কলমের খোঁচা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এড‌ওয়ার্ড জেনার– প্রথম ভ্যাকসিন’ আবিস্কারক


রঞ্জন মুখার্জি, নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:১৭ই মে:– আজ ১৭ ই মে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার এর জন্ম দিবস । এডওয়ার্ড জেনার নামটার সাথে সম্ভবত শিক্ষিত সমাজের সবাই কমবেশি পরিচিত। কারণ, তিনিই প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে গুটিবসন্ত – র করাল থাবা থেকে তিনি পৃথিবীকে বাঁচিয়েছিলেন। বস্তুতঃ তিনি টিকা বা ভ্যাকসিন ধারণাটাই আবিষ্কার করেছিলেন। কবে করেছিলেন ? সেই ১৭৯৮ সাল নাগাদ।

এই যে টিকা বা ভ্যাকসিন আজ নতুন করে সারা পৃথিবী জুড়ে আলোচিত হচ্ছে। করোনা বা কোভিড আক্রান্ত সারা পৃথিবী।  একমাত্র টিকা-ই  পারে এই মরণব্যাধি থেকে মানব সমাজকে রক্ষা করতে। সেই সূত্রেই বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনারকে আবার নতুন করে মনে পড়ছে । তিনি ভাবলেন, গবেষণা করলেন, টিকা আবিষ্কার করলেন, আর সবাই টিকা গ্রহণ করে পৃথিবী থেকে গুটি বসন্ত উধাও হয়ে গেল, বিষয়টা কি এতই সহজে ঘটেছিল ? মোটেই না।

এডওয়ার্ড জেনার জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৭৪৯ সালের ১৭ ই মে, ইউনাইটেড কিংডম এর  বার্কলেতে । ছোট থেকেই তিনি ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখতেন । প্রথাগত পড়াশোনার পাঠ শেষ করে ডেনিয়েল লাডলো নামে  একজন প্রসিদ্ধ শল্যচিকিৎসকের অধীনে শিক্ষানবিশী করে ডাক্তারি খেতাব অর্জন করলেন । তারপর তিনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেন লন্ডনের সুপ্রসিদ্ধ শল্যচিকিৎসক জন হান্টার এর কাছে। তারপর তিনি ফিরে এলেন নিজের জন্মস্থানে। শুরু করলেন গরিব মানুষদের চিকিৎসা। তখন তার বয়স মাত্রই ২৪। সেসময়  মাঝে মাঝেই গুটিবসন্ত, মহামারী হিসেবে আসে এবং প্রচুর মানুষ মারা যায়। বিষয়টা তাকে ভাবালো। তিনি তার গ্রামীণ এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে পর্যবেক্ষণ করলেন যে এই অসুখ হবার পর যারা বেঁচে যান তাদের আর কখনো গুটিবসন্ত হয় না। তিনি জীবাণু নিয়ে পরীক্ষা শুরু করলেন।নানা পরীক্ষা তিনি তার নিজের শরীরেও করতেন।

তিনি পর্যবেক্ষণ করলেন, গরুরও এই ধরনের গুটিবসন্ত হয় এবং যারা দুধ দুইয়ে বিলি করেন তারা গুটিবসন্তে আক্রান্ত হলেও মারা যান না। এটার প্রচলিত নাম ছিল গো বসন্ত । যাইহোক, পর্যবেক্ষণ- পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপান্তে আবিষ্কৃত হল বসন্তের টিকা। সেই টিকা অনেক গরীব মানুষের মধ্যে প্রয়োগ করে তিনি স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, জীবাণু থেকে তৈরি টিকা সফলভাবেই কাজ করছে। সেই টিকা এবার বিজ্ঞানীমহলে স্বীকৃতি- র প্রয়োজন। কিন্তু,  তৎকালীন সমাজ বা বিজ্ঞানীরা সাহায্য তো করলেনই না,  উল্টে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে লাগলেন । সেই সময় নেপোলিয়নের কানে গেল বিষয়টা। নেপোলিয়ন তখন গুটিবসন্তের ভয়ে ভীত। তিনি জেনারকে ডেকে পাঠালেন এবং সেই টিকা গ্রহণ করলেন। তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি  কিন্তু শত প্রলোভনেও তিনি তাঁর টিকা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন নি । সরকারি সাহায্যে  তিনি টিকা  তৈরীর কারখানা তৈরি করলেন।

১৭৯৮ সালে তিনি প্রকাশ করলেন  “এনকোয়ারি ইনটু কজ এন্ড এফেক্ট অফ দ্য ভ্যারিওলি ভ্যাকসিন”। ১৭৯৯ সালে লিখলেন ” ফার্দার ইনকোয়ারিজ”। ১৮০০ সালে প্রকাশিত হল ” কমপ্লিট স্টেটমেন্ট অফ ফ্যাক্টস এন্ড অবজারভেশনস” । ১৮০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন ”  ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউশন” । সেই বছরই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডিগ্রি প্রদান করল। এরপর তিনি গবেষণা শুরু করেন পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে । ১৮২৩ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
চিন্তন পেজ আজ এই মহান বিজ্ঞানীকে প্রণাম জানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।