দেশ

মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের উপর বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান আয়োগের (ইউ জি সির) নির্দেশনা তাৎপর্যপূর্ণ।


সীমা বিশ্বাস, আসাম,৬মে চিন্তন নিউজ :- আধুনিক উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা অপরিহার্য হিসেবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিবেচিত হয়ে আসলেও বর্তমান সময়ে দেশের উচ্চ শিক্ষার শীর্ষ অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান আয়োগ (ইউজিসির) পক্ষ থেকে শিক্ষা অনুষ্ঠান গুলিতে মাতৃভাষা এবং স্থানীয় ভাষায় শিক্ষা প্রদানের নির্দেশিকা এক গভীর তাৎপর্য বহন করছে।ইউজিসি নির্দেশনা মতে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা অনুষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা যাতে মাতৃভাষায় উত্তর দেওয়ার সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।পাঠ্য পুঁথি প্রণয়ন , শিক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষা প্রবর্তনে এবং পর্যাপ্ত পাঠ্যপুঁথির অভাবে যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত না হয় সেই দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আর্থিক এবং সামাজিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের লাভান্বিত করা যাবে বলে ইউজিসি মনে করে । মধ্যপ্রদেশে ইতিমধ্যে হিন্দিতে চিকিৎসা শিক্ষা প্রদান আরম্ভ হয়েছে। কিন্তু আসাম সরকার এখনো ইংরেজি মাধ্যমে না পড়লে ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যাবেনা বলে এক বিপরীতস্থিতিতে অটল হয়ে আছে। দুর্ভাগ্যজনক যে আসাম সরকার তৃতীয় শ্রেণীর থেকেই গণিত বিজ্ঞান ইংরেজি ভাষায় পড়ানোর জন্য নির্দেশ জারি করেছে। গণপ্রতিবাদের সম্মুখীন হয়ে এখন ষষ্ঠ শ্রেণীর থেকে ইংরেজিতে গণিত বিজ্ঞান পাঠ্যপূঁথি যোগান ধরা হয়েছে যদিও উপযুক্ত শিক্ষণ, প্রশিক্ষণের অভাবে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটাই একেবারে প্রহসনে পরিণত হয়েছে।আসামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পরম্পরা নিয়ে সর্বদাই গর্ব করে আসা আসাম সরকার ভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে কেন এত উদাসীন সেটা একটা বড় প্রশ্ন। সরকারের বোঝা উচিত যে মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্ক থাকে। সেজন্য মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা তথা গবেষণা যে কোনো জাতিকে দ্রুত তার সাথে আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত করাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ প্রতিবেশী চীন এর দিকে লক্ষ্য রাখলে দেখা যাবে যে মাতৃভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্যই সেই দেশের জনতার চিন্তা, সৃজনশীলতা ,আবিষ্কার সর্বক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে । মাতৃভাষায় শিক্ষা এবং গবেষণা পরিচালিত করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে গেছে ফ্রান্স, জার্মান, রাশিয়া ইত্যাদি দেশগুলো। ইংরেজিতে বিজ্ঞান চর্চা ছাড়া আমাদের শিক্ষার্থী রা পিছিয়ে থাকবে বলে ভাবাটা একেবারে বিজ্ঞানসম্মত নয়।বিজ্ঞানের গবেষণায় ইংরেজি বিকল্পহীন হলে হয়তো মহান রুস রসায়নবিদ ডিমেত্রী ইভান ভিখ মেন্ডেলিভের’মৌলের পর্যাবৃত্ত তালিকা ‘”(periodic table) পাওয়াটা সহজ হতো না। কেননা মেন্ডেলিভে তার সমস্ত গবেষণাপত্র কেবল মাতৃভাষা রুশ ভাষাতে প্রকাশ করেছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজেদের প্রয়োজনে আবিষ্কার সূত্র নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে নিয়েছিলেন। ভারতের মহান গণিতজ্ঞ তথা পদার্থবিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মিসাইল মেন এপিজে আব্দুল কালাম মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তামিল ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করা ইসরোর ‘চন্দ্র যানের’ মূল রূপকার মীল স্বামী আন্না ডুরাই এর মতে ইংরাজ বিজ্ঞানী দের ছাড়া বুলগেরিয়ান ,ফরাসি , জাপানি, জার্মান প্রভৃতি সকল আন্তরাষ্ট্রীয় বিজ্ঞানী মাতৃভাষায় অধ্যয়ন করেছেন। এই উদাহরণ একটা কথাই প্রতিপন্ন করে যে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভাষার বিশেষ সম্পর্ক নাই।এটা প্রমাণিত যে পৃথিবীতে নতুন কিছু সৃষ্টিতে ভাষা কখনো অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় না ।কিন্তু মানুষের চিন্তা ,অনুভব মাতৃভাষাই নির্দিষ্ট আকারে তুলে ধরতে পারে ।মাতৃভাষা নিয়ে হীনমন্যতার সৃষ্টি করা মানুষের জন্য ইউজিসির সর্বশেষ নির্দেশনা নিশ্চয়ই এক সমোচিত প্রত্যুত্তর।সুত্র-” অসমীয়া প্রতি দিন “


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।