দেশ

বায়ু দূষণে প্রতিবছর দেশে মৃত্যু ১২ লক্ষের


মাধবী ঘোষ, চিন্তন নিউজ, ৫ জুন: বায়ু জল যানবাহন ইত্যাদি মিলিয়ে সামগ্রিক  দূষণ মানচিত্রে ভারতের স্থান ঠিক কোথায় ? গতবছর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম চলাকালীন আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বিশ্বের ১৮০ টি দেশের মধ্যে দূষণ তালিকায় ১৭৭ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছিল ভারত। আর ‘স্টেট অফ গ্লোবাল এয়ার ২০১৯’ এর রিপোর্টে জানাচ্ছে, বায়ু দূষণের প্রভাবে প্রতিবছর ভারতে প্রাণহানি ঘটছে ১২ লক্ষ মানুষের।
পরিবেশবিদদের একাংশ বলেছেন, দেশের পরিবেশের কি অবস্থা, এইসব তথ্যেই  তা স্পষ্ট ।
এদেশে উত্তরোত্তর প্রকোপ বাড়ছে বায়ু দূষণের। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-এর তথ্য বলছে, সোমবার দিল্লির বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। তবে কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, মুম্বাইয়ের বাতাসে ধূলিকণা কম ধরা পড়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, কলকাতা সহ বাকি তিনটি শহরে বৃষ্টি হওয়ায় ধূলিকণা কমেছে।
৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। এ বছরের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জও থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে বায়ু দূষণকে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন শহরে বায়ু দূষণের অবস্থা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠছে। অনেকেরই প্রশ্ন, দ্বিতীয় মোদি সরকার কি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে ? প্রতিবছর দিল্লিই সব থেকে বেশি দূষণের কবলে পড়ে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন কলকাতা।
গত মাসের শেষে পাঁচ বছরে (২০১৪ থেকে ২০১৯) দূষণ নিয়ন্ত্রণের ‘সাফল্য’ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক। সেই রিপোর্টে বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে ‘সাফল্য’ নিয়ে মন্ত্রকের দাবি খুব একটা উল্লেখযোগ্য নয় বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।
কেন্দ্রীয় রিপোর্টে বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দেশের ৭৩ টি শহরের ২৪ ঘন্টা বাতাসের গুণমান পরীক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে ১৩৭ টি মনিটরিং স্টেশন। উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ায় দিল্লিতে বায়ু দূষণের মাত্রা ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে অনেকটাই কমেছে। যদিও পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, শুধু সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে বায়ু দূষণের মাপকাঠি বিচার করলে হবে না।
বায়ু দূষণের নিরিখে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি স্বীকার করে নিতে হবে। নইলে ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ কে ‘মিশন’ হিসেবে গ্রহণ করলেও সার্থক হবে না। দিল্লির পরিবেশ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর সাইন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট (সি এস ই) এর  এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা চৌধুরী বলেছেন, “এখন আর শুধু নীতি গ্রহণ করলেই হবে না। কারণ সেই পর্যায়ে আমরা পেরিয়ে এসেছি। আমাদের এখন বায়ু দূষণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।”
বায়ু দূষণ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট দেখিয়েছে, দেশের ৭৬.৮ শতাংশ মানুষই দূষিত বাতাসের শ্বাস নিতে বাধ্য হন! কারণ বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা নিরিখে দেশের ১০২ টি  শহরের বায়ু দূষণের মাত্রা ধারাবাহিকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে । ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানাচ্ছে ‘হাউজহোল্ড এয়ার পলিউশন’এ বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখন্ড ও উত্তর প্রদেশ এগিয়ে। ঘরের বাইরের বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে রয়েছে হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ। নগরায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বায়ু দূষণের পরিধি।
শুধু ভাসমান ধূলিকণা ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণায় নয়, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এর মাত্রা ও বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে। সি এস ই এর রিপোর্ট বলছে দেশে ১৯৫১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোটরযান নথিভূক্ত সাতশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারমধ্যে প্রথম ছয় দশকের, অর্থাৎ ২০০৮ সাল পর্যন্ত জানের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৫৩ লক্ষ। তারপরের ৮ বছরে অত অল্প সময়ে আরো সাড়ে ১১ কোটি যান নথিভুক্ত হয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই যাকে বলে যান বিস্ফোরণ! যে যান বিস্ফোরণের থেকে বাদ পড়েনি কোন শহরই।
বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতির মাত্রা অনুযায়ী সংকটজনক স্তরে রয়েছে দিল্লি, হাওড়া, পুনে সহ বিভিন্ন শহর। আবার কানপুর, কলকাতা, মেরঠ, ঠানের বাতাসে উড়ছে গাড়ি ধোঁয়ার বিপদ! পরিবেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “রাজ্যগুলিকে সতর্ক হতে হবে। কেন্দ্রের তরফে দূষণ নিয়ন্ত্রণের একটা নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।”


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।