জেলা

রাতে জীর্ণ বাড়ি ভেঙে চাপা পড়ে এবিটিএ বাঁকুড়া জেলা শাখার প্রাক্তন সম্পাদকের দুই পুত্রের মৃত্যু


আশীষ পান্ডে, চিন্তন নিউজ, ৯ অক্টোবর: ভদ্রলোক মিষ্টিভাষী মাননীয় শ্রী অনিলচরণ বিশ্বাস। একসময় বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি ছিলেন। রাত্রে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র টের পান বাড়ি ভেঙে পড়ছে। অতি দ্রুত ৮৮ বছর বয়সি পিতাকে বের করার চেষ্টা করেন। ছোটো ভাইও ঘুমে কাতর। সেও হাত লাগায়। বাবাকে কোনরকমে অল্প আঘাতে সরাতে পারলেও নিজেরা চাপা পড়ে যায়। এবং মৃত্যু হয় দুই ভাইয়ের।

বাড়ির ধ্বংসস্তূপ

রাতেই হুড়মুড়িয়ে বাড়ি ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে গ্রামবাসী বড়ো ভাইয়ের নিথর দেহ বের করে আনতে পারলেও কনিষ্ঠজনকে ভোর ৫ টায় ক্রেন দিয়ে মাটি সরিয়ে বের করার সময় মুখ নীল হয়ে গেছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। অর্থাৎ দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু। হতে পারে মাথাতেও আঘাত।

অনিলবাবুকে পার্শ্ববর্তী জয়পুর ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এখন তিনি জয়পুর হাসপাতালে ভর্তি। খবর পেয়ে বহু মানুষ অকুস্থলে যান। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির নেতৃবর্গ পৌঁছান। পরিবারের পাশে দাঁড়ান।

নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব

সবাই অবাক হয়ে যান একজন শিক্ষক তার উপর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির একটা বাড়ি হয়নি! ফলে ৫০ ও ৫৬ বছরের সন্তানদের হারাতে হল। আসলে আজকের দিনের সভাপতিদেরকে দেখে অনেকেরই হিসেব মিলছে না। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি বাড়ি করতে পারেননি, এবং তিন ছেলের দুই ছেলে বেকার। বড়ো ছেলে সন্তোষ বর্ধমান শহরে জাগরীভবনে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এবং বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির দপ্তর সামলাতো। তার পরিবার রয়েছে। গতকালই বাড়ি এসেছিল বাবাকে দেখতে। তার পরিণতি হল কী মর্মান্তিক। ছোটো জন বিকাশ (দুই কন্যার পিতা, একজন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে, কনিষ্ঠা ক্লাস সেভেনে) ৮৮ বছরের পিতাকেই দেখভাল করত। সেও চলে গেল। সংসার প্রতিপালনের আগে তো বাসস্থানটা গড়তে হবে। আসছেন এগিয়ে অনেকেই। এগিয়ে আসা দরকার যার যেভাবে সাধ্য। আরণ হুড়মুড়িয়ে বাড়ি ভাঙাই নয়। পরিবারটাই যেন পড়ে গেল। নিষ্ঠাবান,ভদ্র, সৎ মানুষটির কপালে কি এই ছিল?

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনিল চরণ বিশ্বাস

আশ্চর্যের কথা, পিতা এখনও জানেন না, তাঁর দুই ছেলে আর জীবিত নেই। হাসপাতালে এবিটিএর জেলা নেতৃত্বের সাথে কথা হয়। কিন্তু পুত্রদের বিষয়ে একটি বাক্যও না। পুত্রশোক ভবিষ্যতে তাঁকে কোন অবস্থায় দাঁড় করাবে সে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এলাকাবাসী।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।