দেশ

ভারতে সম্প্রদায়িক সাম‍্য যেন সোনার পাথরবাটি।।


চৈতালী নন্দী: চিন্তন নিউজ:৭ই ডিসেম্বর:– সাতাশ বছর পার হয়ে গেছে,৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ র সেই অভিশপ্ত দিনটা পেরিয়েছে।অনেকেই হয়তো বিস্মৃতও হয়েছে, যে ভারতের এক কলঙ্কজনক অধ‍্যায় পার করে এসেছেন। এই প্রজন্মের নাগরিকরা হয়তো ভালোকরে জানেই না এর আসল রূপ। ভারতের শীর্ষ ন‍্যায়ালয়ের সাম্প্রতিক রায় এই দুঃস্বপ্নের স্মৃতিকে আরও দূরে ঠেলে দেবে।

যেদিন প্রকাশ‍্য দিবালোকে মসজিদ ভাঙার মতো একটা দুঃসাহসিক ,ঘৃন্য এবং অসাংবিধানিক ঘটনাটা সংঘটিত হয়েছিল তখন পুলিশ ,আমলাতন্ত্র এবং প্রশাসন তাতে মদত জুগিয়েছিল। সেই অন‍্যায়ের কোনও সাজা হয়নি। অনেকেই এই ঘটনাকে গান্ধী হত‍্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতবর্ষ। সংবিধানের এই ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গত ৯ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আরও একটা রায় দিয়েছে , যা স্পশ্টতই ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রে আঘাত হেনেছে। এই রায় আদালতের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আইনের পরিপন্থী । শীর্ষ আদালতের রায়ের বলে এবার সেই বিতর্কিত বাবরি মসজিদের জমিতেই তৈরী হবে রামমন্দির।ভারতের ইতিহাসে সম্ভবত এটাই প্রথম, যে ঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সম্পূর্ণভাবে সরকারি তত্বাবধানে একটি মন্দির তৈরী হবে। গান্ধীজির কথামতো হিন্দুরা কি নিজেদের মন্দির নিজেরা তৈরী করতে সক্ষম ছিল না? এদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনই যে ধর্ম একেবারে রাষ্ট্রের হেঁসেলে ঢুকে পড়েছে এবং সরকারের সমগ্র নীতিনিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে।

অনেকেই সাম্প্রতিক রাম মন্দির নির্মানের রায়কে ভারসাম্য মূলক বলে দাবি করেছেন। ভারতীয়দের কাছে এটাই শান্তির ও স্বস্তির যে এই রায়ের পর কোনো হিংসা বা অশান্তি কোথাও হয়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে না। এটাই আশ্চর্যের যে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো এই রায়কে নির্বিবাদে মেনে নিয়েছে। যদিও রায়দানকারীরা জানতেন যে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ঐ মসজিদে নামাজ পড়া হোতো এবং লুকিয়ে চুরি করে ঐ মসজিদ গর্ভে রামলালাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তাঁরা এটাও জানতেন যে মসজিদ ধ্বংস একটা জঘন্য অপরাধ ছিল। কিন্তু কোন্ আইনের বলে মন্দির নির্মাণ সরকারি দায়িত্বে হবে আর মসজিদ নির্মাণ করবে মুসলিম সম্প্রদায়? সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি ছিল আগে ওখানে নামাজ পড়া হোতো তার কোনো প্রমাণ নেই। এতে চারশো বছরের প্রাচীন একটা সংখ্যালঘু ধর্মস্থানের সংগঠিত ও পরিকল্পিত ধ্বংশলীলা কার্যত বৈধতা লাভ করলো।

প্রকৃতপক্ষে ক্রমাগত মিথ‍্যা প্রচার, প্রতিবাদী কন্ঠরোধ,মিথ‍্যা মামলা,অথবা স্রেফ ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখার, সর্বোপরি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাজানো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ,এবং হিন্দু বীরগাথাকে বলপূর্বক মেনে নিতে বাধ‍্য করার প্রয়াস বর্তমান শাসকদের সংখ্যালঘু দের ও স্বাধীন চিন্তকদের চাপে রাখার এক ঘৃন‍্য কৌশল। এরা মনে করে ভারতে বসবাসকারী সব সম্প্রদায়কে নিজেদের অস্তিত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে হিন্দু ধর্মকে আত্মস্থ করতেই হবে,না হলে তাদেরকে দেশ ছাড়তে হবে।বর্তমান এনআরসি এই মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে সংখ্যালঘু দের ন‍্যায়বিচার পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।ধর্মের তাস খেলতে খেলতে আজ হিন্দুত্ববাদীরাই দেশের বৃহত্তম দল।ধর্মের ভিত্তি তে দেশকে বিভাজনের এই রাজনীতি,রবীন্দ্রনাথের বিশ্বমানবতার ,বিশ্বভাতৃত্বের  আদর্শের থেকে দেশকে অনেক পিছন দিকে নিয়ে গেছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।