দেশ

অসম বিধান সভা নির্বাচন ২০২১


চিন্তন সংবাদদাতা , অসাম থেকে :  সীমা বিশ্বাস: চিন্তন নিউজ:১৫ই মার্চ:– অসমের আসন্ন বিধান সভার ১২৬ কেন্দ্রে  নির্বাচন তিনটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন আয়োগের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৭ মার্চ, ১ ও ৬ এপ্রিল ভোট গ্রহণ হবে। ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ২রা মে। নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা শুরু হয়ে যায়।  একদিকে আছে বর্তমানে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বিজেপি নেতৃত্বে অগপ (অসম গণ পরিষদ), বিপিএফ (বড়ো পিপুলস ফ্রন্ট) এর মিত্র জোটের সরকার,  অন্যদিকে বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেস এবং এ আই ইউ ডি এফ (অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট)
বিধান সভায় বাম দলগুলোর কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নাই।

গত ২০১৬ নির্বাচনে বিজেপি ২৯.৫ শতাংশ অগপ ৮.১ শতাংশ এবং বিপিএফ ৩.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।   কংগ্রেস পেয়েছিল ৩১ শতাংশ এবং এ আই ইউ ডি এফ ভোট পায় ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ কংগ্রেস এবং এ আই ইউ ডি এফ বিজেপি নেতৃত্ব এ মিত্র জোটের ভোট থেকে ৩ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিল। বামপন্থী ও অন্যান্য দল পেয়েছিল ১০ শতাংশ  ভোট। শতাংশের হিসেবে কম ভোট পাওয়া সত্ত্বেও বিজেপি নেতৃত্বে মিত্র জোটের সরকার গঠন করা হয়।

২০১৬ নির্বাচনের আগে বিজেপি দল অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল । তার মধ্যে অন্যতম হলো অসমের বন্যাকে রাষ্ট্রীয় সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, পাঁচ বছরে পঁচিশ লক্ষ বেকারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, অসম চুক্তি ১৯৭১ শীঘ্রই রূপায়ণ করা,ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সীল করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা, নির্দিষ্ট সময়সীমা অনুযায়ী ছয় জনগোষ্ঠীর জনজাতির মর্যাদা প্রদান করা, নুন্যতম মজুরি আইন কার্যকর করা,চা   বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩৫১.৩৩  টাকা ধার্য করা, কাছাড় ও জাগীরোড কাগজকল পুনর্জীবিত করা, শ্রমিকদের জীবনবীমা, স্বাস্থ্যবীমা ইত্যাদি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাবলীর সম্প্রসারণ, দুর্নীতি রোধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইত্যাদি। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বিজেপি সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকার শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ। সি এম আই ই(CMIE)র পরিসংখ্যান অনুযায়ী অসমের বর্তমান বেকারত্বের হার ১১.১  শতাংশ। অসমের ইতিহাসে সর্বাধিক।

বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর অসমের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা খর্ব করা হয়েছে। অসম বাসীর জন্য বড় বিপদ নাগরিকত্ব আইন ২০১৯ প্রবর্তন। অসম চুক্তি নির্ধারণ করা সময়সীমা ভেঙে দিয়ে সংবিধান বিরোধী সিএএ(CAA) আইন নিয়ে আসার ফলে বিভিন্ন ভাষাভাষী ,জাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনৈক্য , শঙ্কা, বিভ্রান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ তম ন্যায় লয়ের নির্দেশে চলা এন আর সি প্রস্তুত করার কাজ অর্ধ সমাপ্ত থাকার ফলে   অসমের জণগণের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

এই পরিস্থিতিতে ২০২১ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কংগ্রেস এর নেতৃত্বে বিজেপি হটাও , অসম বাঁচাও স্লোগানের মধ্য দিয়ে সি পি আই এম,সি পি আই ,সিপি আই এম এল, এ আই ইউ ডি এফ ,আঞ্চলিক গন মোরচা এবং বি পি এফকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে ‘রাইজর দল’ এবং সদৌ অসম ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ‘অসম জাতীয় পরিষদ’ নামে দুটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গঠন হয়েছে।অসম জাতীয় পরিষদ সাম্প্রদায়িক বিজেপি এবং এ আই ইউ ডি এফ কে পরাজিত করার আহ্বান জানিয়েছে। কোনো সর্বভারতীয় দলের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।

বিজেপি বিরোধী শক্তি গুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা হয়ে উঠে নি।
বাম দলগুলোর মধ্যে সি পি আই এম রাঙিয়া এবং সরভোগ কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। সি পি আই মরিগাও এবং সিপি আই এম এল বিহালী কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সাংসদ অজিত ভূঁঞা র নেতৃত্বে আঞ্চলিক গণমোর্চা দিসপুর এবং বটদৃবা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বাকি গরিষ্ঠ সংখ্যক আসনে কংগ্রেস এবং এআইইউ ডি এফ প্রার্থী দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আসামের নির্বাচনের দিকে বিশেষ নজর রেখেছেন।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।