রাজ্য

আমফান বিধ্বস্ত এলাকায় শাসক ও বিরোধীর ভূমিকা


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২৩শে মে:- কাল ছিল সংখ্যাটা ৭২, আজ সেটা বদলে গিয়ে হল ৮৬। যতবেশী যোগাযোগ সম্ভব হবে বিচ্ছিন্ন এলাকার সঙ্গে হয়তো বদলে যাবে এই ৮৬ সংখ্যাটাও। কোভিড১৯ এর সঙ্গে লড়াই চলাকালীনই আর এক ধ্বংসলীলার মুখোমুখি রাজ্য বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের ৫ টি জেলার অধিবাসী। রাজ্যে একটা নির্বাচিত সরকার আছে, বেনজির বিপর্যয়ে সর্বশক্তি দিয়ে প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়ে একাধিক দপ্তরের সহযোগিতায় দ্রুত গতিতে কাজ করবে এটাই কাঙ্খিত। যিনি যে দপ্তরের সর্বেসর্বা অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি জানেন কখন কোন কাজটা করতে হয়, কীভাবে করতে হয়। কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করবার অধিকার তাঁদের নেই। অপেক্ষা করতে হয় ঐ বিশেষ একজন সবজান্তার (?) ওপর। তাঁর খামখেয়ালিপনা মেনে চলতে হবে নতুবা নেমে আসবে বদলির খাঁড়া।

কলকাতা ও পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ প্রায় তিন দিন। সি ই এস সি র কর্মী, ইঞ্জিনিয়ার কারো এক্তিয়ার নেই স্বাধীনভাবে কাজ করার। তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ মত কাজ করতে হবে। এর ওপর আছে স্থায়ী কর্মীর অভাব। অস্থায়ী কর্মীদের জরুরী ভিত্তিতে এনে কাজ করানোর নেই কোনো উদ্যোগ। ফলে কাজ করতে গিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন তাঁরা। আমফান তান্ডবের আগেই নির্দেশ ছিল কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার, তাহলে কেন রাস্তার জলে ডুবে থাকা ইলেকট্রিক তারের ছোঁয়ায় প্রাণ গেল বেহালার চার যুবকের? কাদের অসাবধানতাবশত বজবজে একই পরিবারের চারজন প্রাণ হারালেন? কে উত্তর দেবে? আমার রাজ্যে বর্তমানে প্রশ্ন করাও অপরাধ।

গতকাল নবান্নদেবীর আহ্বানে রাজ্যে এলেন প্রধানমন্ত্রী, হেলিকপ্টারে সফর করলেন কলকাতা সহ দুই চব্বিশ পরগনার কিছু অঞ্চল, সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল। আকাশ থেকে মাটিতে থাকা অসহায় মানুষের দুরবস্থা কতটুকু তাঁরা অনুভব করলেন না আগামী দিনের রাজনীতির অঙ্ক কষলেন তা ক্রমশ প্রকাশ্য। ঘোষণা করলেন মাত্র ১০০০ কোটি টাকার প্যাকেজ। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি আমফান নিয়েও ভরসা রাখলেন তাঁর যোগ্য শিষ্যা মুখ্যমন্ত্রীর ওপর। প্রশাসনিক বৈঠক করলেন বসিরহাটে। উত্তর ২৪ পরগনার আধিকারিকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বরাদ্দ হ’ল ত্রাণের পরিমাণ। উপেক্ষিত থেকে গেল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা বা পূর্ব মেদিনীপুর, কথা বলার সুযোগ পেলেন না ঐ জেলাগুলোর আধিকারিকরা।

সুন্দরবন সংলগ্ন একাধিক জনপদ সম্পূর্ণ জলের তলায়। প্লাবিত ফসলের ক্ষেত, মোরামের রাস্তা। চাষের জমি নোনাজলে প্লাবিত হওয়ায় এখন কয়েক বছর ঐ জমিতে আর কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। অভুক্ত মানুষ, প্রকৃত অর্থে সর্বহারা এই মানুষগুলো জীবনের অভিজ্ঞতায় ভরসা করেন না প্রশাসনের ওপর, করোনার ভয় জয় করে নিজেরাই হাত লাগিয়েছেন নদী বাঁধ মেরামতের কাজে। ২০০৯ সালের আয়লার পর যেটুকু মেরামত হয়েছিল তারপরে আর হাত পড়েনি গত দশ বছরেও। তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী এখন ব্যস্ত বাঁধ বা রাস্তা মেরামতের কাজ কোন ঠিকাদার পাবে, কার কাছ থেকে বেশি কাটমানি পাওয়া যাবে সেই হিসাব মেলাতে। একাধিক জায়গা থেকে আসছে গোষ্ঠীদ্বন্দের, হাতাহাতির খবর।

না, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, বাম নেতৃত্ব বলছেন যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই ১০০০ কোটি টাকায় তা পূরণ করা অসম্ভব। আমফান কে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার পাশাপাশি আরও বেশি বরাদ্দের জন্য আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রশাসনের পাশাপাশি পার্টি ও বামপন্থী কর্মীদের আরও বেশি করে দলমত নির্বিশেষে অসহায় মানুষের ত্রাণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক ডঃ সূর্যকান্ত মিশ্র। আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করতে ডব্লিউ বি সি পি আই এম নামে চেক বা ড্রাফট ৩১, আলিমুদ্দিন স্ট্রীট, কলকাতা ৭০০০১৬ ঠিকানায় অথবা
একাউন্ট নাম–ডব্লিউ বি সি পি আই এম
একাউন্ট নাম্বার–৪০২৪২০১১০০০০৩১৯
আই এফ এস কোড–বি কে আই ডি ০০০৪০২৪
ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া
মৌলালি শাখা।
এই একাউন্ট এ সাধ্যমত সাহায্য করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।