শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

ছোটদের সামুদ্রিক মাছ কেন খাওয়াবেন


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ৯ আগষ্ট: বঙ্গ জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে মাছ। মাছ যে বাঙালির জীবনে কতোটা ভালবাসার জিনিস তা বোঝা যায় বাঙালিদের জীবনে মিস্টি এবং সামুদ্রিক মাছ দুটিকেই সমান ভাবে স্থান দেওয়ার জন্য। রুই থেকে পাবদা, ট্যাংরা থেকে লইট্যা সবই আপন বাঙালির।

তবে খাদ্যতালিকাতে যে মাছ থাকুক না কেন, পুষ্টিগুণে কিন্তু এগিয়ে সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক মাছ শুধু উচ্চ প্রোটিন যুক্ত শুধু নয়, এতে ক্ষতিকারক ফ্যাট নেই বললেই চলে। এক কথায় বলতে গেলে সামুদ্রিক মাছ উচ্চ প্রোটিন যুক্ত এবং ভিটামিন ও খনিজের ভান্ডার। ভিটামিন খাদ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় জৈব রাসায়নিক উপাদান যা শরীর এর ভিতর তৈরী হয়না, খাবার থেকেই তা গ্রহন করতে হয়। তাই শিশুর শরীরের ঘাটতি মেটাতে অবশ্যই খেতে হবে ইলিশ, চিতল, পমফ্রেট, রূপচাদা, পাবদা, ট্যাংরা, আড়, তপসে ইত্যাদি মাছ।

নোনা জলের মাছ ভিটামিন-ডি এবং ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ হওয়ায় সেগুলি শিশুর অন্যতম ব্রেইন ফুড। মাছ প্রোটিনের অন্যতম উৎস। তাই বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় মাছ রাখতেই হবে। আর মাছ যদি সামুদ্রিক হয় তবে তো আর কথাই নেই। বাচ্চাদের ভ্রূণ থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্কের কাঠামো গঠনে সামুদ্রিক মাছের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই শিশুর বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমানে সামুদ্রিক মাছ এবং মাছের তেল খাওয়াতে হবে অন্তত তিনদিন সপ্তাহে। কাটা কম মাছ দিয়ে শিশুর মাছ খাওয়ার অভ্যাস তৈরী করতে হবে। সামুদ্রিক মাছে কাটা কম কিন্তু পুষ্টিগুণ অনেক।। তবে মাছ বেশী ভাজা ঠিক না।

শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক গঠনে সামুদ্রিক মাছ দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহন করে। সামুদ্রিক মাছ স্মৃতিশক্তির উন্নতিতে দারুন কাজ করে। যে পরিবারে ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ইতিহাস আছে তাদের বাড়ীর শিশুকে বেশী করে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ানো দরকার।

আজকের দিনের শিশুদের অবসাদে ভোগা এক মারাত্মক সমস্যা। সামুদ্রিক মাছের ওমেগা থ্রি শরীরে প্রবেশ করার পর “ফিল গুড” হরমোনের ক্ষরন বেড়ে যায়। এর ফলে বাচ্চার মানসিক চাপ কমে এবং মন চাঙ্গা হয়ে উঠে। তাই মানসিক চাপ কমাতে প্রতিদিন কিছুনা কিছু মাছ খাওয়া দরকার।

সামুদ্রিক মাছ খনিজের ভান্ডার। আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি খনিজ ছাড়াও আছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান, যা মানুষের শরীরকে পরিপুষ্ট ও কর্মক্ষম করে। মাছ ছোটবেলা থেকে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আই-কিউ বৃদ্ধি পায়, দৃষ্টিশক্তি বাড়ে এবং হাড় ও দাঁত মজবুত হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে ছোট কাটা যুক্ত মাছ খাওয়ালে শরীরের মুল হাড় ঠিকমতো তৈরী হয়, ভবিষ্যতে হাড়ক্ষয় বা হাড়ে ফুটো হয়ে হাড় দূর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সামুদ্রিক মাছ থেকে সরাসরি ৪ টি ভিটামিন – এ, ডি, ই, কে ছাড়াও ভিটামিন বি র মতো দুস্প্রাপ্য ভিটামিন পাওয়া যায়। যে কয়েকটি খাবার পটাশিয়াম সমৃদ্ধ তার মধ্যে সামুদ্রিক মাছ অন্যতম। অল্পবয়সীদের মাছ খাওয়ানো স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকার। এটি হার্ট ও স্নায়ুকে শক্তিশালী করে। ১৫/১৬ বছর বয়সের ছেলে মেয়েদের ব্রন সমস্যা হয়। সামুদ্রিক মাছ ব্রন রোধে সাহায্য করে।

শিশুদের কাঁকড়া দেওয়া যেতে পারে। কাঁকড়া ক্যালসিয়ামের ভাণ্ডার, যা পেশীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ইলিশ পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও বাচ্চার দু- বছর আগে না দেওয়া ভাল। কারন এই মাছে খুব তেল থাকে যা হজমের গোলমাল হয়।

তবে শুধু গুণ নয়, সামুদ্রিক মাছে কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। সামুদ্রিক মাছে কিছু কীটনাশক ও বিষাক্ত পদার্থ মিশে থাকে। এছাড়া শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য মিশে থাকে এই মাছের শরীরে। তাই সামুদ্রিক মাছ থেকে মার্কারী ইনফেকশন হয়। তাই মাছ অবশ্যই ভাল করে ধুয়ে নিতে হয়। আর তার সঙ্গে কখনই আধসিদ্ধ নয়, মাছ সবসময় ভালভাবে রান্না করে সব্বার খাওয়া উচিৎ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।