সুপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:২১শে জুন:- ৩৪ বছর বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় ছিল । তার মধ্যে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে।। তার মধ্যে অন্যতম ২০০৯ সালের “আইলা” । এই মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন সঙ্গে ৪১ টি পৌরসভার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। ৯ লক্ষ বাড়ি সাথে ৪৯৫ কিলোমিটার নদীবাঁধ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।। ১৬,০৩৭ টি গবাদি পশুর ক্ষতি হয়েছিল।। ওই আইলা ঝড়ের তাণ্ডবে ১২৫ জন মানুষ মারা যান বলে খবরে প্রকাশ। তারপর ২০১১ সালে পালাবদল।। তখন কার বিরোধী দল তৃনমুল কংগ্রেস এখন সরকারে।।
এবারও এক মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ।। “”আমফান”” নামক এক মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়।। বিধ্বস্ত হল বাংলা।। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৮৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।। নদীবাঁধ ভেঙেছে ২৪৮ কিলোমিটার রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী গবাদিপশু মারা গেছে ২১ লক্ষ ২২ হাজার।। আইলাতে চাষের জমির ক্ষতি হয়েছিল ৪৬ লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর জমির আর আমফানে সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০ লক্ষ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে।।
দুই সরকারের আমলেই বিপর্যয় এসেছে এবং ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।। কিন্তু ভূমিকা আলাদা।। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের দাবী রাস্তা ঘাট বা বাড়ি ইত্যাদি ক্ষতির ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আর বামফ্রন্ট সরকারের বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল মানুষের জীবন জীবিকা বা ছোট ছোট শিল্পের উপর। কিন্তু সেটা বাস্তব কথা ছিল। কখনো এমন কোন আজগুবি হিসেব দেওয়া হয় নি যেমন দিয়েছে বর্তমান সরকার।। বর্তমান সরকারের কথা অনুযায়ী ২১ লক্ষ ২২ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে, এটা শুধু আজগুবি কথা তো নয়ই বরং চরম মিথ্যাচার।। আরও অনেক তফাৎ গত ৩৪ বছরের থেকে এখন কার নয় বছরের মমতা ব্যানার্জি সরকার এর।। শুধুমাত্র বামফ্রন্ট সরকারের কাজকে ছোট করে দেখানোর জন্য নানাভাবে হয়রানি করছে আর বাস্তবতা অনুযায়ী এখন বাম নেতৃত্ব সর্বশক্তি নিয়ে রাজ্যসরকারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে।। তৃনমুল কংগ্রেস আইলার সময় বাম বিধায়ককে চরম ভাবে হেনস্থা করেছিল হিঙ্গলগঞ্জ এ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতে মানুষের সাথে কথা বলতে তাদের পাশে সরকার আছে এই কথা জানাতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে তাদের কাছে যাচ্ছিলেন ।। পথে তাঁকে বাঁধা দেয় তৃনমুল কংগ্রেস।। আর এখন বামপন্থীরা বিপর্যয় মোকাবিলা করতে তৃনমুল কঙগ্রেস সরকার কে যথাসম্ভব সাহায্য করছে।। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সরকার এ আসার পর থেকে আর রাস্তায় হাঁটেন না।। তিনি আকাশ পথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে একটা চক্কর মেরে দূ্র্যোগ স্থান পরিদর্শন করে নিজের কর্তব্য পালন করেছেন।।
তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ২৪৭ টি লঙ্গরখানা খুলেছিল আর এই ভয়ানক আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর মমতা ব্যানার্জি সরকার একটিও লঙ্গরখানা খোলেনি।। প্রচুর পরিমাণে পানীয় জলের বন্দোবস্ত করেছিল বামফ্রন্ট সরকার কিন্তু বর্তমান সরকার পানীয় জলের বন্দোবস্ত করে নি।। তখন পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রায় সব কাজ হতো আর এখন পঞ্চায়েত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে । কোন বিষয়ে কোন তৎপরতা দেখা যায় নি।।
যে সরকার ছোট খাটো সব বিষয়ে কমিটি গড়তে সিদ্ধহস্ত সেই মমতা ব্যানার্জি সরকার আমফান ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে কোন কমিটি গঠন করলেন না।। অথচ বামফ্রন্ট সরকার আইলার পর পরই চারজনের কমিটি গঠন করে এবং তাতে বিরোধী দলনেতা কে রাখা হয়েছিল আর বাকি তিন জনের মধ্যে একজন পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি,বিডিও রং একজন এবং দূর্গত পঞ্চায়েতের একজন প্রতিনিধি।।