দেশ রাজ্য

কলুষিত রাজনীতির ভাষা


কৌশিক দাশগুপ্ত, চিন্তন নিউজ, ৪ এপ্রিল: রাজনীতি তার ভাষা হারাচ্ছে। আসলে রাজনীতি থেকে নীতিটাই যখন হারিয়ে যায়, তখন পড়ে থাকে শুধু রাজ করার প্রবল অভিলাষ, অর্থাৎ যেনতেন প্রকারেণ ক্ষমতায় টিকে থাকার উদগ্র বাসনা।নীতিহীন রাজ করার এই প্রবণতা ক্ষমতাসীন দল বা গোষ্ঠীকে কত নীচে নামাতে পারে তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ এ রাজ্যের শাসক তৃণমূল দল এবং কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি।এদের এবং এদের পৃষ্ঠপোষক কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলির সম্পর্ক মিথোজীবিতার।এই মিথোজীবিতা টিকিয়ে রাখার জন্য, তৃণমূল, বিজেপি, এবং আরো কিছু দক্ষিণপন্থী দল মিথোম্যানিয়ার আশ্রয় নিয়েছে।সুস্পষ্ট নীতি নিয়ে দরিদ্র, নিপীড়িত, আক্রান্ত মানুষের পাশে থেকে পথচলার সাহস একমাত্র বামেরাই দেখায়। তাই বামেরা এদের একমাত্র ঘোষিত শত্রু।সে কারণে সমস্ত আক্রমণ কার্যত বামেদের দিকেই ধেয়ে আসবে। এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে ভাষার আক্রমণ অন্যতম।সম্প্রতি এ রাজ্যের দুটি লোকসভা আসনে শাসকদলের দু জন চিত্রতারকা প্রার্থীর নাম ঘোষিত হবার পর  সরস মন্তব্য সহ তাদের কিছু ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। আশ্চর্য জনক ভাবে এ নিয়ে তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ না হলেও, বামেরা, বিশেষ করে যাদবপুর কেন্দ্রের সি পি আই এম প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য তীব্র প্রতিবাদ করেন এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এই অভিনেত্রীদের নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বিতা করার অধিকার আছে, এবং যেহেতু তাঁরা মহিলা, তাঁদের সম্মানহানিকর কোন মন্তব্য বা পোষ্ট একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়।এটাই বাম রাজনীতির শিক্ষা।ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘আই ফর এন আই’ নীতি বামপন্থীরা গ্রহণ করেননা, যেটা দিলীপ ঘোষরা ক্রমাগত করে চলেছেন, এবং কিছু বামপন্থী বন্ধু ভাবতেও শুরু করেছেন যে তৃণমূলের অসভ্যতার জবাব অসভ্যতা দিয়ে দিলেই বোধহয় তাদের ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে। এই প্রবণতা আরো বড় বিপদ ডেকে আনবে।বরং লক্ষণীয়, দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী কোন ভাষায় তাঁর উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেওয়া ববি হাকিমের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন। এটা তাঁর মতাদর্শগত শিক্ষা সঞ্জাত উত্তর।এই বিষয়টি সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় চমস্কি তত্ত্ব দিয়ে। নোয়াম চমস্কি বলেছেন যে, মানুষের ভাষার ব্যবহার ও তার সৃষ্টিশীল দিকটি অনুধাবন করা যায় তখনই যখন আমরা ব্যবহারকারীর জন্মসূত্রে প্রাপ্ত বা সহজাত ভাষাদক্ষতার দিকটি অনুধাবন করার চেষ্টা করি। চমস্কি তত্ত্বের সার কথা: ভাষা হল জ্ঞানাত্মক। মনের মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরণের অবস্থা, চেতনা, বিশ্বাস,সংশয় এবং আরো অনেক কিছু। ভাষা ও মনের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ গুণ বা ধর্ম হল সহজাত বা স্বভাবগত। তাই একটি ভাষার জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন ও তার বিকাশ সম্ভব হয় সেই সহজাত প্রবণতাগুলির প্রকাশের মধ্য দিয়ে পরিবেশলব্ধ অভিজ্ঞতার ইনপুট গুলির দ্বারা চালিত হয়ে।মমতা ও তার ভাইবোনেদের ভাষাচর্চা এবং মোদি-অমিত-দিলীপ দের মুখের ভাষা, শরীরের ভাষা, আস্ফালনের ভাষা চমস্কি সাহেবের জেনেরিক গ্রামারের তত্ত্বকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।