অর্থনৈতিক দেশ

কেন্দ্র সরকারের কড়া সমালোচনায় বিজেপির আইডোলজিক্যাল সেন্টার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ*


মল্লিকা গাঙ্গুলী :চিন্তন নিউজ:১৮ই মে:- করোনা সংক্রমণে দেশের সমাজ সংস্কৃতি বিশেষ করে অর্থনীতির চরম সংকট কালে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দেশবাসীর জন্য এক বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এই প্যাকেজের অর্থমূল্য কুড়ি লক্ষ কোটি টাকা যা নেহাত কম নয়! কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে নি; বরং হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে! অন্যান্য সংগঠনের কথা বাদ দিলেও শাসকদল বিজেপির মেন্টর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আর এস এস কোভিড ঊনিশ অতিমারির প্রেক্ষিতে এই বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। আর এস এস এর শ্রমিক সংগঠন বি এম এস এর সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের মতে অর্থ মন্ত্রীর চতুর্থ দিনের ঘোষণা দেশবাসীর কাছে কালো দিন!

আর এস এস এর বিবৃতি অনুযায়ী বলা হয়েছে; নির্মলা সীতারামন কেন্দ্র সরকারের হয়ে দেশের জরুরি অবস্থায় কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণাটি চার দিন ধরে একটু একটু করে প্রকাশ করেন। যার একশো দিনের কাজে বরাদ্দ বৃদ্ধি সহ প্রথম তিন দিনের ঘোষণা মোটামুটি আশা ব্যঞ্জক হলেও চতুর্থ দিনের ব্যাখ্যা তাদের চরম ক্ষুব্ধ করেছে। শেষ দিনে অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন; কয়লাশিল্প, খনি শিল্প, প্রতিরক্ষা, এয়ারস্পেস ম্যানেজমেন্ট, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ , মহাকাশ, এবং পরমাণু গবেষণা ক্ষেত্র ইত্যাদি দেশের প্রধান প্রধান আটটি ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা বিনিয়োগ করতে পারবে। এই বেসরকারি বিনিয়োগের ঘোষণা আর এস এস এর মতো সংগঠনও মেনে নিতে পারছে না! তাদের বক্তব্য আসলে কেন্দ্র সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অভাব আছে বলেই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন, সামাজিক প্রতিনিধি, এবং স্টক হোল্ডারদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করেই এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা কখনোই সুফলদায়ক হ’তে পারে না! আর, এস, এস, পরিস্কার ক’রে বলেছে যে, তাদের দলের নীতি নির্ধারকদের মতে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শিল্প সংস্থার কাঠামোগত সংস্কার করতে এবং প্রতিষ্ঠানগত প্রতিযোগিতা তৈরি করতে বেসরকারি বিনিয়োগ উপযুক্ত হ’লেও এই করোনা সংকটকালে দেশের বেশির ভাগ প্রাইভেট কোম্পানি গুলির বাজার ধ্বংস প্রায়, এখন বরং ভারতের সরকারি সংস্থাগুলিই লাভজনক। বর্তমান সময়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার নামে সরকারি ক্ষেত্রে প্রায় ভেঙে পড়া বেসরকারি অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা নিঃসন্দেহে ভুল পদক্ষেপ। বি এম এস সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের মতে সাম্প্রতিক কালে সরকারি সংস্থায় বেসরকারি প্রবেশ ঘটলে নিয়োগ বন্ধ, কর্মী ছাঁটাই, কাজের সময় সীমা বৃদ্ধি, অল্প বেতনে কাজ করতে বাধ্য করা ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রমিক শোষণ পদ্ধতি দ্বারা সংস্থা গুলি বিপুল লাভ করতে চেষ্টা করবে যা সম্পূর্ণ শ্রম নীতি বিরুদ্ধ!

আর এস এস শ্রমিক সংগঠন কেন্দ্র সরকারের আর্থিক প্যাকেজের তীব্র প্রতিবাদ ক’রে বলে, কোনো রকম আলোচনা না করে সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা মারাত্মক ভুল। বিজেপির প্রধান সহযোগী দল আর এস এস তাদের সরকার বিরোধী এই অবস্থান সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন তারা সাফাই হিসেবে জানিয়েছে; “গনতন্ত্রে সামাজিক আলোচনা মৌলিক অধিকার”। অর্থাৎ সরকার যদি অমানবিক জনস্বার্থ বিরোধী হয় তাহলে তাদের সমালোচনা করে সঠিক পথ দেখানো বন্ধু হিসাবে তাদের কর্তব্য।

ভারতের মত বহুদলীয় গণতন্ত্রে সরকারের যে কোনো প্রকার জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সব সময়ই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের প্রধান বন্ধু দল তথা বাহুবল আর এস এস এর এই সোচ্চার প্রতিবাদ যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টিকারি ঘটনা। রাজনৈতিক সমালোচক দের মতে আর এস এস এর এই সরকার বিরোধী প্রতিবাদের দ্বারা বিজেপির অন্দরের ভাঙন স্পষ্ট করে দেয়! বি এম এস শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে দেশের সমস্ত বিরোধী শ্রমিক ইউনিয়নের বিক্ষোভের প্রতিফলন পরিস্ফুট। এখন দেখার বিষয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজের আসল উদ্দেশ্য পুঁজিবাদী শিল্পপতি দের গুরুত্ব দিতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারী লাভজনক ক্ষেত্র গুলিকে বেসরকারি করনের প্রচেষ্টা কতখানি বাস্তবায়িত হয়! তবে করোনা অতিমারি সংকটে বিপর্যস্ত জনজীবনে সরকারের আর্থিক সহায়তার নামে দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ দুর্বল করে দেওয়ার পদক্ষেপ শ্রমিক শ্রেণী তথা সাধারণ মানুষের জন্য সুফলদায়ক হবে না একথা বলার অপেক্ষা রাখে না!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।