রাজ্য

-শান্তি সম্প্রীতির লক্ষ্যে সারা ভারত শান্তি ও সংহতি মঞ্চ


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:১৬ই মার্চ: ১৫ই মার্চ রবিবার বিকেল তিনটেয় আসানসোল জেলা গ্রন্থাগার সভাকক্ষে মাননীয় অধ্যাপক অঞ্জন বেরার উপস্থিতিতে সারা ভারত শান্তি ও সংহতি মঞ্চের (ALL INDIA PEACE AND SOLIDARITY ORGANIZATION- AIPSO) এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হলো!

যে সভা বর্তমান সমাজ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শুধু প্রাসঙ্গিক তাই নয়, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ! এই বিশেষ সভায় সভাপতিত্ব করলেন দুর্গাপুরের বিধায়ক কমরেড সন্তোষ দেবরায়। উপস্থিত ছিলেন সংহতি মঞ্চের রাজ্য নেতৃত্ব শ্রী কুনাল বাগচী। শিল্পাঞ্চলের বিশিষ্ট গুণীজন সমৃদ্ধ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সঙ্গীত “হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী” অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত বহন করে! মূলপর্বের উপক্রমনিকা করলেন সুবক্তা সিপিআইএম নেতা পার্থ মুখার্জি!শ্রী পার্থ মুখার্জি তার স্বভাবসুলভ সংযত সাবলীল ভঙ্গিতে সুচারু ভাষায় তথ্য ও যুক্তির পরতে পরতে রেখে দিলেন সুদূর অতীত থেকে বর্তমান ভারতের অস্থির রাজনীতিতে সমাজের চিন্তাশীল শান্তিকামী বুদ্ধিজীবী মানুষ সংহতি কামনা করে, সুস্থ সমাজ চায়!

উক্ত আলোচনা সভার মূল আকর্ষণ ছিল অধ্যাপক অঞ্জন বেরার বক্তব্য! গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রোতারা শুনলেন, উনবিংশ শতাব্দী থেকেই ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ একজোট হয়েছেন, যার ফল হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লীগ অব নেশনস, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রসংঘ নামক বিশ্ব শান্তি সংস্থা গঠিত হয়েছে! অধ্যাপক বেরা বলেন, সব কালেই এক শ্রেণীর মানুষ যেমন যুদ্ধ বাঁধিয়ে ঘৃণ্য স্বার্থ চরিতার্থ করতে চেষ্টা করে তেমনি বৃহৎ সংখ্যার মানুষ যুদ্ধের বিপক্ষে শান্তির পক্ষে সংগ্রাম করে। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত সামাজিক, ধর্মীয়,অর্থনৈতিক, এমনকি লিঙ্গ বৈষম্যের যে যুদ্ধ তার বিরুদ্ধে লড়াই এক অবিরাম পদ্ধতি। চলমান সঞ্চরমান এই সংহতি আন্দোলনের সর্ব ভারতীয় প্রতিষ্ঠান হল- এ আই পি এস ও।

১৯৪৯ সালে আন্তজার্তিক পরিস্থিতি সাপেক্ষেই গড়ে ওঠে ওয়ার্ল্ড পিস মুভমেন্ট। আর ১৯৭০ সালে সারা ভারত শান্তি ও সংহতি মঞ্চ আত্মপ্রকাশ করলেও বেশ কিছু দিন এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পরে। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে আণবিক যুদ্ধনীতি পুনর্বিবেচনা না করে আগ্রাসন নীতিকে মদত দিয়ে হিরোশিমা নাগাসাকির পর আবার যেন বিশ্ববাসীকে নতুন করে সতর্ক বার্তা দিলেন যে বিশ্ব কূটনীতির শেষ কথা হলো আমেরিকা! কিন্তু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন বিশ্ব বিবেক এই অন্যায় মেনে নিতে পারে না! বর্ণ বিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে একতা স্থাপনই সংহতি মঞ্চের মূল আহ্বান!! বিশ্ব পরিবেশ থেকে দেশীয় পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, বর্তমান ভারত সরকারের বিধ্বংসী সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতি, উলঙ্গ ধর্মীয় আগ্রাসন, নির্লজ্জ নারী বিদ্বেষ থেকে স্বদেশ ভূমিকে রক্ষা করার জন্যই সারা ভারত শান্তি ও সংহতি মঞ্চ কে মজবুত করতে হবে! এই সংগঠন কে ধরে রাখতে পারে যুব সমাজ, আর সেই যুবদের হাত ধরে এই ইতিবাচক সংগ্রাম কে জীবন্ত করে তুলতে রাজ্য থেকে জেলাস্তরে শান্তি আন্দোলন প্রবাহিত করতে হবে! পশ্চিম বর্ধমানে জেলা এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা পোষণ করেন অধ্যাপক বেরা!

শেষ পর্বে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শান্তি ও সংহতি মঞ্চের সাংগঠনিক তথ্য ও কার্যকরী ভূমিকা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা হয়! একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে রক্তের নেশা কিছু মানুষ কে পৈশাচিক উল্লাসে উন্মত্ত করলেও গরিষ্ঠ মানুষ শান্তির পক্ষে, মানবতার পক্ষে, একতার পক্ষে! সম্প্রীতি লক্ষ্যে সংহতি মঞ্চের ছাতার তলায় যত বেশি মানুষকে একত্রিত করা সম্ভব হবে ততই দেশের ও দশের মঙ্গল! আসুন সমস্ত সুস্থ চেতন মনের মানুষ সমবেত হই বিশ্ব মৈত্রী, বিশ্ব মানবতা, বিশ্ব ভাতৃত্বের বন্ধনে! বিশ্ব বিবেক একজোট হয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে অন্যায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারলে কায়েমী স্বার্থকে দূরীভূত করা অসম্ভব নয়! এ পৃথিবীকে আগামী শিশুর বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে সচেতন বুদ্ধিজীবি মানুষকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে আর “সারা ভারত শান্তি ও সংহতি মঞ্চ” হলো সেই প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে জেলা- রাজ্য -দেশ ছাড়িয়ে সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে শান্তি বার্তা দিতে পারে!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।