মিতা দত্ত, নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:২২শে এপ্রিল:–
“লেনিন ভেঙেছে রুশে জনস্রোতে অন্যায়ের বাঁধ,
অন্যায়ের মুখোমুখি লেনিন প্রথম প্রতিবাদ।” – কবি সুকান্ত।
রাশিয়ার অন্যতম প্রধান নদী ভোলগার কোল ঘেঁষা একটি ছোট্ট গ্রাম সিমবির্স্ক। জার শাসিত রাশিয়া তাই স্বৈরাচারী শাসকের নিপীড়ন এই গ্রামটির জনগণের ওপর থাকাটাই স্বাভাবিক ।তবুও জীবনপ্রবাহ তো থেমে থাকে না ।এই গ্রামেই অপেক্ষাকৃত এগিয়ে থাকা একটি পরিবারে মুক্তির দিশা দিতে জন্ম নেয় একটি শিশু ।পারিবারিক নাম ঠিক হয় ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ। পিতামাতা শিক্ষকতার সাথে যুক্ত থাকায় ইলিচের প্রথম আলোকায়নের কাজটি পরিবার থেকেই হয়েছিলো। বড়ো হয়ে সে জানতে পারে জারের অত্যাচারের শিকার তার দাদা । সে তার জীবনের গতিপথ ঠিক করে নেয় ।
স্কুলপাঠ শেষ করে সে আইন নিয়ে পড়বার জন্য কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু জারের বিরুদ্ধে ছাত্রমত গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করে ।সে জারব্যবস্থার নজরে আসে। শাস্তি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় কোকুশোকিনো এস্টেটে পরিবারকে নির্বাসিত করে। শাসকের চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ হতে থাকে। এতেও শাসক স্বস্তি পায় না। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পিটসবার্গ জেলে রাখা হয় ।
জেলে গিয়ে তিনি লেখালেখির মাধ্যমে গোপনে কমরেডদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। এইসময় তিনি মার্কসবাদী পার্টির প্রথম খসড়া কর্মসূচি রচনা করেন। এইসময় তিনি তাঁর লেখাগুলিকে দুধ দিয়ে বুলাতেন যাতে লেখা অটুট থাকে ।রুটিকেও দোয়াত বানাতেন। তাতে দুধ রেখে তিনি এই কাজ করতেন। একদিন ঘটনার তিনি বিবরণ দিচ্ছেন যে তাঁর ওপর পাহারা দারদের এতো নজর যে কয়েকটা দোয়াত মানে রুটি খেয়েই ফেলনেন । এইভাবেই রচিত হয় জনজাগরণের সব দলিল ।
জেল থেকে বেরিয়ে যে তিনি বৈপ্লবিক কার্যকলাপ করবেন এটাই স্বাভাবিক। শাসক এবার আর তাঁকে দেশেই রাখলেন না। পাঠিয়ে দিলেন সাইবেরিয়ায়। এখানেই তিনি হয়ে উঠলেন লেনিন ।সাইবেরিয়ার লেনানদীর নাম অনুসারে নিজেই নিজের ছদ্মনাম নেন লেনিন ।সাইবেরিয়াতেই তিনি জীবনসঙ্গীনী করেন বিপ্লবী ক্রুপস্কায়াকে। চলতে থাকে মানব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিপ্লবের কাজ ।অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলেন। বিপ্লবে নিবেদিত মানুষকে নিয়ে এক অসম লড়াইয়ে অবতীর্ন হন ।মার্কসবাদী লেনিন রুশ দেশের বিশেষ অবস্থায় মার্কসবাদকে প্রয়োগ করেছিলেন। রাশিয়ার জনগণ ভিন্ন জীবনের স্বাদ পেলেন।
কিন্তু লেনিন শুধু রুশ দেশের ঘরোয়া ব্যাপারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। লেনিন আন্তর্জাতিক। লেনিন ছিলেন মার্কসবাদী , তাই মার্কসবাদই ছিল তাঁর বিশ্ব দর্শনের ভিত্তি। লেনিন সাম্রাজ্যবাদকে বলতেন ” মৃতপ্রায় পুঁজিবাদ “।সাম্রাজ্যবাদ ধনতন্ত্রের স্ববিরোধকে এমন শেষ সীমায়, চুড়ান্ত পর্যায়ে এনে ফেলেছে যার পরই শুরু হয় বিপ্লব ।
রাশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদের এই স্ববিরোধগুলো কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। অন্যান্য দেশের তুলনায় রাশিয়াতে বিপ্লব ধুমায়িত হচ্ছিল বেশী , তাই একমাত্র তার পক্ষেই বিপ্লবী কায়দায় এইসব স্ববিরোধের সমাধান করা সম্ভব হয়েছিল।
আজকে ভারতবর্ষেও সমস্ত স্ববিরোধীগুলি রয়েছে। তাই লেনিনের জন্মদিনে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, বেশী বেশী করে তাঁকে ও তাঁর দেখানো পথকে অনুসরণ করে সর্বাত্মক পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই আমরা বলতে পারবো, বিপ্লব স্পন্দিত বুকে আমিই লেনিন।