগে সমগ্র বিশ্ব কখনও প্রত্যক্ষ করেনি। মূহুর্ত্তের মধ্যে ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয় দুটি প্রাণবন্ত জনপদ। লাখো মানুষের মৃত্যুর অমানবিক উল্লাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গ্রাম থেকে শহর। যাঁরা বেঁচে রইলেন তাঁরা বহন করে চলেছেন সেই তেজস্ক্রিয়তার অভিশাপ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
হিরোসিমা, নাগাসাকির বাতাসে এখনও মেলে তেজস্ক্রিয়তা। বিধ্বস্ত শহরদুটি নিজেদের নতুন করে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে হিরোসিমা এই ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপ থেকে কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ওখানে এখন অনেক সবুজ। এটা এখন শান্তির শহর, অপেক্ষাকৃত আত্মবিশ্বাসী। অন্যদিকে নাগাসাকি শহরটিতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিষ্ফোরণের ক্ষতচিহ্ন। নেই পশুপাখি, প্রকৃতিও হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক ছন্দ। তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব থাকার কারণে বাতাস ও মাটি এখনও দূষিত, রয়েছে ক্যানসারের ঝুঁকি, ফলে এটা প্রায় জনহীন শহর।
‘হিবাকুসা’ একটি জাপানি শব্দ, এর অর্থ বিষ্ফোরণে আক্রান্ত মানুষজন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিভৎস হিংস্র হত্যলীলার ক্ষতচিহ্ন এঁরা বহন করে চলেছে বংশপরম্পরায়। বিষ্ফোরণের দু’সপ্তাহের মধ্যে যারা ঐ শহর দুটির দু’ কিলোমিটার এর মধ্যে ছিলেন, বিশেষত গর্ভবতী মহিলারা, তাদের মধ্যে তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব সবচেয়ে বেশী। এই হিবাকুসারা এখনও সরকারি সাহায্যের আওতায়। এঁদের মধ্যে মিলেছে জেনেটিক অসুস্থতার প্রমাণ।
বোমা বিষ্ফোরনের পরে থেমে যায় বিশ্বযুদ্ধ। আত্মসমর্পণ করে জাপান। কিন্তু এর থেকেও একটা চরম সত্য থেকে সে দেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা অনেক কাল ধরে সেখানকার মানুষদের বুঝিয়ে আসছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্যে জাপানের উপর বোমার হামলা জরুরি ছিল। নিজেদের ভাবমূর্তিকে পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্দেশ্যেই এই মিথ্যাচার। কোকো ওগুরা, যিনি ছিলেন বোমা বিষ্ফোরণের সারভাইভার, তিনি আমেরিকা গিয়ে জানতে পারেন এই গোপন সত্য। এই অসত্য ভাষণের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। নিজের স্বচক্ষে দেখা অভিজ্ঞতা তিনি ছড়িয়ে দিতে থাকেন এখানকার মানুষের মধ্যে। তারা জানতে পারেন পারমাণবিক হামলা সম্বন্ধে তাদের ভূল ধারণা। তাঁদের বোঝানো হয়ছিল জাপানিদের বাঁচাতেই এই হামলা করা হয়েছিল, না হলে আরও প্রণহানি ঘটতো। সংবাদপত্র, গণমাধ্যম থেকে সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছিল তথ্যচিত্র, ছবি , নথিপত্র ইত্যাদি। তথ্য গোপন, মার্কিন সভ্যতার এই কুৎসিত রূপ বড়ই ভয়ংকর। অস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বেজুড়ে তার বাজারের খোঁজ ও প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কুৎসিত ও আগ্রাসী নীতি এই দুইয়ের মিলিত ফলই ডেকে আনছে পৃথিবী জুড়েই মানব সভ্যতা ধ্বংসের কদর্য রূপ।