কলমের খোঁচা

শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্বদিবস


প্রতিবেদন, কল্পনা গুপ্ত, চিন্তন নিউজ, ১২ ই জুন – ১২ ই জুন তারিখটি আন্তর্জাতিক শিশু শ্রম বিরোধী দিবস হিসাবে পালিত হয়ে থাকে। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন এই দিনটিকে চিহ্নিত করে এই উদ্দেশ্যে যাতে সমাজে শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে এক সচেতনতা গড়ে ওঠে এবং এই ঘৃণ্য ব্যবস্থার বিলোপ ঘটে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশন ( ILO) এবং ইউনাইটেড নেশন ( UN) সংঘবদ্ধভাবে কর্মজগতে শিশুদের শ্রমকে শোষণ করার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা ও সমাজকে সচেতন করার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যার মধ্যে শিশু শ্রমের কারণ ও সমস্যা খুঁজে বার করা ও শিশু শ্রমিকদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া রয়েছে।

সারা বিশ্বে অসংখ্য শিশু তাদের স্বাস্থ্যের, শিক্ষার, স্বাধীনতার, অবসরযাপনের অধিকারগুলি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে অথচ তাদের সাধ্যের বেশি শ্রমকে শোষণ করে সমাজ। এই শিশুদের বলপূর্বক নানান অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত করা হয়ে থাকে, যেমন- মাদক পাচার, দেহব্যবসা, অস্ত্রপাচার ইত্যাদি কাজে।

শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব আসার পর থেকে শিশুশ্রমের অনিয়ন্ত্রিত শোষণ শুরু হয় ইউরোপে কারণ অনেক কম অর্থে শিশুদের খাটিয়ে নেওয়া যায় যথেচ্ছভাবে। প্রুশিয়া প্রথম দেশ যে ১৮৩৯ সালে শিশু শ্রমকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেঁধে দেবার জন্য আইন প্রণয়ন করেছিলো, যদিও ম্যাসাচুসেটসে ১৮৩৬ সালে এই আইন তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। তবু সমগ্র ইউরোপে এর সক্রিয়তা লাভ করে ১৮৯০ সালে। ইউনাইটেড নেশন স্থির করে ২০২১ সালকে শিশু শ্রমের অবলুপ্তি ঘটানোর আন্তর্জাতিক বর্ষ হিসাবে চিহ্নিত করা।

কোভিদ ১৯ এর প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে অবাধ শিশু শ্রমের নির্মম শোষণ এক মারাত্মক অমানবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যার শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকার দেশগুলি। সেখানে প্রতি ৭ জনে ৪ জন শিশুই এই অবস্থার শিকার। এরমধ্যে ছোট ছোট মেয়েদের ওপর অবাধে যৌন নির্যাতন করার মতন ঘটনাও ঘটছে। এশিয়ার দেশগুলি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলিতে শিশু শ্রমের ঘৃণ্য রূপ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তাই ILO প্রস্তাবিত এই ২০২১ সালের ১২ ই জুনকে কেন্দ্র করে ” উইক অফ অ্যাকশন” ( Week of Action”)পালিত হবে শিশু শ্রম বিরোধী বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ, প্রচার, অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়ে।

ভারতীয় সমাজসংস্কারক কৈলাস সত্যার্থী এই শিশু শ্রমের বিরোধিতা করে সারাদেশ তথা পৃথিবীতে আলোড়ন তোলেন এবং শিশুদের অধিকার রক্ষা ও শিক্ষার জন্য কতকগুলি আন্দোলন গড়ে তোলেন, যেমন – বচপন বাঁচাও আন্দোলন, শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে গ্লোবাল মার্চ ও প্রচার অভিযান করেন। তাঁর বচপন বাঁচাও আন্দোলনের ফলে ৯০ হাজার ভারতীয় শিশু অবৈধ শিশু শ্রম, দাসত্ব এবং অপরাধমূলক কাজের হাত থেকে মুক্তি পায়। তিনি ৮০ হাজার কিলোমিটার পথ লংমার্চ করেন ১০৩ টি দেশ অতিক্রম করে। শিশু শ্রমের শোষণের বিরুদ্ধে এটি একটি অন্যতম আন্দোলন। ২০১৪ সালে তিনি শান্তির জন্য নোবেল পুরষ্কার পান। তাঁর আন্দোলনের প্রভাব পরে আন্তর্জাতিক শিশু শ্রম বিরোধী সংস্থা (ILO) সম্মেলন ১৮২ তে, যেখানে শিশু শ্রমবিরোধী আইনের সফল প্রয়োগের ভাবনা দৃঢ হয় জেনেভা কনফারেন্সে।

অতিমারী পরবর্তী সময়ে শিশু শ্রমের অবসান ঘটিয়ে শিশুদের মুক্ত শিক্ষাঙ্গনে আনার জন্য, তাদের সমস্ত রকম অধিকার পাবার জন্য এখুনি প্রয়োজন শিশু শ্রমমূলক আইনের প্রয়োগ। দেশের জনসাধারণের মনে এই বিষয়টি সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তোলাও এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আগামী পৃথিবী হোক শিশুদের আনন্দময় ও নিরাপদ বাসযোগ্য স্থান।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।