রাজ্য

এস. এস. সি. কেলেঙ্কারি ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়


মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:২০শে এপ্রিল:–
গনতান্ত্রিক দেশের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা। কিন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় বর্তমান ভারতবর্ষে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা এতটাই তলানিতে ঠেকেছে যে রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী পর্যন্ত আদালত কে প্রভাবিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন।

সাম্প্রতিক কালের একটি নিন্দাজনক ঘটনা এস. এস. সি. নিয়োগ সংক্রান্ত ঘোটালা। যে ঘোটালায় স্পষ্ট ভাবে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে এ রাজ্যে সরকার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের সরকারি চাকরি দিতে ব্যর্থ। তার উপর সর্বশেষ এস. এস. সি. গ্রুপ ডি এবং নবম দশম শ্রেণির চাকরির পরীক্ষার ফলাফল এবং নিয়োগ নিয়ে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রী ও আমলার দল। বিখ্যাত ছাত্র দরদী হৃদয়বান ব্যারিস্টার শ্রীযুক্ত অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সরকারের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে চাকরি প্রার্থীদের হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন।

এস. এস. সি. কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর আসল চেহারা বার হয়ে এসেছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ নিরপেক্ষ বিচারের জন্য প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ বাবুর সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন,এমন কি সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তৃণমূল নেতাদের তদন্তের প্রশ্ন উঠলেই রাজ্যের নামি দামি হাসপাতালে রাজকীয় চিকিৎসার নামে গা ঢাকা দেওয়ার কৌশল বানচাল করে দেন।
কিন্ত পার্থ বাবুর আইনজীবীর তৎপরতায় এবং রাজ্য সরকারের চেষ্টায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কর্তৃক সিঙ্গেল বেঞ্চের এই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ মুলতুবি করে দেওয়া হয়, যা নিঃসন্দেহে বিচার ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তার করা।
এখন আবার এই ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে, গত ১৫ ই এপ্রিল তৃণমূলের তরফে তাপস সামন্ত নামে এক আইনজীবীর সাক্ষরে এই সিবিআই তদন্তের স্থগিতাদেশ আরও ১২ সপ্তাহ বৃদ্ধির জন্য এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এই মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতের সুবল সমাদ্দার নামক বিচারপতির কাছে আবেদন করার ফলে জানা যাচ্ছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে আইনজীবী তাপস সামন্তর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের কাছে লিখিত আবেদনপত্র দিয়ে স্থগিতাদেশ বৃদ্ধি ও পার্থ বাবুর রেহাই প্রার্থনা করে সিবিআই তদন্ত থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর প্রবল অপচেষ্টা তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এমনকি বিরুদ্ধ পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, বিকাশ বাবু নাকি সিবিআই তদন্তের আর্জি করবেন না বলে ঐ আইনজীবী তাপস সামন্ত কে কথা দিয়েছেন।

অথচ প্রকৃত সত্য হলো, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী বলে পরিচিত তাপস সামন্ত এবং বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য উভয়েরই দাবি যে তাঁরা দুজনেই পরস্পরকে চেনেন না। আইনজীবী সামন্ত আরও বলেছেন তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নন। তিনি বর্ধমানের আদালতে কাজ করেন। তবে সামন্ত মশাই স্বীকার করেছেন যে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য। এই ঘটনায় সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে একথা স্পষ্ট, এবং প্রকটভাবে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতী অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় দিনের পর দিন পথে পথে আন্দোলন করছেন, আর ঠান্ডা ঘরে বসে তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রীরা তাদের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন অথচ সব জানার পর ও নিরপেক্ষ বিচার হচ্ছে না!

সমস্ত রাজ্যবাসীর উচিত ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে মাননীয় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশিত পথে এই অন্যায়ের উপযুক্ত তদন্তের দাবি তোলা। আইনের চোখে সকলের সমান অধিকার এই আদর্শ মেনে বিচার বিভাগ যাতে শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগের দ্বারা পরিচালিত না হয় সে বিষয়ে জনমত গঠনের সময় এসেছে। দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত ঘন অন্ধকারে ডুবে যাবে। মনে রাখতে হবে রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।