শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

প্রসঙ্গ:-মাশরুমের পুষ্টি গুন



প্রতিবেদন:-ডা:স্বপ্না চট্টরাজ আসানসোল: চিন্তন নিউজ:১৪ই সেপ্টেম্বর:– মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক।এদের অধিকাংশই ব্যাসিডিওমাইকোটা এবং কিছু অ্যাসকোসাইকোটার অন্তর্গত। অন্যান্য উদ্ভিদের মতো মাশরুমের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য তৈরির জন্য সূর্য থেকে আলোর প্রয়োজন পরে না। মাশরুম এমন একটি ফসল যা ধনী দরিদ্র সবার ঘরে সমভাবে জায়গা করে নিয়েছে। মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাত্র ১০-১৫দিনের মধ্যেই খাবার উপযুক্ত হয়। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সস্তা ও সহজলভ্য। বেকার যুবক যুবতী ও মহিলারা ঘরে বসেই এই চাষ করতে পারেন। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম বেশি। তাই এই চাষে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হ ওয়া যায়।

সবচেয়ে বড় কথা পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের উপযোগী। মাশরুম চাষ করলে আমাদের দেশের পুষ্টি সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে। মাশরুম খুবই নির্ভর যোগ্য ও পুষ্টিকর খাবার যা নানা উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। আমাদের খাবার টেবিলে বিভিন্ন পদের শোভা ও স্বাদ বাড়িয়ে দেয় এই মাশরুম। প্রতি ১০০গ্রাম মাশরুমে প্রোটিন থাকে ২৫-৩০গ্রাম, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে ৫৬-৬০গ্রাম, শর্করা থাকে ৫-৬গ্রাম, অ্যান স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর পরিমাণ ৪-৬গ্রাম। যারা নিরামিষভোজী, মাছ, মাংস, ডিম খান না তাদের পুষ্টি পেতে মাশরুম খাওয়া অবশ্যই জরুরি।

এবার দেখা যাক মাশরুমের পুষ্টি গুন কি কি এবং এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা:-
১-গর্ভবতী মা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধ করতে মাশরুমের জুড়ি নেই। মাশরুমে আমিষ, শর্করা, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় আছে যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে। নিয়াসিন ও অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সির প্রাচুর্য থাকায় স্কার্ভি, পেলেগ্রা প্রভৃতি রোগ থেকে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের প্রতিরোধ করে।
২-বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মাশরুমে শর্করা ও ফ্যাট কম থাকায় এবং আঁশ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার হিসেবে ধরা হয়। নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমিয়ে দেয়।
৩-চর্মরোগ প্রতিরোধে মাশরুম খাওয়া উপকারী। মাশরুমের নির্যাস থেকে খুশকির ওষুধ তৈরি করা হয়।
৪-উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধে মাশরুম কার্যকরী ভূমিকা নেয়। মাশরুমে কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন(Eritadenin), লোভাস্টাটিন(Lovastatin), অ্যানটাডেনিন (Antadenin), কিটিন (kitine) এবং ভিটামিন এ , সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিরাময় হয়।
৫-দাঁত ও হাড় গঠনে মাশরুম সহায়তা করে। মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি। শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে এই উপাদান গুলি জরুরী।
৬-ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধ ক্ষমতা মাশরুমের মধ্যে আছে। এর মধ্যে Beta-D, Lampetrol, Turpinoid, ও Benzo Pyrene আছে যা ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিষেধক।
৭-এইডস প্রতিরোধক- মাশরুমে Triterpin থাকাতে বর্তমানে এটি বিশ্বে এইডস প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৮-আমাশয় রোগ নিরাময় করে।
৯-হাইপারটেনশন প্রতিরোধক-মাশরুমে Sphingolipid এবং ভিটামিন-১২ থাকায় স্নায়ু তন্ত্র ও স্পাইনাল কর্ড সুস্থ রাখে। তাই মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয় এবং মেরুদণ্ড দৃঢ় থাকে।
১০- পেটের পীড়ায়-মাশরুমে প্রচুর প্রোটিন আছে যা সহজপাচ্য, সুস্বাদু ও মুখরোচক। মাশরুমে প্রচুর পরিমানে এনজাইম বিশেষতঃ ট্রিপসিন এবং অগ্নাশয় থেকে নির্গত Jarkros থাকায় খাদ্য পরিপাক ও হজমে সাহায্য করে।
১১- কিডনির রোগ প্রতিরোধে-মাশরুমে নিউক্লিক অ্যাসিড ও অ্যান্টি এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায় কিডনি ও অ্যালার্জি রোগের প্রতিরোধক।
১২-চুল পরা ও চুল পাকা থেকে রক্ষা করে।
১৩- দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
১৪- হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিস প্রতিরোধে- মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড (Folic acid),লিঙ্কজাই-৮ (Linkzai-8) নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড ও আইরণ থাকায় হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিসের প্রতিষেধক।
১৫- অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা হলে নিয়মিত মাশরুম খেলে রক্ত বাড়ে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখুন মাশরুম যা আপনার খাদ্য তালিকাকে করবে পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।