দেশ

হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন।


চিন্তন নিউজ:৩রা জুন,২০১৯: মাধবী ঘোষ:— ভারতে হিন্দি দিবস সমারোহ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ ও ক্যাবিনেট মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
ভারতে নতুন এক শিল্পনীতি সব স্কুলে হিন্দি কে তৃতীয় ভাষা হিসেবে চালু করতে সুপারিশ করার জন্য এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে প্রায় সব রাজনৈতিক দল বলছে তারা সর্বশক্তিতে এই প্রস্তাব রুখবে। আর অন্যদিকে সেখানে সোশ্যাল মিডিয়াতেও দারুন ভাবে ট্রেন্ড করছে ”হ্যাশট্যাগ স্পট হিন্দিইম্পেজিশন ”, অর্থাৎ’ হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া ঠেকাও’।এই বাধার মুখে কেন্দ্রীয় সরকার ও এখন সাফাই দিচ্ছে যে মানুষের মতামত না নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

বস্তুত হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে ভারত বিভক্তির ইতিহাস অনেক পুরনো, এখন সেই বিতর্ক আবার নতুন আকারে মাথাচাড়া দিচ্ছে।,

নতুন এই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে যে প্যানেল তার প্রধান কে কস্তুরী রঙ্গন।
ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার ঠিক পরদিনই সরকারের কাছে জমা পড়ে নতুন একটি শিক্ষানীতির যা প্রস্তুত করছে দেশের নামী মহাকাশ বিজ্ঞানী কস্তুরী রঙ্গন এর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল।

ওই খসড়া জাতীয় শিক্ষানীতি 2019 এ বলা হয়, বিগত 50 বছর ধরে ভারতের স্কুলগুলোতে যে'” তিন ভাষা ফর্মুলা “চালু আছে সেটা শুধু বহাল রাখায় যথেষ্ট নয়__তা এখন বাচ্চাদের জন্য আরো অনেক কম বয়সে চালু করা দরকার।

হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস আছে তামিলনাড়ুর দল ডি –
এম কে- র।

তামিলনাড়ুর ডি এম কে নেত্রী ও এম পি কানিমোজি তাদের শীর্ষ স্থানীয় নেত্রী ও এমপি কানিমোজি বিবিসিকে বলেছিলেন, “এভাবে ঘুরপথে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আমরা কিছুতেই মানবো না।”

“হিন্দি ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনে আমাদের দল আদালতে যেতেও প্রস্তুত,” জানাচ্ছেন তিনি ।

কানিমোজির বাবা প্রবাদপ্রতিম তামিল রাজনীতিবিদ এম করুণানিধি নিজেই ছিলেন তামিলনাড়ুতে হিন্দি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।

ডি এম কে র সেই অবস্থান আজও যেমন অপরিবর্তিত, তেমনই কামাল হাসান, ভাইকো, রামো দাসের মত তামিলনাড়ুর অন্য রাজনীতিবিদরাও নতুন করে হিন্দির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।

এমন কি তামিলনাড়ুতে ক্ষমতাশীল দল আইডিএম কে বিজেপির শরিক, কিন্তু তাদের শিক্ষা মন্ত্রী ও জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্র যাই বলুক, তারা রাজ্যে দুই ভাষা ফর্মুলায় জারি রাখবেন-অর্থাৎ বাচ্চাদের শুধু তামিল ও ইংরেজি শেখাবেন।

কিন্তু কেন ডাকছি নাতে হিন্দির বিরোধিতা এত তীব্র?
কেরালার রাজনীতিবিদ ও তিরুবনন্তপুরম থেকে টানা তিনবার জিতে আসা কংগ্রেস এমপি শশী থারুরের ব্যাখ্যা হলো ,”ভারতের মতো বহুভাষী একটা দেশে একটাই জাতীয় ভাষা বা রাষ্ট্রভাষা চালু করার সুবিধা যেমন আছে, দামন বিপদ কিন্তু আছে।”

“উত্তর ভারতে যে শুক্লা, সিং, শর্মারা জন্ম থেকে হিন্দি শিখে বড় হয়েছেন তারা যখন দেখেন তাদের পছন্দের ভাষায় প্রশাসনিক কাজে, অফিস আদালতে জাতীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে তখন তারা ভীষণ খুশি হতে পারেন।”

কেরালা থেকে নির্বাচিত এম পি ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শশী থারুর।

“কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেই মুহূর্তেই দক্ষিণ ভারতের সুব্রামানিয়াম, রেড্ডি বা মেনন, যারা কখনো হিন্দি শেখেনি তাদের আপনি দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে দিচ্ছেন।”

“ফলে ঐক্যের বদলে যখনই আপনি ইউনিফর্মিটি বা একই ধরনের জিনিসের বেশি গুরুত্ব দেবেন, ভারত কেউ কিন্তু তখনই ধ্বংস করে ফেলবে!”বিবিসি বাংলা কে বলছিলেন মিস্টার থারুর।

বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা বিজেপিকে বহুদিন পর্যন্ত শুধু হিন্দি বলয়ের দল হিসেবে দেখা হয়ে এসেছে, “একটা সময় তাদের শ্লোগান ও ছিল হিন্দিহিন্দুহিন্দুস্তান “।

তাদের নতুন মেয়াদে শুরুতেই মাথাচাড়া দেওয়া এই হিন্দি বিতর্ককে মোদি সরকার অবশ্য দ্রুত চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।৫৪ বছর আগে হিন্দি বিরোধিতা হিন্দি বিরোধী দাঙ্গায় তামিলনাড়ুতে প্রায় ৭০ জন নিহত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু কথা দিয়েছিলেন, হিন্দি ভাষী নয় এমন কোন রাজ্যে জোর করে হিন্দি চাপানো হবে না।কিন্তু এখন বিজেপি জমানায় কেন্দ্র সেই প্রতিশ্রুতি আদৌ রাখবে কিনা, দক্ষিণের রাজ্য গুলো কিন্তু সেই সংশয় ভুগতে শুরু করেছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।