সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ৩০ আগষ্ট: অতি সম্প্রতি এশিয়ার ট্যাঙ্কার সহ জ্বালানি তেলের বিভিন্ন স্থাপনায় ছটি হামলা হয়েছে। সবকটি হামলাতেই আমেরিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় তাদের মিত্রদের অভিযোগের আঙ্গুল ইরানের দিকে। ফলে জ্বালানি তেলের বাজারে এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে। ১৯৭৩ সালের ইজরাইলের যুদ্ধে বিশ্বে জ্বালানি তেলের বাজারে ভয়াভয় প্রভাব পড়েছিল। ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেলের দাম দুই ডলার থেকে বেড়ে এগারো ডলার হয়েছিল কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। বেড়ে গিয়েছিল বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চাকা প্রায় থমকে গিয়েছিল। ১৯৩০ সালে মন্দার সময় যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল অনেকটা সেইরকম।
বিশ্ব জ্বালানি বানিজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌ-রুট হরমুজ প্রনালি। এটি অতি সংকীর্ন নৌ-পথ। আর এই পথেই একের পর এক তেলবাহী কার্গোতে পরপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার ভয়ে কার্গো গুলি আর এপথে যেতেই চাইছে না। আর যদিও বা যায় তার জন্য প্রচুর অর্থ দাবী করছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে পরিবহন ব্যয়। এর জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম এখনকার তুলনায় বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হামলার পরপর তেলের দাম বর্তমানের চেয়ে বেড়ে গিয়েছিল আর এটাই ছিল প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। আর এই উত্তেজনার নিয়ন্ত্রন না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ার প্রবল সম্ভবনা। তার সাথে রয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট। সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন চললে তা সরাসরি তেল উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। “ইকনোমিক টাইমস”-এ প্রকাশিত এই সম্পর্কিত প্রতিবেদন বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও একটি অর্থনৈতিক মন্দার পূর্ব লক্ষন হিসেবে বর্ননা করেছেন।
কিন্তু এখন যেটা বড় সমস্যা সেটা হল হরমুজ প্রনালি অতিক্রম করতে চাইছে না দেশ বিদেশের কার্গো গুলি। হামলার ভয়ে অনেক শিপিং কোম্পানি পশ্চিম এশিয়ার দেশ থেকে জ্বালানি আনার বুকিং বাতিল করে দিচ্ছে। একেকটি কার্গোর পিছনে প্রতিদিন ১৩ হাজার ডলার পরিবহন ব্যয় করতে হচ্ছে। হামলার জন্য এক দিনেই তা দুহাজার ডলার বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৩.৪% বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী দিনে আরও বাড়বে। তার উপর যদি ইরান কোন কারনে হরমুজ প্রনালি বন্ধ করে দেয় বা জাহাজ গুলি ওই পথে যেতে না চায় তবে অপরিশোধিত তেলের দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে।। তাই হরমুজ প্রনালিকে নিরাপদে রাখা জরুরি বিশ্ব জ্বালানি বাজারের স্বার্থে। এটা জ্বালানি তেলের উৎপাদক এবং ভোক্তা সকলের জন্য প্রয়োজনীয়।
“দ্য গার্ডিয়ান” পত্রিকায় এক বিশ্লেষনে বলা হয়েছে ১৯৭৩ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের আগে বিশ্ব অর্থনীতি অনেক প্রতিবন্ধকহীন ছিল। এবারের পরিস্থিতিকে বরং সত্তর দশকের শেষ ভাগে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়ের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা যায়। তখন পরিস্থিতি এমনিতেই খুব খারাপ ছিল, তার মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল। এবারের পরিস্থিতি অনেকটা সেইরকম। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২০০৮ সালের বিশ্ব-মন্দা পরবর্তী প্রভাব। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সমানে বলে যাচ্ছে মন্দার পর মানুষের জীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তবে স্বাভাবিক হয়ে ওঠাটা সন্তোষজনক নয়। ফলে এবারের চলমান উত্তেজনা জ্বালানি তেলের বাজারে সদুরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।