একটি বিশেষ প্রতিবেদন : শ্রী অসীম বসাক:চিন্তন নিউজ:২৭শে মে: সেদিন বিষময় বিষের(২০২০) একুশে জানুয়ারী, মঙ্গলবার। স্থান হরিদ্বার,ভারতবর্ষ। ভারতীয়দের জন্য চূড়ান্ত অমঙ্গল ব্যবসার ঘোষনা রাখলেন এক ব্যবসায়ী। ‘করোনিল এবং স্বসারি’নামে দুটি দ্রবনের কথা বলে দাবি করলেন যে এই ঔষধে করোনা সেরে যাবে।
সেদিন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ সহ একাধিক জনহিতকর জনগন সংগঠন ,চিকিৎসক সংগঠন , বিজ্ঞানীমহল ও আরও অনেকেই ঐ ঘোষনার বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা ,
সারবত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
যাই হোক তীব্র বিরোধিতায় ঐ দ্রবনগুলির অবৈজ্ঞানিক গনপ্রয়োগ ও গনপ্রচার বন্ধ হয়েছে।পরবর্তীকালে ওষুধটি সরকারের কাছ থেকে বাতিল হয় কারণ পতঞ্জলি তার নিরাময় হিসাবে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্লিনিকাল ট্রায়াল ডেটা জমা দেয়নি এবং বিনা লাইসেন্সেই ঐগুলিকে বাজারজাত ও বিক্রি করছিল। এরপরেও রামদেবের ব্যবসায়িক সংগঠন কোরোনিলকে কোভিড সহায়ক চিকিৎসা এবং অনাক্রম্যতা সহায়তাকারী হিসাবে পুনঃব্যবহার ও বিক্রয় করেছে।এবারে বলি ঐ ধান্ধাবাজ ব্যবসায়ীর নাম।তিনি নিজেকে রামদেব বলেন। আসল নাম রামকৃষ্ণ যাদব।এটা ঠিক যে তিনি তামাক,গুটকা,মদ আরও অনেকরকম ক্ষতিকারক নেশার বিরুদ্ধে বলেন।তিনি পরিশ্রম করতে বলেন।ব্যায়াম করতে বলেন। চিনিসহ আরও অনেকপ্রকার স্বাস্থ্য বিদ্বেষী ও স্বাস্থ্য হানিকারক বস্তুর বিরুদ্ধে বলেন।কিন্তু মুখ খোলেন না জাত-পাত, দেশের স্বাস্থ্যঅব্যবস্থা,অন্যায় অবিচার নিয়ে। আসলে যোগ , আয়ুর্বেদ এগুলির পিছনে তিনি সুকৌশলে ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। কোটি কোটি জনগনকে বোকা বানিয়ে যদি ফাইলপিছু একটাকা লাভ করা যায়, তাহলেই কেল্লাফতে! একঢিলে দুই পাখী : একদিকে কোটি কোটি টাকা মুনাফা আর আরেকদিকে গোচোনা ,গোবর, গোসোনার মতো কুসংস্কার প্রচার ও ভারত সরকারের দায়িত্ব থেকে দৃষ্টি ও গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া।
সম্প্রতি রামদেব অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ এবং কোভিড সম্পর্কে বলেছিলেন যে “কোভিড -১৯-এর জন্য অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ সেবনে লক্ষ লক্ষ লোক মারা গেছে”। তিনি বলেন, “অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের কারণে আমরা লক্ষ লক্ষ লোককে (কোভিড -১৯ রোগী) হারিয়েছি … অক্সিজেনের ঘাটতির চেয়ে,” কোভিড -১৯-এর চিকিৎসা করার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধের বিষয়েও তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) রামদেবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতি আহ্বান জানালেও রামদেব এলোপ্যাথির অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেছিলেন যে তিনি একটি “ফরোয়ার্ড হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা” পড়ছেন। রবিবার (২৩.০৫.২০২০) কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন রামদেবকে লিখেছিলেন, তাঁর বক্তব্য কোভিড ফ্রন্টলাইনগুলিতে কাজ করা চিকিৎসকদের অপমান এবং তাকে তা প্রত্যাহার করতে হবে। রামদেব তার কুকথা প্রত্যাহার করলেও এখনও অবৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা বিজ্ঞান বিরোধী প্রচার করে চলেছেন।
মজার বিষয় হচ্ছে রামদেব অ্যালোপ্যাথির সমালোচনা করেন,কিন্তু নিজের হাটুর অসুখ সারানোর জন্য চুপি চুপি বিদেশী অ্যালোপ্যাথদের কাছে যান। ঠকবাজ !
আবার পতঞ্জলি যোগপীঠের প্রধান বালকৃষ্ণকে প্রথমে হরিদ্বারের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে তাঁকে ঋষিকেশের এইমসে রেফার করা হয়েছিল।এখন ছুটি পেয়েছেন।অ্যালোপ্যাথিই তাকে এখন সুস্থ রেখেছে।
খুবই দুঃখের সাথে জানাই যে রামদেবের পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের দুগ্ধ ব্যবসায়ের নেতৃত্বদানকারী সুনীল বানসাল গত ১৯ শে মে কোভিড-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মারা গিয়েছেন। বয়স ৫৭ বছর । কোভিড -১৯ সম্পর্কিত জটিলতার কারণে “মারাত্মক ফুসফুসের ক্ষয় এবং মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ” জনিত কারনে তার মৃত্যু হয়।তিনি জয়পুরে রাজস্থান হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।তার স্ত্রী একজন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক। এরকম খারাপ অবস্থার মধ্যে রামদেব আবার দাবি করেছেন: দশ হাজার চিকিৎসক ভ্যাকসিন থাকা সত্ত্বেও মারা গেছেন, বলেছেন যে তিনি ‘দেবতা ও মর্যাদার’ডাক্তার ।
একা রামদেব নয়,আরও অনেক বাবাই এভাবে অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান ও কুসংস্কারের প্রচার প্রসার ও পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছেন। জীবন জীবিকা স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় অবহেলা করে গোবর, গোচোনা, হাড়গোড়, লতাপাতা, ঝাড় ফুক, তাবিজ মাদুলি, আংটি, পাথর, শেকড় বাকর, মন্দির মসজিদ ……দিয়ে দেশ দশের কাজ করা যায় না। কোটি কোটি টাকার নয়ছয় করে মূর্তি বসানো যায়, ভিস্তা বানানো যায় কিন্তু অক্সিজেন ভ্যাকসিন বেড ঔষধ দেওয়া যায় না ?একমাত্র ভোটঅধিকার প্রয়োগের জন্য আর মসনদে বসার জন্য জনগনকে দরকার ? আসলে রামদেবদের প্রতিষ্ঠা দিলে জনগনেশ ও জনরাম আর রহিমদের দৃষ্টি জনারণ্যে হারিয়ে দেওয়া যায়।
বিজ্ঞান শুধু বইয়ের পাতায় নয় বিজ্ঞান মানুষের মাঝে,মানুষ, পরিবেশ ও সমাজের কাজে মানুষের কাছে থাকে। তাই এই করোনা অতিমারীর কঠিন সঙ্কটময় সময়ে বারবার প্রশ্ন জাগে: বিজ্ঞান মানুষের জন্য না মানুষ বিজ্ঞানের জন্য?