উত্তম দে,বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ২০/০২/২০২৪:- আজ ২০শে ফেব্রুয়ারি। আজ তেভাগা শহীদ যশোদারাণী সরকারদের স্মরণ করে কৃষকের দাবীর আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার শপথ গ্রহনের দিন। আজ যখন দিল্লী সীমান্তে কৃষক আন্দোলনের ওপর নেমে এসেছে বর্বরোচিত আক্রমণ,তখন যশোদারাণীদের আত্মত্যাগকে বার বার মনে করায়। মনে করায়,কৃষক স্বার্থে কমিউনিষ্টদের নেতৃত্বে আপোশহীন আন্দোলনের কথা, যা আজোও সমান গতিতে বহমান।
সামন্তরাজ,জমিদারীরাজের শোষণে অত্যাচারিত কৃষকেরা অধুনা দক্ষিণ দিনাজপুরে সর্বপ্রথম তেভাগার দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। সে সময় প্রাদেশিক আইন সভায় কমিউনিস্টদের তিনজন প্রতিনিধি ছিল। রেলওয়ে থেকে জ্যোতি বসু, দার্জিলিং থেকে রতনলাল ব্রাহ্মণ এবং দিনাজপুর থেকে রূপনারায়ণ রায়। কৃষকদের এই দাবীকে পুর্ণ সমর্থন জানায়,১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বরে কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক সংগঠন প্রাদেশিক কৃষক সভার কলকাতা কাউন্সিল মিটিং।
অবিভক্ত বাংলার ১৯টি জেলা ৬০ লক্ষ কৃষক, বর্গাদারের লড়াইয়ে প্রত্যক্ষ মদত দেয় কমিউনিস্ট দল। তিনদফা দাবীর ওপর আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিজ খৈলানে ধান তোলো। আধি নয়, তেভাগা চাই। কর্জা ধানের সুদ নাই। সাথে সাথে দাবী তোলা হয়, ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো। জাতীয় সরকার গড়ো। আহ্বান করা হয়, প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন মানুষ, একটি লাঠি, একটি টাকার।কমিউনিস্ট নেতারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভলিন্টিয়ার বাহিনী গড়ে তুলতে থাকেন।আওয়াজ ওঠে “জান দেব তবু ধান দেব না”। আইনসভায় জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট প্রতিনিধিরা কৃষকদের পক্ষে সওয়াল করেন।
এরই মধ্যে দিনাজপুর জেলার রামপুর মলানি গ্রামে মহিলা নেত্রী জয়মনী,রোহিনীর নেতৃত্বে পুলিশের হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে তা ভেঙে দেয়। ধীরে ধীরে আন্দোলন সর্বাত্মক রূপ নেয়। খাঁপুরের ঘটনার তিনদিন পূর্বে আন্দোলনকারীরা ৩জন জমিদারের খৈলান লুঠ করে ধান জনতার খৈলানে বিতরণ করেন।১৯৪৭ এর ২০শে ফেব্রুয়ারি,খাঁপুরের গ্রামবাসী লক্ষ্য করেন,গ্রামে পুশিশ ঢুকেছে। সাথে সাথে তারা শাঁখ,করতাল বাজিয়ে গ্রামবাসীকে সতর্ক করে। এবং মুহুর্তের মধ্যে হাজারে,হাজারে মহিলা,পুরুষ জমা হতে শুরু করে।পুলিশ যাতে যেতে না পারে তার জন্য রাস্তা কেটে দেওয়া হয়। বড় বড় গাছ কেটে রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হয়। কিন্তু পুলিশ গোপেশ ডাক্তারকে গ্রেফতার করতে উত্তেজনা বৃদ্ধি হয়। রাস্তায় আটকে পরে পুলিশ ভ্যান। গ্রামবাসী গোপেশ ডাক্তারকে ছিনিয়ে নিতে গেলে ব্রিটিশ পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। মোট ১৩১ রাউন্ড গুলি চলে। আত্মগোপন করে থাকা কমিউনিস্ট নেতা নীলমাধব সরকারের স্ত্রী যশোদারাণী সরকার,কৌশলা কামরনি, গুরুচরণ বর্মন সহ ২২ জন শহীদ হন। জখম হন ৫০ জনেরও বেশী।
কৃষকদের বর্গা অধিকার থেকে দেশ স্বাধীন হবার পরেও দেশের সরকার বঞ্চিত করে রেখেছিল। কৃষক স্বার্থের দিকে না ভেবে সামন্তদের স্বার্থকেই তারা রক্ষিত করেছিল। ১৯৭৭সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর,বর্গা অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আজ,রাজ্য তথা দেশজুড়ে কৃষকের জমি, জমি হাঙরদের কবলে। দেশে কৃষি বিরোধী আইন পাশ করে কৃষকদের বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বামেরা পথে নেমে তার বিরোধিতা করছে। যে লড়াই যশোদারাণীরা শুরু করেছিলেন,সে লড়াই আজো অব্যাহত।