মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:১৮ই জুলাই:–আজও যেন চোখ বন্ধ করে ভাবলে দেখা যায় কলকাতায় সেকালের ফাঁকা রাজপথ ধরে ছুটে চলেছে একটা ঘোড়ার গাড়ি। উন্নতশির এক মহিলা ভিতরে বসে, গলায় স্টেথো, চিনিয়ে দেয় তাঁর পরিচয়।
মেয়েদের পেছনে টানা অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজের বুক চিড়ে একজন মহিলার এগিয়ে যাওয়া সহজ ছিলো না। পদে পদে বাঁধা ।সেই বাঁধাকে কাটিয়ে জয় করার নাম – কাদম্বিনী। বি. এ পাশ করার পর কাদম্বিনীর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর প্রগতিশীল স্বামীর কাছে ডাক্তারী পড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে।স্বামীর সন্মতি দেয়। ১৮৩৫ সালে মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা হলেও মেয়েরা প্রবেশাধিকার পায় অনেক পরে। ১৮৮৩ সালে ২৯ তারিখে ছোটোলাট স্যার রিভার্স অগাস্টাস টমসন মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সভার মনোভভাবকে অগাহ্য করে যোগ্যতাসম্পন্ন মেয়েদের জন্য ডাক্তারী পড়ার অনুমোদন দিলেন। সেই অনুমোদনের ভিত্তিতে কাদম্বিনী কলেজে ভর্তি হলেন। কিন্তু ক্লাস করতে গিয়ে তাঁকে নানাবিধ সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। সব পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখিয়েও সে মেডিসিন বিষয়ে সম্ভবত এক নাম্বারের জন্য অকৃতকার্য হন।মেডিক্যাল কলেজের অধক্ষ্য জি. এম. কোটস স্বীয় ক্ষমতাবলে তাঁকে” গ্রাজুয়েট অফ দি মেডিক্যাল কলেজ অফ বেঙ্গল ” উপাধি দিয়ে প্র্যাকটিস করার অনুমতি দেন। কিছুদিন প্র্যাকটিস করে বিদেশ যাওয়া মনস্থ করেন। আট সন্তানের জননীর পক্ষে কাজটা সহজ ছিলো না। পুত্রকন্যাদের সৎ মেয়ে বিধুমুখীর হেফাজতে রেখে তিনি কণ্ঠক জয় করে বিলেতে হাজির হন ও সেখান থেকে ডিগ্রী নিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
ফিরে এসে ডাফরিন হাসপাতালে চাকরী নিলেও বেশীদিন চাকুরি করেননি। সর্বক্ষণের জন্য প্রাকটিসে মন দিলেন। তিনি ছিলেন যথার্থ অর্থেই ডাক্তার। তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অ্যানি বেসান্ত এই ঘটনাকে যুগান্তকারী বলেছেন। ভারতীয় চিকিৎসাব্যবস্থার দূর্দশাময় অবস্থার উন্নতির জন্য লেডী ডাফরিনের উদ্যোগে একটি ফান্ড তৈরী করেন।এই টাকায় কলকাতায় জেনানা হাসপাতাল সহ আরো কয়েকটি হাসপাতাল তৈরী হয়েছিল।
শ্রমজীবি মানুষের প্রতি তাঁর দরদ ছিলো।তাঁদের সম্পর্কে সম্যক অবহিত হওয়ার জন্য একটি তাঁরই উদ্যোগে একটি সভা গড়ে তোলেন।সাধ্যমতো সবার পাশে দাঁড়াতেন যা এই প্রজন্মের চিকিৎসকদের কাছে শিক্ষণীয় ।১৯২৩ সালে ৩ রা অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। শেষে এটাই বলায় পেরেছেন, তিনি পেরেছেন।শুধু নারীসমাজ নয় সকলের কাছে অসীম অনুপ্রেরণায় উৎস হয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।