কলমের খোঁচা

আর‌এস‌এস এর কাছে জাতীয় পতাকার মর্যাদা


দেবু রায়, নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:১৩ই জানুয়ারি:– দেশ ভক্তরা জাতীয় পতাকাকে সন্মান জানানোর ক্ষেত্রে কতটা  আন্তরিক! ১৯২৫ সালে জন্মলগ্ন  থেকেই  আরএসএস (তৎকালীন  হিন্দু মহাসভা  ) ব্রিটিশ শাসন  বিরোধী জনগণের  ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের প্রতীক কে ঘৃণা  করে এসেছে অধুনা  ভক্তদের পূর্ব পুরুষরা ! আর এর মধ্যে  সবচেয়ে  প্রাসঙ্গিক হলো জাতীয় পতাকার তেরঙ্গা র বিষয় টা! ভারতে প্রথম  পূর্ণ স্বরাজ এর দাবি তোলে কমিউনিস্ট রা, পরবর্তী কালে১৯২৯ সালে কংগ্রেস লাহোর অধিবেশনে আবার দাবি তোলে পূর্ণ স্বরাজ. এবং ১৯৩০ সালে ২৬শে জানুয়ারী দিনটাকে স্বাধীনতা  দিবস  হিসাবে পালন  করার ডাক দেয়া হয়  দেশবাসির কাছে ! আর  এই দাবিকে সন্মান জানানোর জন্য তেরঙ্গা পতাকাকে তুলে!এই তেরোঙ্গা পতাকাকে সেই সময়  সারা দেশের  মানুষ  মান্যতা দিলেও ব্যতিক্রম ছিলো  আরএসএস! তৎকালীন সংঘ  চালক হেড গওয়ার  তাঁদের সমস্ত শাখায় সার্কুলার পাঠিয়ে বলা  হয়  “ভাগোয়া ঝান্ডা “(অর্থাত গেরুয়া পতাকা ) কে জাতীয় পতাকা  হিসাবে মানতে হবে !
আর সেই থেকে  আরএসএস তাঁদের কোনো কাজে কখনোই  তেরঙ্গা পতাকা  তোলে না, তোলে গেরুয়া পতাকা ! যদিও  কট্টর  আরএসএস পন্থী  (যেমন মুরলী মনোহর  জোশি সহ  আরও অনেক নেতা )মানুষকে ধোঁকা দেবার জন্য বা দেশ  ভক্তি দেখানোর  জন্য আমাদের  তেরঙ্গা পতাকাকে সন্মান জানায় সেটা নিছকই  লোক দেখানো !

সংবিধান  বদলাতে  যদি  কোনদিন পারে দেখবেন  সেই দিন থেকে  আমাদের দেশের  জাতীয় পতাকার  রং ও পাল্টে দেবে!
একটা তথ্য দিছি, আমার বক্তব্যের সমর্থনে  –১৯৪৬ সালের ১৪ই জুলাই নাগপুরে গুরু পূর্ণিমার এক সমাবেশে  ভাষণ  দিতে গিয়ে গোলওয়ারকার বলেন  (তার ভাষণের কিছু  টা সংক্ষিপ্ত অংশ )
” #গেরুয়া পতাকাই  সামগ্রিক ভাবে ভারতীয়  সংস্কৃতির  ধারক , এটা হচ্ছে ঈশ্বরের মূর্ত রূপ!” জানিনা কোথায়  বা ধর্মের  কোথায়  এই লেখা  আছে?. আমি অন্ততপক্ষে কোথাও  পড়ি নি!ওই ভাষণে র শেষে  উনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি  একদিন সারা দেশ  গেরুয়া পতাকাকেই  মান্যতা দেবে, তেরঙ্গা
কে নয়  # “
এর পরে  স্বাধীনতার  ঠিক  আগে যখন  ভারতের  শাসনতন্ত্র রচনা  করে  জাতীয় পরিষদ তেরঙ্গাকে জাতীয়  পতাকা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়! ঠিক  তখন ১৪ই আগস্ট ১৯৪৭  আরএসএস এর মুখপত্র অর্গানাইজার (“organiser “)লেখা  হয় ।
“বরাত  জোরে যে সব  লোকেরা আজ ক্ষমতায়  এসেছে , তারা আজ  আমাদের হাতে ( পড়ুন হিন্দু দের হাতে )তেরঙ্গা ধরিয়ে  দিলেও হিন্দুরা এটাকে কোনো দিন সন্মান করবে  না! এবং মেনেও নেবে না, তিন শব্দটা এমনিতেই হিন্দু দের কাছে  অপ্রিয় এবং  অশুভ , আর তিন রঙের পতাকা  অবশ্যই অত্যন্ত খারাপ মানসিক  প্রভাব ফেলবে যা দেশের পক্ষ্যে ক্ষতিকর  “!
গোলওকার তার  “বাঞ্চ অফ থট  ‘বইটি তে যেটা নাগপুর থেকে  প্রকাশিত হয় . ভেসে চলা  আর ভেসে চলা  শীর্ষক  নিবন্ধে  দেশের  নেতাদের সমালোচনা  করতে  গিয়ে লিখে ছিলেন
“আমাদের দেশ এক সুপ্রাচীন এবং  মহান  দেশ, এক গৌরব ময়  অতীত আছে !তাহলে  কি আমাদের নিজস্ব পতাকা  বলে কি কোনো দিন ছিলো  না?. হ্যাঁ ছিলো  কিন্তু আমরা এটা নিয়ে ভাবিনি কারণ  ওদের (সেই সময় যারা তেরোঙ্গা পতাকার  দিকে সমর্থন  করেছিলেন )চিন্তার মধ্যেই  চরম  শুন্য টা আছে  “
তাহলেই  বুঝুন  বিজেপি কতটা জাতীয় পতাকাকে সন্মান করে !যারা সংবিধান  টাকেই পাল্টে দিয়ে চায় . তারা কি করে  তেরোঙ্গা কে মেনে নেবে! যদি  কোনো দিন ওরা দেশের  সংবিধানকে পাল্টাতে পারে, নিশ্চিত থাকুন  সেই দিন ওরা পতাকার  রং কেও পাল্টে দেবে, যেমন  হিটলার করেছিলেন, স্বাভাবিক কারণ  দুটোই তো ফ্যাসিস্ট শক্তি. সমনে ২৩ তারিখ আর ২৬ তারিখ আসছে, মিডিয়া কেনা আছে ২৪ ঘন্টাই  আপনাকে দেশ  ভক্তির পাঠ  শেখাবে , নেতাজি শোনাবে, কিন্তু পুলওয়ামার রিপোর্ট কি হলো? কেন ওতো গুলো নিরীহ সৈনিক  মারা গেল? কার দোষ  ছিলো? তদন্ত কি হলো এই গুলো একবারও বলবে  না!এটাই হলো  বিজেপি একটা মুখ  অন্যটা মুখোশ , কখন কোনটা পরে  আপনার মাঝে  আসবে আপনি বুঝতেও  পারবেন না, শুধু  বোকা হয়ে থাকবেন , যেমনটা হিটলার করেছিলেন !


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।