দেশ

পরিযায়ীর দিনলিপি।


কাকলি চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ:১১ই এপ্রিল:- লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি, দেশে করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা, রাজ্যে করোনায় মৃত্যু কমিয়ে দেখানো, বাজারগুলোতে ভীড়, কিছু মানুষের অনাবশ্যক পণ্য মজুত করে রাখা, রেশন নিয়ে তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি এসব নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। সরকারি তথ্যের পাশাপাশি অভিজ্ঞতার নিরিখে উঠে আসছে অন্য চিত্র।

ভারতবর্ষের শ্রমিকশ্রেণীর এক বিশাল অংশ পরিযায়ী শ্রমিক। যাঁরা নিজের জেলা, রাজ্যে কাজের অভাবে অন্য জেলা বা ভিনরাজ্যে ভীড় জমায়। আবার চুক্তির ভিত্তিতে বিদেশেও যান কোনো এজেন্সি মারফত। সরকারি কোনো তথ্য আদৌ আছে কি যে ভিনরাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কত? লকডাউন ঘোষণার সময় এই শ্রমিকদের নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা ছিল না সরকারের, কোনো পরিকল্পনাই গ্ৰহণ করেনি অবিবেচক সরকার।

২০১৬ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে এই শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। এখন হয়তো সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। যে রাজ্যে আর্থিক উন্নয়নের হার কম সেই রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। যেমন উত্তরপ্রদেশ, বিহার প্রভৃতি রাজ্য। আবার পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যে জেলাগুলো আর্থিকভাবে পিছিয়ে আছে যেমন মুর্শিদাবাদ, মালদা, পুরুলিয়া প্রভৃতি জেলা থেকে একঝাঁক পরিযায়ী শ্রমিক পাড়ি দিয়েছেন ভিনরাজ্যে কাজের আশায়। আবার এই পরিযায়ী শ্রমিকের ৩০%হল ঠিকাশ্রমিক। ৩০% এর প্রতিদিনের কাজ থাকলেও তাঁরা অস্থায়ী। এর মত সরকারি ক্ষেত্রেও ঠিকা শ্রমিকদের বেতন যেখানে অনিশ্চিত, ১০ মাসের ও বেশি বেতনহীন অবস্থায় আছেন, কাজের নিরাপত্তা তো নেই ই সেখানে বেসরকারি ক্ষেত্রের দুর্বিসহ অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এছাড়া রিক্সাচালক, সবজি বিক্রেতা, হকার , ট্যাক্সি, ছোট দোকানদার এরকম নানা পেশার মানুষ আছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের মাসিক পারিবারিক আয় সর্বনিম্ন ২০০০টাকা ও সর্বোচ্চ ২০০০০ টাকা। খোদ রাজধানীর বুকে দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ২০% এর পারিবারিক আয় ১০০০০ এর ও কম।‌ জীবিকা ও দিনশেষের আশ্রয় থেকে উৎখাত হয়ে‌ কার্যত এরা রাস্তায়।

করোনা মোকাবিলায় ভারতে আরও ৪০ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যেতে পারেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরাই মূলতঃ ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছেন। চলতি লকডাউনে তাঁদের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।কাজ হারাতে বাধ্য হয়েছেন নিজের জেলায় বা নিজের রাজ্যে, আবার কেউ বা আটকে আছেন পড়শী রাজ্যে। এঁদের মধ্যে অনেকেই কাজ আর ফিরে নাও পেতে পারেন। মার্চ- এপ্রিলের মধ্যেই কাজ হারিয়েছেন ১২ কোটি ভারতীয়।

বেকারি মানেই দারিদ্রতা বৃদ্ধি। জি ডি পি ৫% এ নেমে এসেছিল আগেই, এখন সেটা দেড় শতাংশে নেমে আসতে চলেছে। কর্পোরেট প্রভাবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য সরকারি নীতি নির্ধারণ আগেই শিকেয় উঠেছিল এখন আরও গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে চলেছে অর্থনীতি। দেশের বিপুল অংশর শ্রমজীবি মানুষকে বাঁচাতে হলে সরকারকে দ্রুত নীতির অভিমুখ পরিবর্তন করতে হবে। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এখন কী করেন সেটাই দেখার!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।