প্রতিবেদক : কল্পনা গুপ্ত:চিন্তন নিউজ: ১২/০৩/২০২৩:- প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে ভাবনা চিন্তা কখনও থেমে থাকে নি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশগুলোতে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে লেগে যায় বহু বছর। এই দীর্ঘসূত্রিতার ফলে পরিবেশ অনেকটাই বিপন্ন হয়ে পড়ে। এইরকমই সমস্ত সাগর মহাসাগর সংরক্ষণ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক চুক্তিকে স্বীকৃতি দিলো জাতিসংঘ গত ৫ ই মার্চ ২০২৩ এ।
কি আছে এই চুক্তি পত্রে? ২০৩০ সালের মধ্যে সাগর মহাসাগরের ৩০% এলাকা সংরক্ষিত করা হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য। গত ৪ঠা মার্চ, ২০২৩ সম্মেলনের সভাপতি রেনা লি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ” হাইসিজ ট্রিটি” নামে চুক্তিটির স্বীকৃতি দেন দীর্ঘ আলোচনার পর। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিন পিসের এডভাইসার লরা মেলার বলেন, প্রকৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই দিনটি ঐতিহাসিক। চুক্তিটি আইনজীবীরা দেখবেন।লরা আরো বলেন দু’সপ্তাহ ব্যাপী আলোচনার পর যে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে তার মূল কাঠামোর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা যাবে না। এরপরে জাতিসংঘের ৬ টি জাতীয় ভাষায় অনুবাদ করার পরে চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হবে।
প্রায় ৪০ বছর আগে ১৯৮২ সালে ইউ এন কনভেনশন অন দ্য ল অফ দি সি তে চুক্তি হয়েছিলো ১.২% সুরক্ষিত করার জন্য। পৃথিবীর ধারাবাহিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে জলবায়ু, সমুদ্র, উদ্ভিদ ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে। ফলে সব স্থানের বাস্তুতন্ত্রের মত সামুদ্রিক বাস্ততন্ত্রও বিপন্ন। এছাড়াও অতিরিক্ত মাছধরা, জাহাজ চলাচল ইত্যাদির কারণে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীরা ১০% বিলুপ্ত হওয়ার মুখে। সমুদ্রে মাছধরা, গভীর সমুদ্রে খননসহ জাহাজ চলাচলের পথ নির্ধারণ, সমুদ্র সীমা, জিনগত সম্পদ ভাগাভাগি ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রিত হবে।
বিশ্বের ধনী দেশগুলির পক্ষে সমুদ্র গবেষণা ও সম্পদ সন্ধান করার আর্থিক ক্ষমতা আছে। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলির ক্ষেত্রে সমুদ্র থেকে আহরণ নির্ভর অর্থনৈতিক কাজকর্ম ব্যাহত হবার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এই চুক্তি সমুদ্রের সম্পদ ও জীববৈচিত্রের সংরক্ষণের কাজ থেকে সরে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শোষণের এক হাতিয়ার হয়ে ওঠে কিনা সেটা একটা ভাবনার বিষয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির কাছে। যদিও লিজ কারান বলেছেন, চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার আগে দেশগুলির অনুসমর্থন দরকার এবং এর সাথে সাথে গড়ে তুলতে হবে বিজ্ঞান ও কারিগরি পরিকাঠামো।
পরিশেষে বলা ভালো যে চুক্তির উদ্দেশ্যের যথাযথ প্রয়োগে বিশ্বের পরিবেশ সুরক্ষিত হোক, কোনও ভাবেই এই চুক্তি যেন ধনী দেশগুলির শোষণের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে সে বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলিরও সজাগ থাকা জরুরী।