মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:২৮ শে আগস্ট:- করোনা অতিমারি সারা বিশ্বের এক ভয়ংকর সংকট। সমস্ত দেশেই এর গুরুতর প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে, কারণ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথম এবং প্রধান উপায় দূরত্ব বিধি। মানুষে মানুষে সংস্পর্শ এড়াতে সমস্ত প্রতিষ্ঠান উৎসব অনুষ্ঠানে মানুষের ভীড় না করার নির্দেশ। স্বাভাবিক ভাবেই সব ক্ষেত্রেই কাজ এবং উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় ব্যক্তি জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও শুরু হয়েছে চরম অর্থসংকট। জীবনের জন্যই জীবিকা। জনজীবন সুরক্ষিত করতেই কেন্দ্রীয় সরকার মার্চ মাস থেকেই সারা দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে। মার্চ থেকে আগস্ট ছ’মাস লকডাউন আর ধাপে ধাপে আনলক প্রক্রিয়ায় সারা দেশ বিপর্যস্ত। এই লকডাউনের শুরুতেই কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার সু শাসকের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে নির্দেশ দেয় এই মোরাটোরিয়াম পর্বে সব ধরনের ব্যাঙ্ক লোনের সুদ স্থগিত করতে হবে।
রিজার্ভ ব্যাংক ঘোষণা করে মোরাটোরিয়াম পর্বে কোনো প্রকার ব্যাঙ্ক লোনের সুদ কাটা হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হ’লে ধাপে ধাপে ঐ সুদ গ্রাহক পরিশোধ করতে পারবে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হয়ে চলেছে, কবে যে অতিমারি অতিক্রম করে জনজীবন সুস্থ স্বাভাবিক হবে তাও এখনো অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তার জীবনে ঋণ গ্রহীতারা কিছুটা স্বস্তির আশায় কেন্দ্রের কাছে মোরাটোরিয়াম পর্বের স্থগিত হওয়া ছ’মাসের সুদ সম্পূর্ণ মকুব করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সুপ্রীম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। আবেদনকারিদের হয়ে মামলা লড়ছেন বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিব্বল। আবেদনকারিদের পিটিশন হয় ২৭মার্চ এবং আগামী ৩১আগস্ট এই মোরাটোরিয়াম পর্বের শেষ দিন। মাননীয় কপিল সিব্বল, এর সময় সীমা বাড়ানোর দাবি তোলেন। আবেদনকারিদের বক্তব্য এই ছ’মাসের জমা হওয়া সুদ ভারতীয় সংবিধানের অধীনে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের জীবন ধারনে বাধা সৃষ্টি করছে। কাজেই ঐ সুদ সরকার মকুব করে দিক। কেন্দ্রীয় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা উচ্চ আদালতে বলেন, এরকম কোনো সমাধান নেই যেখানে একসাথে সবাইকে সুবিধা দেওয়া সম্ভব। তাছাড়া এত পরিমাণ সুদ মকুব করলে দেশের সামগ্রিক ব্যবসা এবং ব্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর উত্তরে সুপ্রিম কোর্ট বলে, কেবল ব্যবসা নিয়ে ভাববেন, মানুষের দুর্ভোগের কথা ভাববেন না এমনটা হতে পারে না, এবং এই বিষয়টা দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকতেও পারে না।
কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করে বিচারপতি অশোক ভূষণ বলেন, কেন্দ্রের দেশ জুড়ে লকডাউনের কারনেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই মানুষের দুর্দশার কথা ভেবে কেন্দ্রকে দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে হবে: ১।বিপর্যয় মোকাবিলা আইন এবং ২।কিসের স্বার্থে এই সুদ মকুবের পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছিল। কাজেই ১লা সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।
সুপ্রীম কোর্ট আরও বলে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের অধীনে সুদ ছাড়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা আছে, ফলে দেশের এই সংকটকালে অযথা ব্যাঙ্কের দোহাই দিয়ে সর্বোচ্চ ব্যাঙ্ক আর, বি, আই, এর পিছনে মুখ লুকানোর অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের চরম ব্যর্থতা। অতিমারি বিধ্বস্ত দেশের সাধারণ মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক।
অতিমারি বিধ্বস্ত দেশের সাধারণ মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগ শাসন বিভাগের পক্ষ অবলম্বন করছে বলে মনে হয়। তাই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুধু রাজনৈতিক মহল নয়, দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ধারনা জন্মেছে যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং কেন্দ্রের মধ্যে হয়তো কোনও বোঝাপড়া আছে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট আপাতত ঋণ গ্রহীতাদের সান্ত্বনা দিয়ে দৃষ্টি ঘোরাতে চেষ্টা করলেও আসলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে হয়তো আদালতের রায়ে সেটাই লেখা হবে। তথাপি জনগনের কথা ভেবে মহামান্য আদালত যদি একটু নিরপক্ষে হয়ে কেন্দ্রকে এই মোরাটোরিয়াম পিরিয়ডের সুদ মকুব করাতে পারে তবে তা হবে একদিকে জনগনের জয়, অপর দিকে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস দৃঢ় হবে বলে মনে হয়।