মল্লিকা গাঙ্গুলী:চিন্তন নিউজ:১১ই জানুয়ারি:- কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কৃষক বিরোধী তিনটি কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের কৃষক সমাজ কয়েক মাস আগেই বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর বিক্ষোভের রূপ নেয়। দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, চন্ডীগড় আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকা নিলেও সমস্ত ভারতবাসী কৃষকের পক্ষে। বিক্ষোভকারী চাষিদের রোষে রবিবারই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনহরলাল খট্টরের মঞ্চ ভাঙচুর হয়। এই দিনই পাঞ্জাবের অমরেন্দ্র সিং নামে আরও এক কৃষক আত্মহত্যা করলে আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা দাঁড়ায় চারজন।
একদিকে সরকারের অনমনীয় মনোভাব যেমন কৃষক দের জেদ বাড়িয়ে দিচ্ছে , অপর দিকে তেমনই একের পর এক চাষির আত্মহত্যা সরকারের ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্ত এই অবস্থার মধ্যেই বিজেপি সরকারের মদতে বিজেপি শাসিত কর্ণাটক রাজ্যে দেশের প্রথম চুক্তি চাষ শুরু হয়ে গেল। রিলায়েন্স কোম্পানিই দেশে প্রথম কর্ণাটক রাজ্যে চুক্তি চাষ শুরু করলো।
গত সপ্তাহেই পাঞ্জাব-হরিয়ানা উচ্চ আদালতে রিলায়েন্স কোম্পানি হলফনামা দিয়ে বলে- রিলায়েন্স চাষিদের দিয়ে চুক্তি চাষ করায় না। রিলায়েন্স চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি চাল, ডাল কেনে না। সরবরাহ কারি সংস্থার থেকেই কেনে। অথচ “স্বাস্থ্য ফার্মার্স প্রোডিউশিং কোম্পানি” নামে এক সংস্থা মারফত রিলায়েন্স এক হাজার কুইন্টাল সোনা মাসুড়ি নামের এক উচ্চমানের চাল কেনার চুক্তি করে। সংস্থার বকলমে রিলায়েন্সের এই চুক্তিতে কর্নাটকের এগারোশো কৃষক স্বাক্ষর করে। তাদের বক্তব্য, তারা কুইন্টাল প্রতি ৮২ টাকা দাম বেশি পাচ্ছে।
কৃষক সভার নেতারা এই চুক্তিকে দ্বিচারিতা বলে বিরোধিতা করে। কৃষক নেতা কৃষ্ণ প্রসাদ কটাক্ষ করে বলেন, আম্বানী, আদানীদের ফায়দার জন্যই সরকার এই কৃষি আইন এনেছে। আর তাই তারা রিলায়েন্স সংস্থার পরিষেবা ও পণ্য বয়কট করেছে।
বলা বাহুল্য কৃষক বিক্ষোভ এড়াতেই রিলায়েন্স চুক্তি সম্পর্কিত হলফ নামা দিতে বাধ্য হয়। অথচ ভিতরে ভিতরে অন্য সংস্থার মাধ্যমে কৃষকদের কিনে নিতে সচেষ্ট। তাই বিতর্কের মুখে তাদের যুক্তি স্বাস্থ্য ফার্মার্স সংস্থা চাষিদের সঙ্গে চুক্তি করেছে রিলায়েন্স নয়। কৃষক নেতৃত্ব মনে করছেন সমস্তটাই সরকার ও শিল্পপতিদের প্রহসন। কৃষক আন্দোলন প্রতিহত করার সব রকম প্রচেষ্টা সরকার করছে। সুপ্রিম কোর্টে কৃষক দের তরফে যেমন এক গুচ্ছ মামলা চলছে, তেমনই রাস্তা জুড়ে আন্দোলনের বিপক্ষে শীর্ষ আদালতে একাধিক মামলা ঝুলছে। এর মধ্যেই রাজস্থানের বিজেপি বিধায়ক মদন দিলওয়াড় অভিযোগ এনেছেন কৃষক আন্দোলন কারীদের থেকেই বার্ড ফ্লু ছড়াচ্ছে। এমন কি তিনি বিক্ষোভকারী কৃষকদের মধ্যে চোর ডাকাত সন্ত্রাস বাদী থাকতে পারে বলেও কু মন্তব্য করতে ছাড়েন নি।
কৃষক আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে উপনীত যে, কোনোও ভাবেই তাদের মনোবল ভাঙা সম্ভব নয়। নেতৃত্ব অবশ্য কৃষকদের আত্মহত্যা না করার আর্জি জানিয়ে আবেদন করেছেন যে, লড়াই সংগ্রামের দ্বারাই সরকারকে নতি স্বীকারে তারা বাধ্য করবে। কৃষক নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে আগামী ২০ জানুয়ারি গুরু গোবিন্দ সিং এর জন্মদিন গুরুপরব পালন করে তারা আন্দোলন সফল করার শপথ নেবে এবং ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তারা ট্রাক্টর নিয়ে কুচকাওয়াজ করবে। ইতিমধ্যে জম্মু কাশ্মীর এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে বৃহৎ সংখ্যক কৃষক আন্দোলন মঞ্চে যুক্ত হওয়ায় আন্দোলন কারীদের মনোভাব আরও দৃঢ় হয়েছে।
কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত নেতৃত্ব বলেন – দিল্লীর হাড় কাঁপানো শীতে অনিদ্রায় অর্ধাহারে দেশের অন্নদাতারা যে আন্দোলন করছে তা নিছক তাদের নিজেদের স্বার্থ নয়, কৃষিভিত্তিক ভারতের অর্থনীতির মেরুদন্ড কৃষক সমাজ। অগণতান্ত্রিক অমানবিক কৃষি আইনের কুফল সমগ্র ভারত বাসীকে ভুগতে হবে, এ কথা মাথায় রেখে সর্বস্তরের মানুষের উচিত বিজেপি সরকারের সংকীর্ণ স্বার্থপূর্ণ কৃষিনীতি তথা পুঁজিবাদী স্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা ব্যর্থ করা।
দেশের বুদ্ধিজীবী মহলও মনে করেন, সরকার তথা শিল্পপতি গোষ্ঠীর কৃষি,কৃষক এবং কৃষি আইন নিয়ে দ্বিচারিতা কোনো ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।