দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি, চিন্তন নিউজ:-২৪ ডিসেম্বর:- সাম্প্রতিক সময়ে ডুয়ার্সে বেড়েছে বন্যপ্রাণ ও মানুষের সংঘাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা। হাতি, বাইসন, গন্ডার, চিতাবাঘের সহ অন্যান্য বন্য প্রানীদের আক্রমনে আক্রান্ত হচ্ছেন জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম, বনবস্তির মানুষ। বিভিন্ন সময় বন দফতরের তরফে সর্তক করা সত্ত্বেও পেট চালাতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত জঙ্গলে ঢুকছেন মানুষ! উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স মানেই জঙ্গল আর এভাবেই প্রত্যেকদিন লড়াই করে চলেছে জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম বনবস্তির বাসিন্দাদের জীবনযাপন।
ডুয়ার্স অঞ্চলের বনবস্তি বাসীদের জীবন প্রতিদিনের সংগ্রামের মধ্যেই যে আটকে থাকে! জঙ্গলের শুকনো ডালপালা সংগ্রহ করে তারা জ্বালানি সংগ্রহ করে, এই সংগ্রামই তাদের জন্য প্রতিনিয়ত এক বিপদময় পরিস্থিতি তৈরি করে। কিছুদিন আগে আলিপুরদুয়ারে হাতির আক্রমণে ৩ জন বনবস্তিবাসীর মৃত্যু হয়েছিল, যারা জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন, দু’বছর আগে জলদাপাড়ার জঙ্গলে গন্ডার ধেয়ে এসেছিল পর্যটকদের গাড়ির দিকে, গতবছর এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হাতির পায়ে পিষ্ট হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু দিনে বাবার সাথে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে জঙ্গল লাগোয়া রাজগঞ্জ ব্লকের এক কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় । এই ধরনের ঘটনা মোটেও এইকটি নয়, বরং এটি দৈনন্দিন চিত্র হয়ে উঠেছে ডুয়ার্সের জঙগলে। জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম
বনবস্তি বাসীরা বেঁচে থাকার জন্য জঙ্গলে প্রবেশ করেন, কিন্তু সেখানে তাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করে। হাতি বা অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের আক্রমণের মধ্যে তাদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কখনো জ্বালানি সংগ্রহ করতে, কখনো সময় বাঁচাতে বনের পথে ব্যবহার করতে হয় তাদের।
এদিকে, পরিবেশপ্রেমীদের মতে, যদি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার বনবস্তিবাসীদের জন্য সহজলভ্য এবং কম খরচে জ্বালানির ব্যবস্থা করতো, তবে বনবস্তির মানুষজনকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে জ্বালানী সংগ্রহ করার জন্য প্রতিদিন বনভূমিতে যেতে হতো না। একদিকে জ্বালানি সংগ্রহ, অন্যদিকে চা বাগানে কাজ করার সময় ও চা বাগান বনবস্তির মানুষজন বন্যপ্রাণীর আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। বনভূমি ও মানববসতির মধ্যে সঠিক সমন্বয় এবং নিরাপদ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে না পারলে এই সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাবে। সেকারনেই, সরকারের কাছে বনবস্তির মানুষদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। দাবি জানাচ্ছেন ডুয়ার্সের প্রায় প্রতিটি বনবস্তির বাসিন্দাদের একাংশ, যাতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গল থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে বাধ্য না হয়। পরিবেশ প্রেমীদের মতে জঙ্গলের ভেতরে ক্রমশ কমছে বন্য প্রাণীদের খাবারের পরিমাণ, বাইরে ঘন জঙ্গল দেখা গেলেও ভেতরে ক্রমেই কমছে গাছের সংখ্যা যে কারণে খাবারের খোঁজে বন্যপ্রাণীরা গভীর জঙ্গল ছেড়ে জনবসতি সংলগ্ন হালকা জঙ্গল সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সুযোগ পেলেই হানা দিচ্ছে জঙ্গল সংলগ্ন গ্রাম ও বন বস্তিতে। ফলে ক্রমেই বাড়ছে মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীদের সংঘাত, তার ওপর জঙ্গলে মানুষ বন্যপ্রাণীদের মুখোমুখি হলে মানুষের পুরোনো আক্রমনের কথা মনে রেখে হিংস্র হয়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীরা, আক্রমণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে মানুষের।।